সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিকল স্স্নুইস গেট

কাপাসিয়ায় বৃষ্টির পানিতে বিনষ্ট ৫ হাজার একর জমির ধান

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
কাপাসিয়ায় বৃষ্টির পানিতে বিনষ্ট ৫ হাজার একর জমির ধান

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় স্স্নুইস গেট বিকল হওয়ায় গত কয়েক দিন আগে দুই দফা বৃষ্টির পানি আটকে এবং নদীর পানি প্রবেশ করে দুই ইউনিয়নের আট গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার একর বোরো ক্ষেতের পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা ধান তলিয়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হাজার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় দিন যাপন করছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়ে দ্রম্নত সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এ স্স্নুইস গেটটি নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের সঠিক কোনো তথ্য না পাওয়ায় দ্রম্নত মেরামত হচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রায় ১৭-১৮ বছর আগে উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের ভিকারটেক মধ্যপাড়া এলাকায় বানার নদী থেকে নরাইট বিলগামী দরদরা খালের প্রবেশ মুখে একটি স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। এ স্স্নুইস গেটটির যথাযথ তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েক বছরের ব্যবধানে তা বিকল হয়ে পড়ে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নরাইট বিলের আওতাধীন বারিষাব ইউনিয়নের ভিকারটেক, সেলদিয়া, বর্জাপুর এবং টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া, ডুমদিয়া, দিঘাব, আড়ালিয়া ও ঘোষেরকান্দি গ্রামের হাজার হাজার কৃষক। প্রবল বর্ষণের ফলে উপজেলার রায়েদ, সিংহশ্রী, টোক ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু এলাকার বৃষ্টির পানি বানার নদী দিয়ে দরদরা খাল হয়ে নরাইট বিলে প্রবেশ করে থাকে। বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বোরো মৌসুমের ধান কাটার প্রাক্কালে বানার নদী দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা ধান তলিয়ে যাচ্ছে।

ভিকারটেক গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া (৬৫) বলেন, তাদের এলাকার বিখ্যাত সর্ববৃহৎ নরাইট বিলে ৯ কুড়ি ৯টি অর্থাৎ ১৪৯টি গোপ বা এলাকা রয়েছে। চলতি মৌসুমে এ বিলের মাঝে প্রায় সাড়ে আট বিঘা ক্ষেতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তিনি। এ মৌসুমে ধান আবাদ করতে তিনি ও তার ছেলেরা কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। বর্তমানে তার কিছু ক্ষেতের ধান প্রায় পেকে গেছে। সেগুলো চড়া পারিশ্রমিকে শ্রমিক নিয়োগ করে কাটতে সক্ষম হলেও বাকি ক্ষেতগুলোর ধান না পাকায় কাটতে পারছেন না। গত বুধবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হলে বানার নদী দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে আট থেকে দশটি গ্রামের বিশাল এলাকার ধান ক্ষেতগুলো পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।

সেলদিয়া গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন (৪৫) জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নরাইট বিলের মাঝে তার দুই বিঘা বোরো জমি আবাদ করতে প্রায় বিশ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। গত দুই দফা বৃষ্টির পর বানার নদী দিয়ে পানি ঢুকে নরাইট বিলের বিশাল এলাকার বহু ধান ক্ষেত ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে অচিরেই আরো হাজার হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

বর্জাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নরাইট বিলে তিনি প্রায় বিশ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেতের ধানই পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। গত অগ্রহায়ণ মৌসুমেও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার কৃষক তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। স্স্নুইস গেটটি বিকল হয়ে পড়ায় এটি কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে স্স্নুইস গেটটি মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক বলেন, এ স্স্নুইস গেটটি পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন কিংবা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর কাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওই তিনটি দপ্তরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্স্নুইস গেটটি পরিদর্শন করেছেন এবং সবাই এটি তাদের দ্বারা নির্মিত নয় বলে দাবি করছেন। তার পরও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে এবং কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে