কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ছাটমলিস্নক বেগ গ্রামে বাড়ির ভেতর স্বল্প পরিসরে ভিয়েতনাম কৈ মাছ চাষ করে ৩ গুণ লাভ পেয়ে খুশি মাছচাষি ওসমান গণি। পলস্নী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ওসমান গণি বাড়ির ভেতরে মাত্র ৫০ শতক জায়গায় একটি গোলাকার ট্যাংক তৈরি করেছেন। সেখানে ৮ হাজার টাকায় ৮ হাজার ভিয়েতনাম কৈ-মাছের পোনা ছেড়েছেন। ৫ মাসে সেই কৈ মাছ বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকায়। আরও ৮০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওসমান গণি বাড়ির ভেতর রান্নাঘরের পেছনে সিমেন্ট ও ইট দিয়ে ১৬ ফিট ব্যাসের একটি গোলাকার ট্যাংক তৈরি করেছেন। যার উচ্চতা ৪ ফিট। পানি ধারণ ক্ষমতা ২৩ হাজার লিটার। ট্যাংকে দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্ত পানি রাখা হয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য একটি পানির পাম্প কিনেছেন। এছাড়াও পানি স্প্রে করার জন্য দুইদিকে দু'টি শাওয়ার বসিয়েছেন। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৬৮ হাজার টাকা।
মাছচাষি ওসমান গণি জানান, আমি আরডিআরএসের সহযোগিতায় গত ৮ অক্টোবর রংপুর থেকে ৮ হাজার টাকায় ৮ হাজার ভিয়েতনামি কৈ মাছের পোনা সংগ্রহ করি। মাছ কেনার পর প্রচন্ড শীত থাকায় তিন মাস মাছ বৃদ্ধিই হয়নি। কিন্তু শীত নেমে যাওয়ার পর গত ৫ মাসে দ্রম্নত বাড়তে থাকে পোনাগুলো। আমি আজ ২০০ কৈ উত্তোলন করেছি। বাজারে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে মাছগুলো বিক্রি করতে পারব। প্রথমবার আমার অল্প লাভ হলেও পরবর্তী বছর থেকে মাছ বিক্রি করে তিনগুণ করে লাভ করতে পারব। আমি কৃষি জমিতে কাজের ফাঁকে সামান্য সময় দিয়ে মাছ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি। এতে জায়গা কম লাগে বেশি সময় দিতে হয় না। সময়মতো মাছের খাবার দিলেই হয়। এ কাজে আমার স্ত্রী ও ছেলে সহযোগিতা করছে।'
ওসমান গণির অনার্স পড়ুয়া ছেলে রাকিবুল হাসান জানান, 'পড়াশোনা ও কলেজ যাওয়ার ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করছি। ভীষণ ভালো লাগছে। এখন আমি সকালে এবং বিকালে ট্যাংকের পাশে চেয়ার টেবিল নিয়ে পড়তে বসি। যখন পানিতে মাছের টুক টুক শব্দ হয়, তখন আমার ভীষণ ভালো লাগে। বাবা না থাকলে আমি অথবা আমার মা মাছকে পিলেট ফিড খেতে দিই। প্রথম সিজনে আমরা ৪ বস্তা ফিড মাছকে খেতে দিয়েছি। গড়ে ৪ বস্তায় খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা।'
আরডিআরএসের সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার মানিক চন্দ্র রায় জানান, 'ট্যাংকে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষের ফলে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। মূলত মাছের অক্সিজেন, পিএস, মাছের অ্যামোনিয়ার ফলে মাছ মারাও যেতে পারে। চাষিরা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হন এজন্য আমরা দু'সপ্তাহ পরপর এগুলো পরীক্ষা করে থাকি। কোনো সমস্যা হলে সমাধানের পথ বাতলে দিই।'
রাজারহাট আরডিআরএসের টেকনিক্যাল ফিশারিজ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, রাজারহাটে চারটি ট্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে ভিয়েতনামি কৈ-মাছ চাষ করা হচ্ছে। পরিবারে অন্যান্য কাজের ফাঁকে বাড়তি আয়ে উদ্বুদ্ধ করতে এই প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এতে তারা বেশ লাভবান হবেন।
রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল আলম জানান, পরিবারে প্রোটিন ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। ট্যাংকে কৈ মাছ চাষের ফলে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং মাছ বিক্রি করে তারা লাভবান হতে পারবেন।