রসগোলস্না। যে মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে জল আসে। সেই আদিকাল থেকেই রসগোলস্না নিয়ে রচিত হয়েছে গল্প, নাটক ও লোককাহিনী। তবে এই রসগোলস্নার গল্পটি একটু ভিন্ন। বাজারে সাধারণত ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের রসগোলস্না পাওয়া যায়।
কিন্তু মেহেরপুরের মহিদুলের দোকানে তৈরি হয় ছোট থেকে দুই কেজি ওজনের রসগোলস্না। স্বাদ ও গন্ধে ভিন্নধর্মী এই রসগোলস্না খেতে ভোজনরসিকরা প্রতিদিনই তার দোকানে ভিড় করেন। কেউ বা পাঠান আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আবার অনেকেই পাঠান দেশের বাইরে।
মেহেরপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শ্যামপুর বাজারের দক্ষিণে মহিদুলের মিষ্টির দোকান। দোকানে কাঁচের শোকেসে থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেক রকমের মিষ্টি। ছোট বড় সাইজের রসগোলস্না চমচম ছাড়াও রয়েছে আধা কেজি, এক কেজি ও দুই কেজি ওজনের রসগোলস্না। দোকানের পেছনে রয়েছে তার মিষ্টি তৈরির কারখানা। ছানা থেকে মিষ্টি তৈরির যাবতীয় কাজ নিজ হাতেই করেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মিষ্টি তৈরির কাজ। আর বিকাল থেকেই শুরু হয় ভোজনরসিকদের আনাগোনা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত বিকিকিনি। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন তার তৈরি রসগোলস্না খেতে। অনেকেই আবার আত্মীয়তা করার জন্য বড়মাপের রসগোলস্না নিয়ে যান। কেউ কেউ পাঠান দেশের বাইরে।
মহিদুল ইসলাম জানান, একযুগ আগে বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে এক মিষ্টির কারিগরের সঙ্গে পরিচয় হয় মহিদুলের। তার কাছ থেকেই মিষ্টি তৈরির কৌশলটি রপ্ত করেন। কীভাবে মিষ্টি তৈরি করে, তা মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। দেখে দেখে মনে রাখতেন কোনটার পর কোনটা করতে হয়। ওখানে দেখতেন আর বাড়িতে এসে দুধের ছানা কিনে নিজে তৈরি করার চেষ্টা করতেন। প্রথমে ছোট আকারের রসগোলস্না তৈরি করলেও পরে দুই কেজি ওজনের করতে থাকেন। তার ভিন্নধর্মী রসগোলস্না এলাকাতে প্রথম বলে দাবি করেন তিনি। ছোট হোক আর বড় সব সাইজের রসগোলস্না প্রতি কেজি বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে।
একবারেই প্রাকৃতিক উপায়ে রসগোলস্না তৈরি করেন মহিদুল। প্রথমে আধঘণ্টা ধরে চিনি জ্বালিয়ে রস করার পর দুধের ছানার সঙ্গে যৎসামান্য এলাচ গুঁড়ো এবং রুলি ময়দা ভালোভাবে মিশিয়ে গোলস্না রসের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে দেড় ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় রসগোলস্না। বড় রসগোলস্না স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পাঁচ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় অনেক দিন রাখা যায়।
মহিদুলের স্ত্রী নারগিছ জানান, মিষ্টির দোকানে কর্মচারীরা ঠিকমতো কাজ করে না। এ ছাড়া নানা ধরনের ক্ষতি করার কারণে এখন কোন কর্মচারী রাখা হয় না। যারা এই কারখানাতে কাজ করতো, সেসব কর্মচারী এখান থেকে শিখে নিজেই দোকান দিয়েছে। তাই সন্তান সংসার সামলে স্বামীর মিষ্টি তৈরিতে সাহায্য করেন।
শ্যামপুরের তাওহীদ হাসান জানান, তিনি এক কেজি ওজনের দুটি রসগোলস্নার বায়না দিয়েছেন। তার ভাই ঢাকায় চাকরি করেন। ইতালি থেকে তার ফ্যাক্টরির মালিক আসবেন। তাকে আপ্যায়নের জন্য এই রসগোলস্না পাঠাবেন ঢাকায়। এর আগেও ঢাকাসহ বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের কাছে রসগোলস্না পাঠিয়েছেন তিনি। সবাই এর প্রশংসা করেছেন।
গাংনীর কুঞ্জনগরের মজনুর রহমান আকাশ জানান, তিনি অনেক আগে থেকেই এই ব্যতিক্রমী রসগোলস্নার নাম শুনেছেন। কয়েকজন বন্ধু নিয়ে রসগোলস্না খেয়ে নতুন আত্মীয়দের জন্য কিনেছেন। এই রসগোলস্না প্রশংসার দাবিদার। একই কথা জানালেন হাড়াভাঙ্গা গ্রামের জুরাইস ইসলাম, মালসাদহ গ্রামের বাপ্পি ও গাংনী ভিটাপাড়ার আব্দুল আলিম।