মেধা, শ্রম আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোন কাজেই সফলতা অর্জন সম্ভব। এমনি এক বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার পৌরসভাধীন ধুকুড়িয়া এলাকার নার্সারী ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন। শখের বসে প্রথমে বাড়ির আঙ্গীনায় ফুলের নার্সারী করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল ও ফলের চারার নার্সারী করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন একজন সফল নার্সারীর মালিক। সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। এখন বছরে তার সঞ্চয় হয় লাখ টাকা। নার্সারীর সফল মালিক হিসেবে তার পরিচিতি এখন উপজেলা ছাড়িয়ে জেলাতে ছড়িয়ে পড়েছে। নার্সারীর জন্যই এক নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। তার দেখাদেখি উপজেলায় দিন দিন এই ব্যবসায়ীর সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ছে।
মোক্তার হোসেনের সফলতা দেখে নার্সারীতে বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে উপজেলার অর্ধশত পরিবার। ভ্যানে করে ফুল, ফলের চারা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আরও অন্তত ত্রিশ পরিবার। রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোতে যাচ্ছে এখনকার নার্সারীর চারা ও ফুল। যদিও সহজ লভ্য নয় এমন কিছু উন্নত জাতের ফুল ও ফলের চারা অন্য জেলা থেকে তাদের আনতে হয়। উপজেলার ছোট বড় সব বাজারেই তাদের নার্সারীর চারা ও ফুল বেচাকেনা হয়। ফুল এবং ফুল-ফলের চারা বিক্রেতাদের অনেকেই জানান, সারা বছর যতটা না ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ফেব্রম্নয়ারীর ২১ তারিখ পর্যন্ত। তাছাড়া বিশেষ দিন গুলোতেও তাদের ফুলই উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ধুকুড়িয়া, রামপুর, কবুতরমারী, বাউসা, কায়দা, মোজার, পুলাদেশী ও মাউড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের অন্তত শতাধিক পরিবার এই পেশায় জড়িয়ে জীবীকা নির্বাহ করছেন। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা দমন বা কীটনাশক দিচ্ছেন, কেউবা বিভিন্ন চারা ভ্যানে সাজিয়ে গ্রাম গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। উপজেলার অধিকাংশ নার্সারীতে গোলাপ, গাদা, মৌচান্দা, মাদবী লতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি ফুলসহ বিবিন্ন জাতের গাছের বিক্রি করা হয়। তবে মোক্তার হোসেনের নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গাদা, ডাবল ও সিংগেল স্টার, বার্ডিং হার্ট, বাগান বিলাশ, ক্রিশমাশ, দোপাটি, চন্দ্রমলিস্নকা, ডাবল ও সিংগেল রঙ্গন, মৌচান্দা, মাদবী লতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সেঞ্চুরী, গন্ধরাজ, বিভিন্ন জাতে জবা, সেলবিয়া, জিনিয়া, কসমস, ক্যাবিস্ট, মিনি ও বড় টগর, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, হাসনা হেনা, চায়না ও ভারত থেকে আনা অ্যানকাসহ নানান প্রজাতির ফুল ও চারা এবং সাথী চারা হিসেবে উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রকার আম, পেপে, কাঁঠাল, লিচু, থাই পেয়ারা, ডালিম, জাম্বুরা, মেহেদীর চারা তৈরি ও বিক্রি করা হয়। গাছের জাত বিবেচনায় প্রতিটি চারা ২০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন তারা। ফলের চারা থেকেও বাড়তি টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়ে মোক্তারের মত অনেকেই বাড়ি করেছেন, কিনেছেন জমি। ছেলে মেয়ের পড়া লেখার খরচসহ সংসারের অন্যান্য খরচ এই নার্সারী থেকেই পাচ্ছেন তারা।
নার্সরীর মালিক মোক্তারের বলেন, আগে ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে প্রায়ই লোকসান গুনতে হত। তাই ১৯৯৮ সালে বাড়ীর আঙ্গীনায় ফলজ ও কাঠ গাছের নার্সারী স্থাপন করেন। প্রথম বছরেই বেশ লাভ হয়। পরের বছর থেকে নার্সারীর জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করায় বর্তামানে আড়াই একর জমিতে নার্সারী গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে বিভিন্ন ফুলের নার্সারী করেছেন তিনি। নিজের ৫০ শতাংশসহ আরও দুই একর জমি বন্ধক নিয়ে সেখানে নার্সারী করেছেন। এবার তার নার্সারীতে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, নার্সারীর উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।