নদীর মাটি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। ফলে ড্রেজিং-এর নামে সরকারের প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা নদীতেই যাচ্ছে। নৌ-চ্যানেলের ড্রেজিংকৃত পলি পাইপ দিয়ে ৩-৪শ' ফুট নদীর উজানে ফেলার কারণে ওই পলি পানির স্র্রোতের সঙ্গে আবার ড্রেজিংকৃত চ্যানেলে এসে ভরে ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। আবার চ্যানেলের কিছু পলি অপসারণ করে নদীতে চর পড়া স্থানে স্তুপ করে রাখা হলেও সে পলি বর্ষা মৌসুমে পানির স্র্রোতে ড্রেজিংকৃত চ্যানেলে এসে ভরে যাচ্ছে। ফলে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ড্রেজিং করা হলেও তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে নদীর বালু নদীতে থাকার কারণে ড্রেজিং করে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। এ ছাড়া, বিআইডবিস্নউটিএর ড্রেজিং ইউনিট দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চ্যানেল সচল রাখার জন্য ড্রেজিং করে আসলেও ডুবো চরের কারণে বারবার ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে নাব্যতা সংকটের কারণে বিআইডবিস্নউটিএর ড্রেজিং ইউনিট গত ২৮ জুলাই থেকে পলি অপসারণের কাজ শুরু করেন। গত বছর আরিচা-কাজীরহাট, নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করে ৩ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। এ বছর আরিচা-কাজীরহাট-নগরবাড়ী, মুন্সি খোলা, কৈটোলা-মোহনগঞ্জ-বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৮ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হবে বলে বিআইডবিস্নউটিএর ড্রেজিং অফিস সূত্রে জানা গেছে। আরিচা ঘাট এলাকার রামানন্দ পাল বলেন, আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটের খননকৃত পলি নদীর উজানে ফেলে শুধু সময় ও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। আরিচা ঘাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, 'প্রতি বছর একই প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার না দিয়ে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ নৌ-রুটের পলি অপসারণের টেন্ডার দেওয়া হলে টাকাও অনেক কম ব্যয় হবে।' উপজেলা বিএনপির সভাপতি রহমত আলী লাভলু বলেন, 'নদীর পলি নদীতে ফেলে নাব্যতা সংকট শেষ হবে না। নদীর পলি নদীর তীরে ফেলতে হবে।'
এদিকে আরিচা বিআইডবিস্নউটিসির অফিস সূত্রে জানা গেছে, নৌ-রুটে বড় ফেরি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে ৯ থেকে ১০ ফুট পানির প্রয়োজন। নাব্যতা সংকটের কারণে প্রায় তিন মাস ধরে স্বাভাবিকভাবে ফেরি চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে।
আরিচা অফিসের বিআইডবিস্নউটিসির ডিজিএম নাছির উদ্দিন বলেন, 'আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে প্রায় দীর্ঘ তিন মাস ধরে নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।' আরিচা বিআইডবিস্নইটিএর ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ বলেন, 'আরিচা-কাজীরহাট, নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে বিআইডবিস্নউটিএর নিজস্ব ৭টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ করা হচ্ছে। এবার এ নৌ-রুটে প্রায় ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৮ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'নদীতে খননকৃত চ্যানেল থেকে ১২ থেকে ১৫ ফুট দূরে পলি ফেলা হচ্ছে। আমরা নদীতে দৃশ্যমান নদীর চরে পলি ফেলা হচ্ছে।'
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক পিন্টু কানুন গোয় বলেন, 'যমুনা নদীতে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে ঘোলা পনির সঙ্গে প্রচুর পলি এসে নদীতে নাব্যতার সৃষ্টি হয়। শুধু এভাবে ড্রেজিং করে কোনো লাভ হবে না। কারণ নদী নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এভাবে ড্রেজিং করে সাময়িক চ্যানেল সচল রাখতে পারবে।'