সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদিত চারা ১৫ কোটি টাকা বিক্রির আশা

সবজি চারার গ্রাম আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা
মিলন রহমান, যশোর
  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যশোরের আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামে সবজি চারা উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

সবজি চারার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রাম। এই দুই গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক প্রতি মৌসুমের আট মাসে প্রায় ১২ কোটি সবজি চারা উৎপাদন করেন। প্রায় ১৫ কোটি টাকা মূল্যের এই চারা তারা ছড়িয়ে দেন সারাদেশে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলিসহ বিভিন্ন সবজির মানসম্মত এই চারা কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন এই সবজি চারার গ্রামে। মানসম্মত চারা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও মার্কেট লিঙ্কেজে সর্বাত্মক সহযোগিতা রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা। যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশের এই গ্রাম দুটিতে এখন সবজি চারার রমরমা বেচাকেনা চলছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্তের জেলা থেকে কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সবজি চারা নিয়ে যাচ্ছেন। মানসম্মত চারা হওয়ায় এর সুনাম ছড়িয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, সারাদেশেই এই অঞ্চলের সবজি চারার সুনাম ছড়িয়েছে। সবজি চারার গ্রাম আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গায় মৌসুমের আট মাসে প্রায় ১২ কোটি সবজি চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রায় ১৫ কোটি টাকায় এই সবজি চারা কৃষকরা বিক্রি করে থাকেন। এই চারা উৎপাদনে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং মার্কেট লিঙ্কেজ করতে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকেন।

সরেজমিন যশোরের চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর গ্রামের রাস্তার দুই পাশে তাকালেই চোখে পড়ে, শত শত পলিথিন শেডে ঢাকা সবজির বীজতলা। মূলত কুয়াশা ও বিরূপ আবহাওয়া থেকে সবজির চারা রক্ষার্থে এই পলিথিন শেড তৈরি করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে বাজারে ভালো মানের প্রতি হাজার ফুলকপির চারা ৮০০-১৫০০ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৫০০-১১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো দামে চারা বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা।

কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, আব্দুলপুর ও বাগডাঙ্গা গ্রামের দেড় শতাধিক কৃষক বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলিসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদন করেন। দুই গ্রামের ৪০ বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ কোটি চারা উৎপাদন করা হয়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন সবজির বীজ বপন শুরু হয়। প্রায় দেড় মাস পর চারা বিক্রির উপযোগী হয়। ফেব্রম্নয়ারি মাস পর্যন্ত চলে চারা বিক্রি। প্রথম ধাপে প্রতি হাজার চারা দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। পরে ধাপে ধাপে চারার দাম কমতে থাকে। প্রতিটি বীজতলা থেকে চার থেকে পাঁচটি ধাপে সব মিলিয়ে ১২ কোটি চারা বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। সেই হিসাবে এখানে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চারা বেচাকেনা হয়।

আব্দুলপুর গ্রামের প্রথম চারা উৎপাদনকারী আরশাদ আলী মোড়ল জানান, প্রায় চার দশক আগে তিনি প্রথম সবজি চারা উৎপাদন শুরু করেন। লাভজনক হওয়ায় তার দেখাদেখি অন্য চাষিরাও চারা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েন। এখন অনেকেই ভালো চারা উৎপাদন করছেন। আর এখানে ভালো মানের চারা পাওয়া যায় বিধায় দূর-দূরান্ত থেকে চাষি ও পাইকাররা এখানে চারা কিনতে আসেন।

আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন করেছেন। তিনি জানান, এই জমিতে ছয় মাসে চারা উৎপাদন খরচ হয় ৬-৭ লাখ টাকা। যেখানে উৎপাদন হয় প্রায় ১৫ লাখ চারা। যার বাজার মূল্যে ১৫-১৬ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, যশোরের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঝিনাইদহ, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, সাতক্ষীরা থেকে কৃষক ও সবজি চারার পাইকাররা এসে তাদের চারা কিনে নিয়ে যান। দিন দিন বাড়ছে তাদের পরিচিতি ও বাজার।

সবজি চারা কিনতে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে আসা পাইকার নজরুল ইসলাম জানান, এখানে অনেক চাষি সবজি চারা উৎপাদন করেন। ফলে দেখেশুনে যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন প্রকারের মানসম্মত চারা কেনা যায়। আর এই এলাকার চারায় ফলনও ভালো হয়। ফলে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে।

যশোরের সবজি চারা গ্রামের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডক্টর সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, এই অঞ্চলের সবজি চারা উৎপাদন ও বিপণনে তাদের আলাদা দৃষ্টি রয়েছে। কৃষকদের পাশে থেকে প্রতিনিয়তই তারা প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্য এলাকায় এই চারার প্রচার-প্রসারেও ভূমিকা রাখছেন। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক, পাইকাররা এখানে চারা কিনতে আসছেন। তাই এই অঞ্চলের সবজি চারার বাজারও প্রসারিত হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে