শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

ঈশ্বরদীতে আমন উৎপাদনে বিপর্যয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার মে. টন কম

মো. খালেদ মাহমুদ সুজন, ঈশ্বরদী (পাবনা)
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ঈশ্বরদীতে আমন উৎপাদনে বিপর্যয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার মে. টন কম
পাবনার ঈশ্বরদীতে আমন ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে আমন ধানের চাষ হয়েছিল মোট ৩৬৬৩ হেক্টর জমিতে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে চাষকৃত এ সব জমি থেকে মোট ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল বিঘা প্রতি ১৯-২০ মণ হারে, যার সমষ্টি ছিল ২৭৮৩৯ (সাতাশ হাজার আটশ' উনচলিস্নশ) মেট্রিক টন ধান। কিন্তু আমন মৌসুম মাড়াই শেষে উপজেলার আমন প্রধান অঞ্চলগুলোর কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, এবারের আমন মৌসুমে সর্বকালের সেরা বিপর্যয় হয়েছে অত্রাঞ্চলে। উঁচু জমিতে ১৮-১৯ মণ হারে ধান উৎপাদিত হলেও নিচু জমিগুলোতে এবার ধান হয়েছে ৩ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯-১১ মণ, যা সর্বকালের সেরা বিপর্যয়! যে বিপর্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা হিসেব করা হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ধান। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিপনাকে এ বিপর্যয়ের জন্যে দায়ী করে তার অযোগ্যতার সমালোচনাও করেছেন এ অঞ্চলের অনেক কৃষক।

উপজেলার আমন প্রধান অঞ্চল মুলাডুলি, পতিরাজপুর, বাঘহাছলা, অরণকোলা, দাশুড়িয়া ঘুড়ে এবং এ অঞ্চলের ধান চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'এবার অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের মাঠের ধান তিনবার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেই ধান ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। তাই বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছি ৩ থেকে শুরু করে ৯-১১ মণ। এতে আমাদের খরচের টাকাই আমরা পাইনি।'

কৃষক স্বপন বলেন, 'আমার উঁচু জমিতে প্রতি বিঘায় ১৯ মণ হারে ধান পেলেও নিচু জমিতে পেয়েছি ৮ মণ হারে। এর আগে কোন দিনই এমন হয়নি। তবে উপজেলা কৃষি অফিসাররা যদি একটু মাঠে এসে আমাদের চাষবাসের দিকে নজরদারি করতেন তাহলে এভাবে পানিতে ফসল তলিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না।'

রামনাথপুর এলাকার কৃষক ইমরান বলেন, 'অফিসাররা সারাবছরে একবারও মাঠে আসেন না। রোদে সবজি পুড়লেও না। আবার পানিতে ডুবলেও না। তারা শুধু অফিসে বসে সরকারের অন্ন ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করছেন না। অথচ কৃষকদের পাশে থাকার জন্যই তাদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার।'

কৃষক রায়হান খাঁ জানান, এ বছর আমন মৌসুমে মোট ২০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন। উঁচু এবং নিচু মিলে মোট ধান পেয়েছেন ১৩০ মণ। অথচ তার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮০-৩৯০ মণ। তিনি এত বড় বিপর্যয়ের জন্য জমিতে জলাবদ্ধতাকে দায়ী করেন। সেই সঙ্গে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতাকেও দায়ী করেন এই কৃষক।

বাঘহাছলার ধানচাষি মাহফুজুর রহমান বলেন, '৪ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। অথচ ধান পেয়েছি মাত্র ১৯ মণ! বর্তমানে বাজারে ধানের দাম এক হাজার চারশ' টাকা মণ। অথচ প্রতিমণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে তিন হাজার একশ' টাকার বেশি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার বলেন, 'এ বছর ঠিক কি পরিমাণ ধান কম উৎপাদন হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখন পর্যন্ত আমার কাছে নেই। তবে অতি বৃষ্টির কারণে আমনের জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রসাশনকে একাধিকবার অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে আমার কিছুই করার নেই।'

জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রসাষক সুবীর কুমার দাশ যায়যায়দিনকে বলেন, 'বস্নক সুপার ভাইজারদের সমন্বয়ে কৃষকের সঙ্গে কাজ করার দায়িত্ব কৃষি কর্মকর্তার, উপজেলা প্রসাশকের নয়। তবুও বিএডিসির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এবার ৩০ কিলোমিটার. খাল পুনঃখনন করবে। এটি মুলাডুলি এবং দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কৃষকদের ফসলকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে