যশোরের মণিরামপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় কলেজছাত্র হত্যা মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছেলেকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার পর পুলিশের কাছে বাবার আত্মসমর্পণ ও ফরিদপুরের সালথায় গাঁজাসহ ছেলে আটকের খবরে বাবার মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর ও মণিরামপুর প্রতিনিধি জানান, যশোরের মণিরামপুরে এক ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। বুধবার সকালে সড়কের পাশ থেকে ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলামের (৪৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত জহুরুল ইসলাম উপজেলার গেবিন্দপুর গ্রামের খোরশেদ আলীর ছেলে।
পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, দুর্বৃত্তরা মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় জহুরুলকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যা রহস্য উদঘাটনে অভিযান চলছে। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত জহুরুল উপজেলার কোনাকোলা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পাইপের ব্যবসা করে আসছিলেন। ব্যবসায়িক কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার চিনাটোলা-কোনাকোলা সড়কে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম জানান, তার ভাই প্রতিদিনের ন্যায় সকালে নাস্তা করে দুপুরে খাবার নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এরপর রাতে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু ঘটনার রাতে বাড়ি না ফেরায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন সকালে ভাইয়ের মরদেহ সড়কে পড়ে থাকার খবর জানতে পারেন।
মণিরামপুর থানার ওসি নূর মোহাম্মদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- পূর্ব শত্রম্নতার জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে, কেউ আটক না হলেও হত্যা রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় কলেজছাত্র হত্যা মামলার আসামি ধলা মিয়া প্রকাশ দানু মিয়াকে (৩৫) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় পিটুনিতে গুরুতর আহত হন মো. মুবিন (২৫) নামে অপর এক আসামি।
মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে চকরিয়া আসার পথে লাল ব্রিজ এলাকায় দুইজনকে জোর করে একদল সন্ত্রাসী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে বিকাল ৫টার দিকে পেকুয়া হরিণাফাঁড়ি এলাকা থেকে পুলিশ তাদের আহতাবস্থায় উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে। দানু মিয়ার অবস্থার অবনতি হলে চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ৮টার দিকে পটিয়া ইন্দ্রপোল এলাকায় মারা যান তিনি।
দানু মিয়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মাহারা পাড়ার মো. কলমদরের ছেলে। আহত মুবিন চকরিয়া উপজেলার কোনখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছড়াপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে।
নিহতের পরিবারের লোকজন বলেন, পেকুয়া উপজেলার কিছু সন্ত্রাসী দানু ও মুবিনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সড়কের পাশে ফেলে যায়। আমরা জড়িত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মোবারক আলী নামে একজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তিনি জামিনে থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে হরিণাফাঁড়ি এলাকা থেকে দানুমিয়া ও মুবিনকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০২৩ সালে ১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আসহাবুল করিম জিহাদকে পেকুয়াস্থ বাড়ি থেকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী এলাকায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার পিতা মকছুদুল করিম বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উলেস্নখ করে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আমলাবো এলাকায় ৬ বছরের শিশু সন্তান জুলফিকার জিহাদকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বাবা জুবায়ের হাসান (৩৮)। গত মঙ্গলবার রাতে ডোবা থেকে শিশুর মরদেহ ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় উদ্ধার করে পুলিশ। রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আমলাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জুবায়ের হাসানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। জুবায়ের হাসান নরসিংদী সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালে জুবায়ের হাসানের সঙ্গে একই এলাকার পারভীন আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। গত অক্টোবর মাসে কলহের জেরে স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৪) ছেলে জুলফিকার জিহাদকে স্বামী জুবায়ের হাসানের কাছে রেখে বাবার বাড়ি চলে যান। গত ৯ ডিসেম্বর সকালে জুবায়ের হাসান চাকরির খোঁজে ছেলেকে নিয়ে রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আসেন। ছেলে জিহাদ মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্না করে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জুবায়ের হাসান ছেলেকে ভুলতা গাউছিয়ার অদূরে গোলাকান্দাইল-কাঞ্চন সড়কের আমলাবো মুন্সী ফিলিং স্টেশনের পাশে ডোবার পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন। পরদিন মঙ্গলবার ডোবায় এসে ছেলের বিকৃত মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর রাতে তিনি ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশে আত্মসমর্পণ করেন। রূপগঞ্জ থানা ওসি লিয়াকত আলী বলেন, এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের সালথায় মাদক ব্যবসায়ী ছেলেকে আটকের এক ঘণ্টা পর স্টোক করে মারা গেছেন জাফর শেখ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দিয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া জাফর শেখ দিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মাজেদ শেখের ছেলে।
দিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাতে দিয়াপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে জাফর শেখের ছেলে জুবায়ের শেখকে (২৩) আটক করে পুলিশ। তার ঘণ্টাখানিক পর বাবা জাফর শেখ স্ট্রোক করে মারা যান।
সালথা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, 'পুলিশের একটি টিম দিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ী জুবায়েরকে ১৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে। পরে খবর পেলাম, ছেলের আটকের খবরে তার বাবা জাফর শেখ স্ট্রোক করে মারা গেছেন।'