বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
রেহাই নেই পাহাড়ি গাছের

মির্জাপুরে ইটভাটায় যাচ্ছে পাহাড়ি টিলার লালমাটি

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভেকুর মাধ্যমে পাহাড়ি টিলার লালমাটি কাটছে একটি চক্র -যাযাদি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা, গোড়াই, তরফপুর, লতিফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি লাল মাটির টিলার অধিকাংশে গজারি বাগান রয়েছে। ওইসব টিলায় স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র বনের গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। একই সঙ্গে চক্রটি রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে টিলার লাল মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। ইটভাটাগুলোয় দেদার পাহাড়ি লাল মাটির সঙ্গে বেলে-দো'আশ মাটি মিশিয়ে ইট তৈরি করে বন বিভাগের শাল-গজারি গাছ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, লোভের বসে টিলাগুলো কেউ কেউ সমতল আবার কেউ গভীর খাদ সৃষ্টি করে মাটি ইটভাটায় দিচ্ছে। মাটি বহনের কারণে ওইসব এলাকায় রাতে গ্রামীণ এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পাহাড়ি মাটিভর্তি ড্রাম ট্রাকের রাজত্ব চলছে। ফলে উপজেলার কাঁচা-পাকা গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইটভাটায় বনের গাছ পোড়ানোর ফলে স্থানীয় বনাঞ্চল উজাড় ও পাহাড়ি টিলা সমতল এবং ক্ষেত্রবিশেষ গভীর খাদে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও চক্রগুলোর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। নির্বিচারে বনের গজারিসহ সামাজিক বনায়নের গাছ এবং লাল মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা গজারিগাছ এবং টিলা কাটা বন্ধে বন বিভাগ ও প্রশাসনের জরুরি কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

\হখোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনাঞ্চল ঘেরা পাহাড়ে নিঝুম রাতে মাটি কাটার ধুম পড়ে। কয়েক বছরে এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি টিলা কেটে গভীর খাদে পরিণত এবং সমতল করা হয়েছে। এবারও তারই ধারাবাহিকতা চলছে। দিনে মাটি কাটার স্পটে যাওয়ার প্রবেশপথে গজারিগাছ দিয়ে বেড়া দিয়ে এবং গাছের বড় বড় খন্ড ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়। রাতে সেগুলো সরিয়ে পাহাড়ি টিলার লালমাটি কেটে ড্রামট্রাকে ইটভাটায় নেওয়া হয়।

আজগানা, বাঁশতৈল ও তরফপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি গ্রামগুলোর টিলা থেকে গজারি গাছ কাটা হয়েছে। ওইসব টিলার মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে কোথাও পুকুর- কোথাও সমতল করা হচ্ছে। স্মৃতি হিসেবে রয়েছে অস্তিত্ব হারানো পাহাড়ের ক্ষতচিহ্ন। কোথাও কোথাও টিলার বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয়রা ঘর তৈরি করছে। টিলায় থাকা শাল-গজারি গাছসহ সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কেটে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে বসবাসের জন্য নির্মিত কয়েকটি ঘর ও পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মাটিভর্তি ড্রামট্রাক চলাচল করায় ধুলা-বালিতে রাস্তার পাশের গাছপালা ও ঘরের চালগুলো ঢেকে গেছে। ভারি ড্রামট্রাক চলাচল করায় আঞ্চলিক এবং গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে কয়েক ব্যক্তি জানান, নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে বনের গাছ কেটে নিয়ে পাহাড়ি টিলা পরিষ্কার করা হচ্ছে। টিলার গজারি গাছের সঙ্গে স্থানীয় সামাজিক বনায়নের গাছও কাটা হচ্ছে। ফলে পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের খুঁটি হুমকির মুখে পড়েছে। টিলার নিচে ও পাহাড়ে যেসব বাড়িঘর রয়েছে ভারি বর্ষণে তা ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ওইসব চক্রের এক সদস্য মাটি ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়া জানান, পাহাড়ি টিলার গজারিগাছ জমির মালিক কেটেছে। তিনি লালমাটিগুলো কিনে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করছেন।

তরফপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ রেজা জানান, শাল-গজারিগাছ ও পাহাড়ি টিলা কেটে নেওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ঘরবাড়িগুলো ধসের হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ড্রামট্রাকে মাটি বহন করায় গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর জানান, পাহাড়ি এলাকার টিলার লাল মাটি কাটার বিষয়টি তাদের জানার বিষয় না। সন্দেহজনক পরিবহণের খবর পেলে তারা তলস্নাশি চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জার শাহিনুর রহমান জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির গজারি গাছ কাটলে তাদের কিছু করার নেই। তবে গাছগুলো পরিবহণ করা হলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। পাহাড়ি টিলার লালমাটি কেটে বিক্রি করার বিষয়টি দেখভাল করতে সংশ্লিষ্ট অফিস রয়েছে।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, পাহাড়ি টিলার লালমাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাত বা দিন যেকোনো সময়ই কেউ পাহাড়ি টিলার লালমাটি কেটে থাকলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে