পানির তীব্র স্রোতে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই দিনে ভেঙে গেল বেত্রবতী নদীর ৩টি সেতু। এতে কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌরসদরের সঙ্গে পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে কলারোয়ার সঙ্গে যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরার তালা উপজেলারও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র পশুহাট মোড়ের পাশে অবস্থিত বেত্রবতী নদীর ওপর লোহার বেইলি ব্রিজটি ধসে গেছে ও কলারোয়া তরকারি বাজার সংলগ্ন বাঁশ-কাঠের সাঁকোটি মাঝখান থেকে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একই নদীর ওপর পৌরসভাধীন গোপীনাথপুর গ্রামের তারকনন্দী নামক কাঠের সেতুটিও পানির তোড়ে অর্ধ ভেঙে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় একই সময়ে ওই ৩টি ব্রিজ, সেতু ও সাঁকো ভেঙে ধসে যায়।
কলারোয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বেত্রবতী নদীর উভয় পাশে ৬টি করে মোট ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এতে পূর্ব পাশের ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডের সঙ্গে পশ্চিম পাশের কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌর সদরসহ ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের যোগাযোগ বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার ওই ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডের মানুষ সহজে আর কলারোয়া উপজেলা সদরে আসতে পারছেন না। তেমনি নদীর এপারের ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের মানুষ ওপারে যেতে পারছেন না। এখন নদী পারাপার ও ওই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ থাকল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পৌরসভাধীন মুরারীকাটি হাইস্কুলের পাশে অবস্থিত পাকা ব্রিজটি। ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে বেশ সময় লাগছে ও অনেক পথ ঘুরতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে উপজেলা ও পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্র পশুহাট মোড়ের বেত্রবতী নদীর ওপর পাকা ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর ৮ মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মে মাসে আবার কাজ শুরু হলে পুরনো ব্রিজটি ভেঙে ফেলে যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে পাশে লোহার বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয়। সেই বিকল্প বেইলি ব্রিজটিই হয়ে পড়ে উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম।
বৃহস্পতিবার সকালে সেই বিকল্প ব্রিজটি পানির তোড়ে ধসে যেয়ে রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এদিকে, পৌরসদরের তরকারি বা কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার সংলগ্ন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত আরেকটি সাঁকো কিছুদিন আগে ভেঙে গেলে সম্প্র্রতি সেটা যাতায়াতের উপযোগী করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বেত্রবতী নদীর পানির ব্যাপক স্রোতে সেই কাঠের সাঁকোটিও মাঝখান থেকে ভেঙে দু'খন্ড হয়ে গেছে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেখান দিয়ে দু'পাড়ের যাতায়াত। অন্যদিকে, পৌরসভাধীন গোপিনাথপুর তারকনন্দী নামক স্থানের আরেকটি কাঠের বড় সেতুটির বিভিন্ন স্থান ও মাঝ বরাবর ভঙ্গুর হয়ে যানবাহন যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখান দিয়ে কোনোরকম মানুষজন পায়ে হেটে পার হতে পারছেন। তবে যে কোনো মুহূর্তে ওই সেতুটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম।
কলারোয়া পৌরসভাধীন বেত্রবতী নদীর ওপর থাকা ৪ সেতুর ৩টিই ভেঙে ও ধসে যাওয়ায় নদী পারাপারে হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন। সকালে এসব সেতু পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীদের দুপুরে ছুটির পর সেতু ভেঙে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে সেতু ৩টি ধসে ও ভেঙে যাওয়ায় বিপুল জনগোষ্ঠী অসহায় হয়ে পড়েছেন। একইসঙ্গে সেতু যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় কলারোয়া কার্যত বিচ্ছিন্ন জনপদে রূপ নিয়েছে। দ্রম্নততার সঙ্গে সেতুগুলো সচল করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শরিফুজ্জামান তুহিন ও কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি সেতু সরেজমিন পরিদর্শন করেন কলারোয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাশ, সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম সোহরাওয়ার্দি, পৌরসভার কর নির্ধারক নাজমুল ইসলাম, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ হাবিল হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
পরিদশর্ন শেষে কলারোয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাশ ও সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভাধীন দু'টি সাঁকো বা সেতু দ্রম্নত সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বেইলি ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন। সেটাও দ্রম্নত যাতায়াত উপযোগী করতে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে।