রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদীতে তীব্র ভাঙন

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
  ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদীতে তীব্র ভাঙন
জামালপুরের বকশীগঞ্জে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনপ্রবণ এলাকা -যাযাদি

জামালপুরের বকশীগঞ্জে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বারবার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বকশীগঞ্জ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদীর তীরবর্তী এলাকার পাঁচটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বর্ষার শুরুতেই নদী ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর তীরবর্তী বাংগাল পাড়া, কুতুবের চর গ্রামে দেড় কিলোমিটার ভাঙন ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা, ফকিরপাড়া গ্রামে দুই কিলোমিটার নদীভাঙন চলমান রয়েছে। নদীভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবার বসতভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটায় নয় ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।

1

প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদীভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোর। নদীভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙনরোধ করা যাচ্ছে না।

এসব পরিবার বারবার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবেরচর ও বাংগাল পাড়া গ্রামে জিঞ্জিরাম নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এই গ্রামের কৃষক আবদুল মাজিদ জানান, এ পর্যন্ত তিনি নদীভাঙনের শিকার হয়ে তিন বার বসতভিটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বারবার ভাঙনের ফলে তিনি এখন অনেকটাই নিঃস্ব। এবার চতুর্থ বারের মতো বসতভিটা সড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

আবদুল মাজিদের মতো ওমর আলী, আবদুল আজিত, পানফুল, রাজু মিয়া, ফজলু মিয়া ও নুর আলমের মতো অনেকেই ভানের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

শুধু বসতভিটায় নয় বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙনে কুতুবের চর জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে কুতুবের চর গ্রামের রাস্তাটিও। যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে কুতুবের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্থানীয় নুরুল ইসলাম জানান, গত তিন বছরে এই গ্রামের প্রায় ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে খুব শিগগিরই কুতুবের চর গ্রামটি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।

কলেজ শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম জানান, 'জিঞ্জিরাম নদী বাংগাল পাড়া ও কুতুবের চরকে গিলে খাচ্ছে। এসব গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থায় নিচ্ছে না। ফলে আমরা ভাঙন আতঙ্কে হতাশার মধ্যে রয়েছি।'

স্থানীয় এলাকাবাসী ভাঙনরোধে দ্রম্নত পাইলিং, জিও ব্যাগ ফেলানো ও বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, 'নদী ভাঙনরোধে ইতোমধ্যে ৫০০ জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রম্নত জিও ব্যাগগুলো ভাঙনকবলিত জায়গায় ফেলা হবে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত জানান, 'নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা করা হয়েছে। এ ছাড়াও যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে