রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিরিরবন্দরে এক গ্রামেই ৭৮টি পুষ্টি মডেল বাগান

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

'বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। বাজারে শাক-সবজির দাম চড়া হলেও আমাদের তা আঁচ করতে হচ্ছে না। আমরা আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান থেকেই তা সংগ্রহ করে রান্না করে খাচ্ছি। প্রয়োজন মেটানোর পর যা উদ্বৃত্ত থাকছে, তা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।'

কথাগুলো বলছিলেন পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগানের মালিক মো. মিজানুর রহমানের স্ত্রী রিনি বেগম (৩৮)। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের ইছামতি গ্রামে। উপজেলার এই একটি গ্রামেই গড়ে তোলা হয়েছে ৭৮টি পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান।

সরেজমিন এরকম সবুজ বিপস্নব চোখে পড়ে। গ্রামটি ঘুরে দেখা যায় এক অভাবনীয় দৃশ্য। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রতিটি পরিবারের দেড় শতক জমিতে গড়ে উঠেছে সবজি বাগান। বাড়ির আঙিনায় যেখানে ছিল আবর্জনার স্তূপ, শুয়ে থাকতো কুকুর-বিড়াল সেই উঠানে এখন সবুজ প্রকৃতি।

কৃষক সোহেল রানার স্ত্রী মিনা বেগম তার উঠানের দেড় শতক জমিতে মরিচ, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, লেবু, পেয়ারা, অ্যালোভেরা, শতমূলী ইত্যাদি আবাদ করছেন। তিনি বলেন, 'নিজের জমিতে চাষ করে ভালো ফলাফল পেয়েছি এবং ভালো লাগছে। যে জমি আগে পড়েছিল তা থেকে এখন অনেক ফলন পাচ্ছি। এ বাগানের সবজি নিজেরা খাচ্ছি।'

কথা হয় ওই গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বেগমের (২৬) সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) রত্নাকর রায়ের পরামর্শে মাত্র দেড় শতক জমিতে গড়ে তুলেছি সবজি বাগান। বাগানের নাম দেওয়া হয়েছে 'পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান'। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে জমি চাষ উপযোগী করেছি। পরে ৫টি বেড তৈরি করে প্রতিটিতে ১ মিটার চওড়া ও মাঝে ২৫ সে. মি. নালা করছি, যেন সহজে পানি সেচ দেওয়া যায়। গত অক্টোবরে বাগানগুলো গড়ে তুলেছি। এর মধ্যে ২-৩ বার ফলন পেয়েছি।'

মতিউর রহমানের স্ত্রী নাছিমা বেগম (৩৫) জানান, তার বাগানে এখন সবুজ শাক, পুঁইশাক, ধনেপাতা, ঘিমা শাক, থাইল্যান্ডের আঁখ, পালংশাক, করলা, কাটিমন আম, তুলশী ও মরিচ রয়েছে। বস্তায় আদা চাষ করছেন। অল্প জায়গায় কত ফসল- না দেখলে বিশ্বাসই হবে না।

তিনি বলেন, 'এখন আমরা কোনো সবজি তেমন বাজার থেকে কিনে খাই না। বাগান থেকে যা পাই তা অনেক। এ গ্রামে শুধু সবজিই নয়- পাশাপাশি ওইসব বাগানে ফল, ভেষজ ও মসলাও চাষ হচ্ছে।'

ইছামতি গ্রামের পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান দেখভাল করছেন কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) রত্নাকর রায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবে না। সেই নিদের্শনা মেনেই গ্রামবাসীকে এরকম বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছি। এসব বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় না। মুরগির বিষ্টা, গৃহস্থালির আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিগুলোতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কীটনাশক হিসেবে জৈব ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার, ফেরোমেন ফাঁদ ও হলুদ ট্যাব ব্যবহার হয়। পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগানের ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, কেবল ইছামতি গ্রামেই নয়, আমরা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬২৫টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছি। এসব বাগানে বসতবাড়ির আশপাশে অনাবাদি ও পতিত জমি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অনাবাদি জমির ব্যবহার হচ্ছে এবং কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত শাক-সবজি দিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। উৎপাদিত শাক-সবজির কিছু বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে। কৃষকরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত শাক-সবজি খেতে পারছেন এবং কোন শাক-সবজিতে কী কী পুষ্টি উপাদান আছে সে সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে