মধুপুর গড়ের আনারস জিআই সনদ পাওয়ার পর এখন দাবি উঠেছে এর স্বীকৃতির মান অক্ষুণ্ন রাখার। ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির লাল মাটিসহ সারাদেশে সুসংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সচেতন মহল, ভোক্তা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মধুপুরের যারা অবস্থান করছেন তারাও আনারসের ঐতিহ্য ও স্বীকৃতির মান বজায় রাখার দাবি তুলেছেন। এজন্য আনারসের রাজধানীতে জৈবিক উপায়ে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করে চাষাবাদে এগিয়ে যাওয়ার কথাও তারা বলেন।
কৃষকদের ন্যায্য দাম প্রাপ্তিতে বাড়াতে হবে রসালো ফলে বহুমুখী ব্যবহার। প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি শিল্প কারখানা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে আনারসের বাণিজ্যিক মার্কেট তৈরি করতে পারলে রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এতে কৃষক লাভবান হবেন, দেশ পাবে বৈদেশিক মুদ্রা। খুলে যেতে পারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির নতুন পথ ও হতে পারে আনারসের সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা বলেন, মধুপুরকে আনারসের রাজধানী বলা হলেও এ ফল কেন্দ্রিক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। প্রক্রিয়াজাত সেন্টার জুস জেলি বিস্কুটসহ নানা পণ্য তৈরির অপার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে আশানুরূপ এগিয়ে যেতে পারেননি। আনারসের মার্কেট অঞ্চল হিসেবে বিভিন্ন সার বিষ কীটনাশক কোম্পানি কোটি কোটি টাকার প্রোডাক্ট বিপণন করছে প্রতিবছর। আনারসের উৎপাদন গ্রোথ বৃদ্ধিসহ নানা উপকারিতা ও লাভের আশার চক্রে আবর্তিত হচ্ছে কৃষকের ভাগ্যরেখা। গ্রোথ রঙ উজ্জ্বলতা হচ্ছে, দামও বাড়ছে। সঙ্গে খরচ গ্রাফ সূচকও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তবে খরচের হিসাব বাদ দিলে লাভের অঙ্কটা থাকছে খুবই কম। মাঝখান থেকে লাভের অঙ্কটা যাচ্ছে কোম্পানির দিকে। কৃষকের উৎপাদন উপকরণের মাত্রাবিধি জানা না থাকার কারণে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। অপর দিকে ফলটাও নিরাপদ মনে করে না ভোক্তা পর্যায়ে। 'স্বাদহীন' বা 'আগের মতো স্বাদ নেই'- এমন মন্তব্য শোনা যায় সর্বত্র।
এ থেকে বেড়িয়ে এসে জৈবিক উপায়ে কম খরচে উৎপাদনমুখী হওয়ার পরামর্শ সচেতন মহলের। ভোক্তা পর্যায়ে যখন নিরাপদ মনে করবে তখন ফলের রানী আনারসের দামও বাড়তে থাকবে। হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে। জিআই পণ্য হিসেবে প্রাপ্ত স্বীকৃতি দেশ-বিদেশে সুনাম বয়ে আনবে- এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা। এসব তথ্য মধুপুরের বিভিন্ন চাষি পাইকার মহাজন ফড়িয়া কৃষি বিভাগসহ ভোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
আনারসের সবচেয়ে বৃহত্তর জলছত্র বাজারে গেলে কৃষক পাইকার ও ভ্যানচালকরা জানালেন, যেখানে কমলা আপেল আঙ্গুর বেদেনা আমসহ অন্য ফল কেজি দরে বিক্রি হয়, দামও অনেক বেশি, সেখানে রসালো আনারসের দাম কত কম। দুই তিন কেজি ওজনের একটি আনারসের দাম ২০-৩০ টাকা। সেখানে এককেজি কমলার দাম কত এজন্য তারা প্রক্রিয়াজাতকরণের দাবি জানান।
তবে আনারস চাষের ষাটের দশকের কথা জানালেন গাছাবাড়ি গ্রামের অজয়। ওই সময় আনারস চাষ করতেন জৈবিক উপায়ে। স্বাদ গন্ধের কারণে শিয়াল ইদুরের উপদ্রব বেশি ছিল। স্বাদে গন্ধে ছিল অতুলনীয়। খরচ হতো না। আনারস নিরাপদ উপায়ে চাষাবাদের পরামর্শ তার।
গোলাবাড়ি ইউনিয়ন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রোকনুজ্জামান রনজু বলেন, জিআই পণ্যের স্বীকৃতির মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। সব ধরনের কেমিক্যাল ও ভেজালমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার এখন শ্রেষ্ঠ সময়। তার মতে, আনারস কেন্দ্রিক বহুমুখী শিল্পকারখানা তৈরি হলে একদিকে কৃষক লাভবান হবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্মী বলেন, এতদিন আনারস বিদেশে রপ্তানির জন্য যে চেষ্টা করা হচ্ছিল। এখন জিআই স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। তাই রপ্তানি করতে পারলে সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, গত বছর জেলা প্রশাসকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মধুপুর আনারস জিআই সনদ পেয়েছে। এখন জৈবিক উপায়ে চাষাবাদ করে ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। আনারস কেন্দ্রিক শিল্পকারখানা হলে জুস জেলি বিস্কুটসহ পণ্য তৈরির পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন।