বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সবজি ও ফল চাষে বেকারত্ব দূর

স্বদেশ ডেস্ক
  ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ার নন্দিগ্রামে বিক্রির জন্য ক্ষেত থেকে খিরা তুলছেন কৃষক -যাযাদি

পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে না ঘুরে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল চাষ করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন অনেক যুবক। এদের মধ্যে টাঙ্গাইলের বাসাইল ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে রঙিন ফুলকপি, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বাঁধাকপি, মেহেরপুরের গাংনী ও টাঙ্গাইলের সখিপুরে কুল, বগুড়ার নন্দীগ্রামে খিরা এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় লেবু চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন স্থানীয় বেকার যুবক ও কৃষকরা। ঘুচিয়েছেন নিজের ও পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা। তাদের সফলতা দেখে অনেকেই ফল ও সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এসব কৃষকের দাবি সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরও ব্যাপক পরিসরে ফল ও সবজি চাষ করে নিজের এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর রঙিন ফুলকপি। ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধে ওষুধি গুণে ভরা এই সবজিতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। কৃষকের মধ্যে রঙিন ফুলকপি ব্যাপক আশার আলো জাগিয়েছে। পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নিজেরাও লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ক্যারোটিন ও ভ্যালেন্টিনা জাতের রঙিন ফুলকপি ১৫ শতাংশ জমিতে আবাদ করেন বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর পশ্চিম পাড়ার কৃষক আজাদ আলী খান। ভারত থেকে আমদানি করা হয় এ জাত। তিনি দুইশ' চারা পান। আবাদ করে প্রথম বছরেই বাজিমাত করেন। দেশি কপির থেকে দ্বিগুণ ফলন আসে। বাজারে দামও দ্বিগুণ। রঙিন ফুলকপি আবাদ করতে তার খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ থাকে ২০ হাজার টাকা।

রঙিন ফুলকপির আবাদ দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসছেন। লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই ফুলকপি আবাদের। তবে চারা পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কারণ রঙিন ফুলকপি আবাদে চারা বা বীজের জন্য পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে কৃষি বিভাগের ওপর। বীজ পাওয়া সহজলভ্য হলে ব্যাপকভাবে আবাদ করা সম্ভব হতো বলে জানান কৃষকরা।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, নতুন জাতের ফুলকপি আবাদে সব ধরনের সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে কৃষকদের।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক দুলাল উদ্দিন বলেন, 'এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপির প্রদর্শনী দেওয়া হয় কৃষকদের। কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। রঙিন ফুলকপির চারা বা বীজ সহজলভ্য করার জন্য আমরা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।'

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বাঁধাকপি চাষ করে কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছেন উপজেলার ছৈয়দাবাদ ১নং ওয়ার্ডের মৃত টুনু মিয়ার ছেলে মো. রফিক নামে এক কৃষক। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের গাছবাড়িয়া খাঁনহাটের দক্ষিণ পাশে কৃষিজমিতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা ছাড়াই নিজ অর্থায়নে প্রথমবারের মতো কৃষক রফিক ও তার সহযোগী কালু মিয়া ২৪০ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেন। প্রথমবার চাষেই ব্যাপক ফলন হওয়ায় অন্য কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, অন্য বাঁধাকপির তুলনায় এ বাঁধাকপির দাম ও চাহিদা বেশি। তাই কৃষকদের মধ্যে এর চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। বার বার উপজেলা কৃষি অফিসে পরমার্শ ও সহায়তায় জন্য যাওয়ার পরও তারা কোনো ধরনের পরামর্শ দেননি। নিজ মেধা ও অর্থায়নে ২৪০ শতক জমিতে প্রায় একলাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি এ বাধাকপি চাষ করেছেন। পরে জৈব বালাইনাশক, কেঁচো সার, ফেরোফিন ফাঁদ ও জৈব স্প্রের মাধ্যমে সম্পূণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এর চাষ করেন। বাঁধাকপিগুলো ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। এ কপি দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদেও ভারী মজাদার। এই চাষ করে তার যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, তার দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আজাদ হোসেন বলেন, উপ সহকারী মাঠকর্মীরা যদি কৃষকদের ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে অফিসে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, বিএ পাস করার পর একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন মহসিন আলী। ২ বছর শ্রম দেওয়ার পরও কোনো বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চাকরি ছাড়েন। পরে প্রথমে ১০ কাঠা জমিতে কাশ্মিরী জাতের কুল চাষ করেন। এতে বেশ লাভ হওয়ায় দুই বিঘা জমিতে শুরু করেন কুল চাষ। কাশ্মিরী ও বলসুন্দরী জাতের কুল চাষ করে নিজেই পরিচর্যা করেন। রোগবালাই অত্যন্ত কম। বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা কুল সংগ্রহ করে নিয়ে যান। প্রতিকেজি কুল বিক্রি করেন ১০০ টাকা দরে। চলতি বছরে অন্তত তিন লাখ টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশাবাদী।

শুধু মহসিন আলী নয়, তার মতো এলাকার শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা চাকরির আশা না করে বা বিদেশ না গিয়ে ঝুঁকে পড়েছেন কুল চাষে। এতে পরিশ্রম কম আর লাভ বেশি। অনেকেই আবার সাথী ফসল হিসেবে কুলের সঙ্গে অন্য ফসল আবাদ করছেন। আবার অনেকেই আসছেন কুল চাষের পরামর্শ নিতে। কৃষি অফিসও দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ।

গাংনীর সবচেয়ে বড় কুল চাষি মালসাদহের বশির আহমেদ জানান, তিনি ১৬ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। প্রথমে ৩ বিঘা জমিতে কুল চাষ করে লাভবান হলে ক্রমেই বাগান বৃদ্ধি করেন। কাশ্মিরী, আপেল ও বলসুন্দরী জাতের কুল চাষ করছেন। এতে খরচ অনেক কম, লাভ বেশি। তিনি শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের কুল চাষের আহ্বান জানান।

কুল চাষি সাহেবুল ইসলাম জানান, বাগানে কুলের সঙ্গে বেগুন মুলা চাষ করছেন। মাঝেমধ্যে রোপণ করেছেন লিচু গাছ। এক খরচেই তিন ফসল আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে আড়াই লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন। লক্ষাধিক টাকার সবজিও বিক্রি করেছেন একই চাষি।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার এমরান হোসেন জানান, এ উপজেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। রোগবালাই অত্যন্ত কম আর অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন কুল চাষে।

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে রঙিন ফুলকপি। উপজেলার পুমদি ইউনিয়নের জগদল বস্নকের কৃষক আনাম মিয়া রঙিন ফুলকপি চাষ করে বাজিমাত করেছেন। রং-বেরঙের এসব ফুলকপি উচ্চমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিলচাতল গ্রামের কৃষক আনাম মিয়া তার ১৫-২০ শতাংশ জমিতে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করেন। রঙিন হওয়ায় বাজারে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতারা উচ্চ মূল্যেও কিনে নেন।

কৃষক আনাম মিয়া জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তিনি এসব ফুলকপি চাষ করেছেন। নতুন জাত ও ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন। প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। সামনের মৌসুমে তিনি আরও বেশি জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করবেন।

জগদল বস্নকের উপসহকারি কৃষি অফিসার মুদাসিল হায়দার আলমগীর জানান, প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষে ফলন ও বাজার মূল্য দেখে ভালো লাগছে এবং অন্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে। অন্য কপির মতো হওয়ায় বাড়তি কোনো খরচ লাগে না।

উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম শাহজাহান কবির জানান, প্রথমবারের মতো এ উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষক আনাম মিয়া সফল হয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে।

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বর্তমানে ধান, আলু, সরিষা চাষের পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে খিরা। উপজেলার নামুইট গ্রামে গেলেই দেখা মিলবে ক্ষিরার চাষাবাদ। সারি সারি করে লাগানো প্রতিটি গাছে ধরে আছে খিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা লাভের আশা করছেন রানা।

জানা গেছে, উপজেলার নামুইট উত্তর পাড়ার মৃত কাওছার আলীর ছেলে রানা প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রায় তিন বিঘা জমিতে লাল তীর জাতের খিরার চাষ করে তাক লাগিয়েছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- মাথায় ডালি নিয়ে জমি থেকে খিরা তুলতে ব্যস্ত তিনি। এ সময় রানা জানান, নিজের জমি কম থাকায় অন্যের জমি বছর পত্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের ফসল টমেটো, বেগুন, মরিচ খিরা চাষাবাদ করে আসছেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও পৌষ মাসের দিকে তিন বিঘা জমিতে লাল তীর জাতের ১৫ হাজার খিরার বীজ বপন করেন। এ পর্যন্ত ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন পরপর খিরা তোলেন। প্রতি চালানে ৫-৬ মণ খিরা উঠত। সে সময় বাজারে ১৮শ' টাকা মণ বিক্রি করেছেন। এখন প্রায় প্রতিদিনই ১০ মণ করে খিরা উঠছে, যা এখন বাজারে ১২শ' টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।

ওই বস্নকের কৃষি কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম বলেন, এই বস্নকে অনেক কৃষকই রয়েছেন। তার মধ্য রানা অন্যতম। রানার খিরা'র জমি পরিদর্শন করে আসছেন এবং বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গাজীউল হক বলেন, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবং এর বাজার মূল্যে ভালো থাকে তাহলে রানা খিরা চাষে লাভবান হতে পারবেন।

সখিপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টকবরই, আপেল কুল, বাউকুল এমনি নানা জাতের বরইয়ের নাম শুনে বা দেখে থাকলেও বল সুন্দরী এবং ভারত সুন্দরীর নাম এই প্রথম জানল সখীপুরের মানুষ। হালকা হলুদ রঙের বরইয়ের নাম 'বল সুন্দরী' আর লাল-হলুদের মিশ্রণে যে বরই আছে, নাম তার 'ভারত সুন্দরী'। এই দুই সুন্দরী জাতের বরই চাষ করে লাভবান হয়েছেন টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার কৃষক ইলিয়াস আহমেদ।

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি ইলিয়াস তার তিনটি বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৬-৭ লাখ টাকার বরই বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে গড়ে তার খরচ হয় ৮-৯ লাখ টাকা। বরই চাষ করে ইতোমধ্যে ইলিয়াস আহমেদ এলাকায় কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

ইলিয়াস আহমেদ উপজেলার নামদারপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। বাগান ঘুরে ও ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের ভেতর সাড়ে তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন এ বাগান। সেখানে গাছ আছে প্রায় তিন হাজার। এবার ফলন বেশি হওয়ায় বিক্রিও ভালো হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে এবার আয় হবে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আপেলের মতো রং হয় বলে অনেকেই ভারত সুন্দরীকে আপেল কুল বলে থাকেন।

কীভাবে তিনি বরই চাষে উদ্বুদ্ধ হলেন জিজ্ঞেস করলে ইলিয়াস বলেন, রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর তিনি একটি স্থানীয় কিন্ডার গার্টেনে চাকরি নেন। ২০২০ সালে করোনার সময় স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে যান। এরপর ইউটিউব দেখে বরই চাষ শুরু করেন। প্রথমে নিজের দুই একর জমিতে, এরপর আরও দেড় একর জমি ইজারা নেন। সাড়ে তিন বছর পর প্রতিটি গাছে প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতিদিন বাজারজাত করার জন্য বরই তুলছেন শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে বাগান থেকে ১৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। আগামী এক সপ্তাহে আরও ছয়-সাত লাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন।

কৃষি উদ্যোক্তা ইলিয়াস আহমেদ বলেন, প্রতিটি গাছে আকারভেদে প্রায় এক মণ করে ফল ধরেছে। যার পাইকারি বাজারমূল্য ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। স্থানীয় হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। তিনটি বাগানে পরিচর্যার জন্য ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন।

সখিপুর পৌর শহরের ফল বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, দুই সুন্দরী জাতের বরইগুলো দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এখন অনেকেই সভা-সেমিনারে মিষ্টির পরিবর্তে বরই দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। ফলে এ দুই জাতের বরইয়ের বর্তমান বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, সখিপুরের মাটি ফল উৎপাদনে বেশ উপযোগী। কৃষিকাজে সম্ভাবনা দেখায় অনেক শিক্ষিত যুবক কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছেন। তারা নতুন নতুন ফল চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। ইলিয়াস আহমেদ পরিকল্পিতভাবে চাষ করায় তার বাগানে এ বছর ব্যাপক ফলন হয়েছে। তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিকাজে আসছে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় লেবু চাষ করে ভাগ্য ফেরালেন ঘারুয়া ইউনিয়নের হিরালদী গ্রামের মোতালেব মুন্সী (৬৫)। তিন বছর আগে শখের বসে লেবুর চাষ শুরু করেন তিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তিনি পেয়ে যান সফলতা। লেবু চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। তার বাগানে প্রায় সারাবছরই লেবু ভরপুর থাকে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগানে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা লেবু।

মোতালেব মুন্সি জানান, তিন বছর আগে প্রতিবেশীর বাগান থেকে একটি লেবুর চারা এনে বাড়ির উঠানে লাগিয়েছিলেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই গাছে ফুল এসে ভরে যায়। মাসখানেকের মধ্যেই গাছে লেবু ধরা শুরু করে। বাড়িতে নিজেদের খাবারের পাশাপাশি বাজারে কিছু লেবু বিক্রি করে তিনি কিছু টাকা পান। এরপর লেবু চাষে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বসতভিটার কাছেই বছর দুই আগে ১৬ শতাংশ জমিতে বিচিবিহীন জাতের এলাচি ও কাগজি লেবুর চারা রোপণ করেন। এক বছর পর গাছগুলোতে লেবু আসা শুরু হয়। এখন লেবুতে ভরে গেছে গাছের সব ডাল। লেবু বিক্রির আয় থেকে সংসারের বিভিন্ন খরচের পাশাপাশি তিনি কিছু টাকা জমাতে শুরু করেছেন। আগামীতে আরও ব্যাপক হারে লেবুর বাগান করবেন বলে জানান তিনি।

তার দেখাদেখি অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বেকার তরুণদের প্রতি তার পরামর্শ, তারা যেন লেবুর বাগান করে সাবলম্বী হয়। কেউ পরামর্শ চাইলে তিনি আগ্রহ ভরে পরামর্শ দেবেন।

এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংসু দাস জানান, উপজেলায় অনেকেই অনাবাদি জমিতে বিভিন্ন জাতের লেবু চাষ করেছেন। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করেন, তাদের জন্য পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে