পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাজুড়ে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এসব হাট এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। কোরবানির পশুর হাটে এবার পাহাড়ি লাল ষাঁড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
লংগদু (রাঙ্গামাটি) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাহাড়ে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ রাঙামাটির লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ বাজারটি এখন জমে উঠেছে পাহাড়ি গরুর ব্যাপক বেচাকেনায়। বাজারের প্রবেশ পথেই বিশাল জায়গায় এই হাটটি গড়ে তুলেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণাধীন বাজার ফান্ড।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব গরু হাঁটিয়ে বৃহত্তর মাইনী বাজার পশুর হাটে নিয়ে আসছেন খামারি ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণ ওষুধ ছাড়াই পাহাড়ি এসব গরু বন-বাদারে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠায় দেখতে বেশ হৃষ্টপুষ্ট। তাই সহজেই ক্রেতাদের মন কাড়ছে এসব গরু। এছাড়া বাজারে রয়েছে বাহামাসহ নানা প্রজাতির বিশাল দেহের বিদেশি গরুও।
সাপ্তাহিক হাটে দেখা যায়, মাঝারি আকৃতির একেকটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ এবং বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকায়। এছাড়া বিদেশি গরুর দাম ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হাঁকা হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ কম। বিভিন্ন আকৃতির গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ছাগলও। একেকটি বড় আকারের খাসি-ছাগল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতার কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক থাকায় এবার চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা না আসায় বাজারে গরুর দাম ও চাহিদা কিছুটা কম। তাই খামারিদের মাঝে মিশ্র হতাশা দেখা দিয়েছে। তবে এ বাজারের প্রতি হাটের দিন হাজারো গরু-ছাগল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাদের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। তবুও সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে চাহিদানুযায়ী পাহাড়ি গরু-ছাগল ক্রয় করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
হাট ইজারাদার শামসুল সওদাগর বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে পশুর সংখ্যা বেশি হলেও ব্যবসায়ী কম, তারপরও এবার ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকার লেনদেন হবে বলে আশা করছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা ব্যবসায়ী হোসাইন বলেন, পুরনো এ বাজারে পাহাড়ে পালিত এবং প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা সবল ও রোগমুক্ত গরু-ছাগল পাওয়া যায়। আগের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি হলেও এত বড় বাজারে নেই কোনো চাঁদাবাজি। এছাড়াও এদিকে নিজেদের চাহিদা মোতাবেক গরু-ছাগল বেচাকেনা করতে পেরে খুশি কৃষক ও খামারিরা।
মাইনীমুখ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সোহেল জানান, পাহাড়ি জনপদের অন্যতম মাইনী বাজারের গরুর হাট দেশের সবার কাছে পরিচিত। এখানে বাহির থেকে গরু নিতে এসে ব্যবসায়ীরা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হননি। স্থানীয় ইজারদাররা সহযোগিতা করছেন। আশা করি, ঈদের আগের বাজারগুলো আরও জমজমাট হবে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি গরুর বিক্রির আগেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় নিয়মিত।
লংগদু উপজেলা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুশীল চাকমা বলেন, এবার হাটে স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা প্রচুর গবাদিপশু সরবরাহ রয়েছে। এসব পালিত গরুতে কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। তাই প্রতিটি গরু স্বাস্থ্য ও মানসম্মত।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বেশ ভালো। লংগদু থানা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই পশুর হাটটি জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
লংগদু থানার ওসি হারুনুর রশিদ জানান, প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে এখানে কোটি কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হয়। বাজারের সুন্দর পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় হাটের পরিবেশও ভালো।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্যর দাম বৃদ্ধি এবং গরু-ছাগল, হাঁস মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট বাঁধতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ নিয়মিত মনিটরিং করছে।
মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, আর মাত্র ছয় দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ফলে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় দু'টি বড় গরু বাজারে কোরবানির বেচাকেনা জমে উঠেছে। সমতলে পাহাড়ের লাল ষাঁড় ও বলদ গরুর চাহিদা হওয়ায় এসব গরুর প্রতি নজর বেশি ব্যবসায়ীদের। উপজেলায় ছোট, মাঝারি ও বড় দেড়শ' খামারে আড়াই হাজার গরু, ছাগলের পাশাপাশি পারিবারিক পর্যায়ে আরও সহস্রাধিক গরু কোরবানি উপযোগী।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- এ বছর উপজেলার ছোট, মাঝারি ও বড় ১৫০ খামারে ২৬১০টি গরু, ছাগল কোরবানি উপযোগী। এছাড়াও কৃষিনির্ভর জনপদে প্রান্তিক কৃষকের গোয়ালে (ঘরে) আরও সহস্রাধিক গরু বিক্রি উপযোগী রয়েছে।
উপজেলার মহামুনিস্থ হেডম্যান কার্যালয় মাঠে কোরবানি হাটে দেখা গেছে, বাজারে অন্তত দুই সহস্রাধিক ছোট ও মাঝারি গরু উঠেছে। সকাল বেলা বিক্রি কিছুটা কম হলেও বিকালে বেড়েছে! সমতলের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার চাহিদা মাফিক লাল ষাঁড় ও বলদ কিনে নিচ্ছেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে গরু বেচাকেনা একেবারে কম।
বাজার ইজারাদার ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের প্রাকৃতিক খাবার নির্ভর গরুর চাহিদা সমতলে বেশি! ফলে সমতলের ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে বাজারে আসছেন। আগামী হাটে বেচাকেনা বাড়বে। তিনটহরী গরু বাজার ইজারাদারের একজন মিজানুর রহমান বলেন, কোরবানকে ঘিরে এ বাজারে শেষ বেচাকেনায় জমজমাট হাট বসবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, এবার উপজেলার দেড়শ' খামারে আড়াই হাজারের অধিক পশু কোরবানি উপযোগী। এছাড়াও কৃষেকর ঘরে দুই-একটি করে আরও সহস্রাধিক কোরবানি উপযোগী কিছু গরু, ছাগল রয়েছে। আগামী কোরবানির হাট জমে উঠবে। আমরা (প্রাণিসম্পদ অফিস) নিয়মিত খামার ও কোরবানির হাট মনিটরিংসহ রোগমুক্ত গরু বাজারজাতে নজরদারি বাড়িয়েছি।