ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ সুগার মিল ও ফরিদপুর সুগার মিলস লিমিটেডের ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত খবর-
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ভারী শিল্প মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকালে মিলের ডোঙ্গায় আখ ফেলে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ইক্ষু গবেষণা বিভাগের পরিচালক এবং যুগ্ম সচিব এটিএম কামরুল ইসলাম তাং। উদ্বোধন উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতিত্বে করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম।
চলতি মাড়াই মৌসুমে ৫০ দিনে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চিনি আহরণের গড় ধরা হয়েছে ৫.৪০ শতাংশ। এ বছর মিলে প্রতি মণ আখের দাম ধরা হয়েছে ২৪০ টাকা।
২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে ৪০ দিনে ৪৯ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১ হাজার ৮৭০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল। ওই বছর চিনি আহরণের গড় ছিল ৩.৮০ শতাংশ। প্রতি মণ আখের দাম ছিল ২২০ টাকা। এর আগের বছর ২০২২-২৩ মৌসুমে আখের মণ ছিল ১৮০ টাকা।
মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) গৌতম কুমার মন্ডল জানান, মাড়ায়ের জন্য মাঠে দন্ডায়মান আখ রয়েছে ৪ হাজার ১০ একর। লতি মাড়াই মৌসুমে আখ রোপণ ও চিনি উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। আখের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা আখ চাষে ঝুঁকছেন বলেও যোগ করেন এ কর্মকর্তা। চলতি রোপণ মৌসুমে ৫ হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগে প্রতি মৌসুমে মিল এলাকার কৃষকরা ৮ থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ করতেন। নানা প্রতিকূল পরিবেশ এবং অল্প সময়ে ফুল-ফলসহ বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ হওয়ায় কমে গিয়েছিল আখ চাষ। তবে গত তিন মৌসুমে পর্যায়ক্রমে আখের দাম বৃদ্ধি করায় আবার আখ চাষে ফিরছেন কৃষকরা। উলেস্নখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৭.৯৩ একর নিজস্ব জমির উপর নেদারল্যান্ড সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এরমধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৮.২২ একর জমিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩.৯৮ একর পুকুর এবং ১০৭ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ইক্ষু খামার। এছাড়া ১৮.১২ একর জমিতে জুড়ে রয়েছে সাবজোন অফিস ও আখ ক্রয় কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালীন মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ কর্মদিবস আখ মাড়াই চলে। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় ১৯৬৭-১৯৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করে। ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা ছাড়াও যশোরের দু'টি উপজেলা নিয়ে গঠিত মিলে আটটি জোনের আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে সাড়ে তিন লাখ একর। আখ ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে ৪৮টি।
মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর সুগার মিলস লিমিটেডের (৪৯তম) ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে ফরিদপুর চিনিকলের ডোঙায় আখ ফেলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হয়। প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা একযোগে ডোঙায় আখ নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে মাড়াই মৌসুমের সূচনা করেন। ফরিদপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুলস্নাহর সভাপতিত্বে কেইন ক্যারিয়ার প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএসএফআইসি সদর দপ্তরের পরিচালক (বাণিজ্যিক) আজহারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ সুপার মধুখালী সার্কেল মো. ইমরুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাকিব হোসেন চৌধুরি, মধুখালী উপজেলা জামায়াতের আমির আলিমুজ্জামান, চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহিন মিয়া, সভাপতি শাহিন মিয়া, আখ চাষি কল্যাণের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা মোহাম্মদ ওবায়েদ বিন নাসের।