শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ঝুলছে তালা, থাকেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা!

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ঝুলছে তালা, থাকেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা!

পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির লংগদুতে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের অনেকগুলো ঘরেই ঝুলছে তালা। এতে থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা, যারা থাকছেন তাদেরও আছে নানা অভিযোগ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বিদু্যৎ না থাকা, নষ্ট টিউবওয়েল এবং ঘরে বাইরে ফাটল ধরায় এসব ঘরে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, লংগদুর প্রত্যন্ত কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের বাজার টিলা ইসলামপুর এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এ ৩৪টি ঘরের মধ্যে ২৪টি ঘরে বসবাস করেন লোকজন। ফাঁকা ১০টি ঘরে এখন খড়কুটো ও গরু-ছাগল রাখা হয়। আবার কোনো কোনো ঘরে অসহায় দরিদ্র পরিবারের বসবাস রয়েছে মালিক পক্ষের অনুমতিতে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ২ নম্বর কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক পাশে ১৫টি, অন্য পাশে ১৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫টির মধ্যে ১১টিতে পরিবার বসবাস শুরু করলেও এখনো ঘরে ওঠেনি ৪টি পরিবার। তার মধ্যে ২টি ঘর তালাবদ্ধ। অন্য পাশে ১৯টি ঘরের মধ্যে ১৩টির মালিক পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও ৪টি ঘর তালাবদ্ধ। অন্য দুইটিতে থাকেন আশ্রয়হীন অসহায় দুই পরিবার। নির্মাণ করা কয়েকটি ঘরের দেয়াল ও মেঝেতেও ফাটল ধরেছে। কোথাও কোথাও ধসে পড়েছে ঘরের বিভিন্ন অংশ।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান, ঘরে তালা দিয়ে বেশিরভাগ লোকজনই চলে গেছেন। তাদের কেউ থাকেন নিজ বাড়িতেই, কেউ থাকেন এলাকার বাহিরে। এমনও আছেন, শুধু ঘর তালাবদ্ধ করে চলে গেছেন, আর কখনো আসেননি। এ জন্যই বেশিরভাগ ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। জায়গা কম পড়লে কেউ ফাঁকা ঘরগুলোতে খড়কুটো ও গরু-ছাগল বেঁধে রাখছেন। প্রকল্পের এই ঘরের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে এবং ঘরের মেঝেতে ইঁদুর গর্ত করেছে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ১৭ নম্বর ঘরে বসবাস করেন মুজিবুর মিয়া। তবে এই ঘরের প্রকৃত মালিক টুনু মিয়া। মুজিব বলেন, অনেকদিন ধরে নিজের কোনো ভিটেমাটি ও ঘর না থাকায় টুনু মিয়ার সম্মতিতে পরিবার নিয়ে এখানে আছেন। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের ধরেও তিনি ঘর পাননি।

প্রকল্পের ১৫ নম্বর ঘরের মালিক রাজ্জাক। তবে সেখানে এখন থাকেন ময়না বেগম। তিনি বলেন, 'গত ২ বছর ধরে এই ঘরে আছি। সরকারি ঘর পায় বড় লোকে, আমরা গরিব তাই ঘর পাই না! আপনাদের কাছে অনুরোধ করি আপনারা আমার বাচ্চা নিয়ে থাকার জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেন।'

জয়নব নামে একজন বলেন, 'এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক বছর ধরে থাকতেছি। এই ঈদের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কেউই কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। ঈদ খুব কষ্টে কাটাতে হয়েছে। আগে ইউএনও আসতো, আমাদের ভালো মন্দ দেখতো-জানতো; বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করতো। এখন কেউই কোন খোঁজ খবর নেয় না এবং সরকারি কোনো অনুদান পাই নাই।'

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক দেওয়ান জানান, 'বিষয়টি প্রথম থেকে জানার পরই আশ্রয়ণ পলস্নীতে গিয়ে যারা থাকে না তাদের ঘরের ক্রমিক নম্বর ও মালিকের নামসহ তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত এর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।' লংগদু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন চাকমা জানান, 'আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর কার্যক্রমের সময় আমি ছিলাম না, এখানে আমি সদ্য এসেছি। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।'

এ বিষয়ে লংগদু ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের সৌর-বিদু্যৎসহ সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকটে দূরীকরণে নতুন করে টিউবওয়েল প্রদান করা হবে। এছাড়া তদন্ত করে যৌক্তিক সব সমস্যা শিগগিরই সমাধান করার চেষ্টা করব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে