সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রেমাল তান্ডবে খোলা আকাশের নিচে হাজারো পরিবার

পানিবন্দি মানুষ, যাতায়াতে দুর্ভোগ বিদু্যৎ-ইন্টারনেটবিহীন বিভিন্ন এলাকা টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা, সতর্কতা জারি
স্বদেশ ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
রেমাল তান্ডবে খোলা আকাশের নিচে হাজারো পরিবার

ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল'র তান্ডবে ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। এসব পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হওয়ার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে, ঝড়ের কারণে গাছ ও বিদু্যতের খুঁটি উপড়ে পরে বিদু্যৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানে সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার তালতলীতে পুরোশক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল। গত সোমবার সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড়টি এ উপকূল অতিক্রম করে। এ সময় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে তান্ডবলীলা চালায়। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট তছনছ করেছে। টানা বর্ষণে পানিবন্দি হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় স্থানীয়দের। পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, মাছের ঘের। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

জানা যায়, রেমালের প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে উপজেলার ৩ হাজার ৭শ' ঘরবাড়ি। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৩২ ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৫০ বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। বিদু্যতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলা। এছাড়া প্রায় শতাধিক গ্রাম ৪ থেকে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে পস্নাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ঘেরে। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ২৭ লাখ গ্রাহক। ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

সরেজমিন বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঝড়ের প্রভাবে রাস্তার পাশে গাছপালা উপজেলা প্রশাসন কেটে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ৭২ ঘণ্টার বেশি বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় এ উপজেলার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও রান্নার কাজে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরতে পারছে না। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, এ এলাকার প্রায় ৩শ'র বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখানকার জেলে পরিবারগুলো এখনো খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। তাদের পরিস্থিতি এখন মানবেতর।

তালতলী ইউএনও সিফাত আনোয়ার টুমপা বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এ উপজেলার সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে ক্ষতির তালিকা করে সহযোগিতা করা হবে। ৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ব্যক্তিগত ভবনে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ও কয়েক হাজার গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের জন্য শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়। বিদু্যৎ বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন লাইনে কাজ চলছে। শিগগিরই বিদু্যৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

এদিকে, রেমালের প্রভাবে টানা বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রায় ৫০-৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এই পানিবন্দি মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। টানা ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় বিদু্যৎবিহীন রয়েছে পুরো উপজেলা। মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পলস্নী বিদু্যৎ তালতলী কার্যালয়ের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বলেন, পটুয়াখালী পলস্নী বিদু্যৎ সমিতি অধীনে এ উপজেলায় ২৭ হাজার বিদু্যৎ গ্রাহক রয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৩০টি বৈদু্যতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে। একাধিক ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ৬ শতাধিক গাছ ভেঙে পড়ে বিদু্যতের তার ছিঁড়ে গেছে। এর ফলে এ উপজেলা বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদু্যৎকর্মীরা এসব লাইন মেরামত ও খুঁটি বসানোর কাজ করেছেন।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে টানা বর্ষণের কারণে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পানিবন্দি রয়েছেন। এসব এলাকার মানুষের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। প্রায় বাড়িতে রান্না ঘর পরে গেছে। বসতঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। হাঁস-মুরগি গবাদি পশু নিয়ে চরম দুরাবস্থায় পড়েছেন মানুষ। এর কারণে এসব পানিবন্দি মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে।

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভারি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে ২০ হাজারের অধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র কাঠের সেতুটি ভেসে গেছে। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বৈতরণী এলাকায় সুয়ালক খালের উপর নির্মিত অস্থায়ী কাঠের সেতুটি পাহাড়ি ঢলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

গত রোববার এ কাঠের সেতুটি ভেঙে একটি ইজিবাইক খালে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একইদিন তড়িঘড়ি করে সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের পারাপারের উপযোগী করা হলেও মেরামতের ২ দিন না পেরোতেই সেটি আবারো ভেঙে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের পারাপারে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগ।

স্থানীয় পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ.ফ.ম. মাহাবুবুল হক সিকদার জানান, কাঠের সেতুটির নির্মাণ কাজ হালকা হওয়ায় ঢলের পানিতে এটি ভেসে গেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে সেতুটি দ্রম্নত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

উলেস্নখ্য, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড়ি ঢলে মূল ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দে সেতুটির মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। বিকল্প পারাপারের মাধ্যম হিসেবে কাঠের সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভয়াবহ তান্ডব চালিয়ে শত শত বাড়ি-ঘর বিধ্বস্তসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে।

গত দুইদিন ধরে রেমালের তান্ডব, প্রবল বর্ষণ ও স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১২ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ উপজেলার ৫ ইউনিয়নে পানির তোড়ে শত শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত, রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্তসহ হাজার হাজার গাছপালার উপড়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় রাস্তাঘাট এখনো ডুবে রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া মৌসুমি ফল ও কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

৩ দিন ধরে বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছে উপজেলাবাসী। ঝড়ে গাছ পড়ে উপজেলার কয়েক শত বাড়ি ঘর একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বন্যাপরবর্তী সময়ে বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছেন। পয়ঃনিষ্কাশনের রয়েছে বিড়ম্বনা। অধিকাংশ বসতঘর ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় রান্না করতে না পেরে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে অনেক পরিবার। বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলো হয়ে পড়েছে দিশেহারা।

দক্ষিণ ইন্দুরকানী গ্রামের বাসিন্দা হতদরিদ্র বিধবা আকলিমা বেগম জানান, প্রতিবেশীর দুটি গাছ পড়ে তার ছোট ঘরটি ভেঙে গেছে। এখন থাকার মতো কোনো ঘর নেই। ছোট্ট শিশু নাতনি ও মেয়েকে নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ রকম হাজারও অসহায় মানুষের আহাজারি শোনা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউএনও আবুবকর সিদ্দিকী জানান, রেমালের প্রভাবে এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে গত ৩ দিন ধরে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদু্যৎ, কৃষি খাত এবং পড়ে গেছে গাছপালা ও বাড়িঘর। গত ১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া গেলেও আড়াইহাজার পৌরসদর ছাড়া কোথাও বিদু্যৎ সরবরাহ চালু হয়নি। রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ এবং প্রচন্ড গতিসম্পন্ন দমকা হাওয়া। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সেটি অব্যাহত ছিল। সোমবার সারাদিনের এ অবস্থায় বেশ কিছু জায়গায় কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে। বিদু্যতের তার এবং খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে তারের উপর বড় গাছ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে জমির ধান কেটে রেখে আসলে সেগুলো আর বাড়িতে আনার সুযোগ পাননি। সেগুলো নষ্ট হচ্ছে অথবা ভেসে গেছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে পুরো এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে সেটি স্বাভাবিক হয়।

পলস্নীবিদু্যৎ কর্মীরা জানান, বিদু্যতের ক্ষতিগ্রস্ত মেইন লাইন মেরামতের কাজ চলছে। বিদু্যৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর টানা বৃষ্টি অব্যাহত আছে পাহাড়ে। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি ও আবার কখনো ভারী। যেন থামছেই না এই বৃষ্টি। পাহাড়ে এমন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে শঙ্কার কালো মেঘ জমেছে রাজস্থলীবাসীর মনে। ঝোড়ো-হাওয়ার সঙ্গে হতে পারে পাহাড় ধস। এমন শঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন অনেকেই। রাজস্থলী ইউএনও সজীব কান্তি রুদ্র এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে মানুষকে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মানুষকে সতর্ক করতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারও।

অন্যদিকে, রাঙামাটি আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। রয়েছে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা। তাই সতর্ক থাকতে হবে স্থানীয়দের।

উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস তথ্য মতে, শুধু রাজস্থলীতে ২ হাজারেরও অধিক মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে- বাজারের পূর্বে হেডম্যান পাড়া, নোয়াজিরি, আমছড়া পাড়া, চুশাসপাড়া, জান্দিমইন, টাওয়ার পাড়া, টিএনটি কলোনি। এসব এলাকায় টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাজস্থলী-বাঙ্গালহালিয়া-চন্দ্রঘোনা সড়ক ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউএনও সজীব কান্তি রুদ্র জানান, উপজেলা ২৭টি ওয়ার্ডে নয়টি আশ্রয় কেন্দ্র সব সময় প্রস্তুত। পাহাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে।

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা সদরের উত্তর মুসলিমপাড়া ও মাস্টারপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত রোববার রাত ১০টা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো বা গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মুষলধারে। বৃষ্টির জমা পানি আর পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে সয়লাব হয়েছে মুসলিমপাড়া ও মাস্টারপাড়ার ২০-২৫টি ঘরবাড়ি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পরিবারগুলো। তবে শ্রমিকদের নিয়ে সকাল থেকে পানি নিষ্কাশনে কাজ করছে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকাবাসী। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এমন দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারগুলো। ড্রেনেজ নির্মাণ করে এ সমস্যা সমাধানের দাবি তাদের।

দুর্ভোগের কথা জানিয়ে স্থানীয় মো. সেলিম জানান, গত রাত থেকে তার ঘরে হাঁটু সমান পানি। দুইদিন রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উঠেছেন অন্যের বাড়িতে। শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি আর পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতেই এমন অবস্থা হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি দ্রম্নত নিষ্কাশন হতো, সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও হতো না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হানিফ মিয়া বলেন, প্রতি বছরের বর্ষা মৌসুমে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে এখানকার বাসিন্দারা। তবুও এ সমস্যা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই।

এ বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নির্মাণের বিষয়ে দ্রম্নতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকটি ছড়া ও খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ও ফসলাদির জমি পস্নাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার হাজারও একর ফসলি জমি এবং পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রায় ২৬ হেক্টর জমির সবজি ও আউশ ধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রামেলের প্রভাবে রোববার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় কুলাউড়ায়। যার ফলে পাহাড়ি ঢলে ছড়া, খাল ও নদীগুলোতে তীব্র স্রোতে পানি নামতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের গাজিপুর এলাকায় গোগালী ছড়ার উত্তর পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। যার ফলে ওই ইউনিয়নের গাজিপুর, ঘাগটিয়া, পুরন্দরপুর, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, গিয়াসনগর এলাকা পস্নাবিত হয়ে যায়।

ওই ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল আউয়াল জানান, গোগালী ছড়ার পাড় ভেঙে গাজিপুর দাখিল মাদ্রাসার বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে গেছে। তার ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি এলাকা পস্নাবিত হয়েছে। এলাকার লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমি, পুকুর, ফিশারিসহ অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। কুলাউড়া-গাজিপুর প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক লোকজন ঘরবাড়ি ফেলে রাস্তার উঁচু স্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে উপজেলার সদর, রাউৎগাঁও, টিলাগাঁও, কাদিপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা, গণমাধ্যমকর্মী তাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে ফানাই ও শুকনোছড়া নদীর পানি পাড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই ইউনিয়নের কবিরাজী, পালগ্রাম, হাসিমপুর, মুকুন্দপুর, ভবানিপুর, ভাটুত্বগ্রাম, মৈশাজুড়ীসহ আরও ৮-১০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধানের জমি, বীজতলা ও রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও ফিশারির মাছ। সব মিলিয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই অঞ্চলের লোকজন।

উপজেলার জয়চন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব বলেন, গাজিপুর মাদ্রাসার পাশে গোগালীছড়ার পাড় ভেঙে প্রায় ৮-১০ গ্রামের দুই হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফসলি জমিসহ অনেক পুকুর, ফিশারি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিতাস ব্রিকফিল্ড এবং জনৈক এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বাউন্ডারির কারণে পানি ঠিকমতো নিচ দিকে প্রবাহিত হতে পারছে না। তাদের কারণে সাধারণ মানুষের এত ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। খবর পেয়ে কুলাউড়া ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, এ বছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর। আউশ ধানের ৬৫০ হেক্টর বীজতলার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ২ হেক্টর এবং আবাদকৃত ৩৯৫ হেক্টর আউশ ধানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।

ইউএনও মহি উদ্দিন জানান, উপজেলার সদর ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা পস্নাবিত হওয়ার খবর পেয়ে সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করেছি। তবে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে