রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঝালকাঠির ঝুঁকিপূর্ণ সেতু যেন গলার কাঁটা

মেরামতের নামে কোটি টাকা খরচ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ঝালকাঠির ঝুঁকিপূর্ণ সেতু যেন গলার কাঁটা
ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর ঝুকিপুর্ণ বেইলি ব্রিজ দিয়ে চলছে যানবাহন -যাযাদি

বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের একটি বেইলি ব্রিজ। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করেছিল তৎকালীন জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকার। সেতুটি নির্মাণের পর ৩৪ বছর এটির ওপর দিয়ে চলেছে যানবাহন। বর্তমানে সেতুটি লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মেরামত করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। সেতু কর্তৃপক্ষ তিন বছর আগে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নতুন সেতু নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর সেতু সংস্কারে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

ঝালকাঠি সড়ক বিভাগ জানায়, গত ৯ মাসেই সেতুটি মেরামতে তাদের খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছে ঝালাই, ফেটে যাচ্ছে পেস্নট এবং খুলে যাচ্ছে নাট-বল্টু। তবুও সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।

1

ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই সেতুটি তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। সেতুটি ভেঙে পড়লে বরিশাল ও ঝালকাঠি থেকে পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা এবং যশোরের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে সেতুর ওপরে কয়েক হাজার ঝালাই দেওয়া হয়েছে। সেতুর ওপরের পেস্নটে ৭৩০টি লোহার টুকরো দিয়ে তালি দেওয়া হয়েছে। ভারী যান চলাচলে ঝালাই ছুটে খুলে যাচ্ছে লোহার টুকরোর তালিগুলো। সেতুর নিচের অংশে থাকা টানা দেওয়া এঙ্গেলগুলো খুলে পড়ছে। যার কারণে সেতুতে ভারী যানবাহন উঠলে বিকট শব্দের সঙ্গে পুরো সেতুটি অনবরত দুলতে থাকে।

ঝালকাঠি সড়ক উপবিভাগের প্রকৌশলী হুমায়ুন কবিরের দেওয়া কিছুদিন পূর্বের হিসাব অনুযায়ী, সেতুটির পেস্নট পরিবর্তন ও ঝালাইয়ের কাজে ২০২৩ সালের আগের পাঁচ বছরে তাদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদানের পর গত ৯ মাসে প্রায় চার লাখ টাকা সেতু জোড়াতালির কাজে ব্যয় হয়েছে।

বারবার মেরামত করা হলেও সেতুটি কয়েক দিনের মধ্যেই ফের যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নাট-বল্টু খুলে পড়ার পাশাপাশি ফেটে যাচ্ছে পেস্নট।

পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আজিজ মিয়া বলেন, 'লোড গাড়ি নিয়া ব্রিজে উটলে বুকটা কেঁপে ওঠে। প্রতি সপ্তাহে দেখি ঝালাই দিতে থাকে; কিন্তু এই ঝালাইতে কোনো কাজ হচ্ছে না।'

বরিশাল থেকে খুলনাগামী বিআরটিসির যাত্রীবাহী বাসের চালক মো. চান মিয়া বলেন, 'ব্রিজে গাড়ি নিয়া উঠলে মনে হয় দোলনায় উঠছি। গাড়িসহ পুরো ব্রিজটা দুলতে থাকে। মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে, এখানে দ্রম্নত নতুন ব্রিজ বানানো দরকার, তা না হলে যেকোনো সময় এটা ভেঙে পড়বে।'

ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরিফ খান বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা বেইলি সেতুটি কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করার জন্য নকশা একে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিপিপি বাস্তবায়ন হলে শিগগিরই এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। ফলোআপ প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রম্নভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালকের কাছে সম্ভাব্য সেতুর যে তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বাসন্ডা সেতুর নামও রয়েছে। অনুমোদন পেলেই নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।'

সড়ক বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও জানান, 'আমি ২০২৩ সালের পহেলা অক্টোবর ঝালকাঠিতে যোগদানের পর এই ৯ মাসে ৪ লাখ টাকা সেতুটিতে মেরামতে ব্যয় করেছি। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা এই সেতুটি বর্তমানে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের গলার কাঁটা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে