শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

'বর্ষায় নাও, আর হেমন্তে পাও'

আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে উন্নয়ন বঞ্চিত মাটির রাস্তা -যাযাদি

শত বছরের পুরনো দুটি গ্রাম আজমিরীগঞ্জের আলীপুর ও মাতাবপুর। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পিছিয়ে রয়েছে এ গ্রামগুলো, যেখানে নেই ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আলীপুর ও মাতাবপুর গ্রাম থেকে কাকাইলছেও ইউনিয়নের কাকাইলছেও বাজারে যাওয়ার একটি মাত্র রাস্তা। এই একমাত্র রাস্তায়ও দৃষ্টি পড়েনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। দুই গ্রামে দৃষ্টি দিলে দেখা মিলে 'বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও' প্রবাদের বাস্তব চিত্র।

যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েই পড়াশোনার ইতি টানছে। কাকাইলছেও ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে গ্রাম দুটির অবস্থান।

স্থানীয়রা জানান, আলীপুর ও মাতাবপুর গ্রামের জনবসতি শত বছরের পুরনো। এখন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বাস। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শেষপ্রান্তে হওয়ায় সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সব রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধিরাই শুধু ভোটের সময় গ্রামে আসেন। নির্বাচন শেষ হলে তারা উধাও। একটি রাস্তার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ফল মেলেনি।

কৃষি, নদী, গবাদি পশু লালন পালন ও বর্ষায় মাছ ধরার মধ্যেই দুইটি গ্রামের মানুষের জীবিকা সীমাবদ্ধ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই তারা এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

কাকাইলছেও ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া চার কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার শেষ প্রান্তে আলীপুর ও মাতাবপুর অবস্থিত। যায়যায়দিনের সঙ্গে আলাপকালে গ্রামের বসিন্দারা তাদের দুর্ভোগের বিবরণ দেন।

মারফত মিয়া বলেন, 'আমাদের গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ৬-৭ বছর আগে বিদু্যতের আলো পৌঁছালেও রাস্তায় উন্নয়ন কোনো জনপ্রতিনিধি করেননি।'

কাজল চৌধুরী নামে আরেকজন বলেন, '১৫ বছর যাবৎ সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানের কাছে ধরনা দিয়েছি। রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তার ওয়াদা রক্ষা করেননি।'

আব্দুস ছামাদ চৌধুরী বলেন, 'দুই গ্রামের জনবসতি শত বছরের পুরনো। এরপরও আমাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যসেবা পাই না। রাস্তাঘাট নেই। ভোটের সময় এলে অনেকে অনেক প্রতিশ্রম্নতি দেন। কিন্তু ভোটের পর তাদের আর দেখা যায় না। গত ১৫ বছর যাবৎ শুধু রাস্তা উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি শোনেই গেলাম। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, রাস্তার অভাবে গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা মেলে না। মুমূর্ষু রোগীদের দরজা, পলো অথবা গরুর গাড়িতে করে নিয়ে হয় চিকিৎসকের কাছে। অনেক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় অনেকে। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তায় চলতে পারি না। এখন তো হেঁটে আমরা কাকাইলছেও বাজারে যেতে পাড়ি। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ মাসে নারী-পুরুষ হাঁটুর উপরে কাপড় তুলে চার কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে হয়।

কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, রাস্তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। বর্তমান সংসদ সদস্য ময়েজ উদ্দিন শরীফের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি রাস্তাটি করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে