শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের নাম পরিবর্তন, জানে না প্রশাসন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৮
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের নাম পরিবর্তন, জানে না প্রশাসন
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা নতুন চরের নাম পরিবর্তন, জানে না প্রশাসন

পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বুকে জেগে ওঠা নতুন চর 'চর বিজয়'র নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে চরে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিতে যে সাইনবোর্ড লাগানো হয় তাতে চরটিকে 'ভিক্টোরি আইল্যান্ড' নাম দেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৭ সাল থেকে চর বিজয় নামে পরিচিতি পাওয়া এই চরের নাম পরবর্তন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে চরের নাম পরিবর্তন হলে সরকারের পক্ষে চরের মালিক জেলা কালেক্টরেট হিসেবে জেলা প্রশাসক এ বিষয় কিছুই জানেন না।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের গঙ্গামতী থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে ওঠা মনোমুগ্ধকর এক দ্বীপ চর বিজয়। দ্বীপটির আয়তন আনুমানিক ৫ হাজার একর। লাল কাঁকড়া আর হাজারো অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে থাকে দ্বীপটি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে 'চর বিজয়' নামে এ চরের নামকরণ হয়, যা স্থানীয়দের কাছে হাইরের চর নামেও পরিচিত।

1

বছরের ৬ মাস জেগে থাকে এ চরে মূলত জেলেদের অস্থায়ী বসবাস। চর বিজয়ের চারপাশে জেলেরা মাছ শিকার করেন। তারা তিন মাসের জন্য চরে অস্থায়ী আবাস তৈরি করে শুঁটকি প্রস্তুত ও বিক্রি করেন। কুয়াকাটা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় এই অনিন্দ সুন্দর বিজয় দ্বীপে পৌঁছানো যায়।

উইকিপিডিয়া তথ্য বলছে, চর বিজয় বাংলাদেশের অধিভুক্ত বঙ্গোপসাগরের তট হতে বিচ্ছিন্ন একটি ছোট দ্বীপ। স্থানীয় জেলেদের কাছে হাইরের চর নামে পরিচিত। আয়তনে প্রায় ৫ হাজার একর যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা হতে ৩৫-৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে সমুদ্রের গভীরে এর অবস্থান। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্থানীয় জেলা প্রশাসক দ্বীপটির মালিকানা ঘোষণা করেন এবং সরকারের নির্দেশে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। জেলেদের কাছে পরিচিত 'হাইরের চর' ২০১৭ সালে সাগরে ভ্রমণরত কয়েকজন উৎসাহী পর্যটকের নজরে আসে এবং তাদের উৎসাহে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র দ্বীপটি পরিদর্শনে যান। তখন এ দ্বীপটির নামকরণ করা হয় চর বিজয়।

উপকূলীয় এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা ও পরিবেশ প্রতিবেশ নিয়ে কাজ করা গণমাধ্যম কর্মী আরিফ রহমান তার ফেইসবুকে লিখেছেন, 'কি জন্য ব্র্যান্ডিং করেছিলাম চর বিজয়কে। আমাদের জন্য না দেশের জন্য, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেলাম দেশের পর্যটন খাতের জন্য। কিছু আমলা অল্প কয়েক দিনের জন্য আমাদের এলাকায় দায়িত্ব থাকা অবস্থায় অনেক কিছু পরিবর্তন করতে চায়, এটা ঠিক নয়। এ কুচক্র মহলকে আমরা দেশের দায়িত্ব দেইনি। আমরা যদি এক হয়ে থাকি, আসুন চর বিজয়ের নাম পরিবর্তন করতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য যদি রক্ত দিতে হয়, আন্দোলন করতে হয় আমরা এগিয়ে যাব।'

কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও টু্যর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা'র সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার তার ফেইসবুকে লিখেছেন, 'সম্প্রতি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের উদ্যোগে তিন প্রজাতির ৮ শতাধিক গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্পট চর বিজয়, যা প্রশংসনীয় কাজ। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভূমি, কলাপাড়া প্রেস ক্লাব সভাপতিসহ পর্যটন কর্মী ও সংবাদকর্মীরা। কর্মসূচিতে ব্যানার সাইনবোর্ডে ভিক্টোরি আইল্যান্ড দেখে অনেকেই ভাবছেন এটা আবার নতুন কোনো চর জেগেছে কিনা। পরবর্তীতে স্থানীয় ও পর্যটকরা চর বিজয়ই ভিক্টোরি আইল্যান্ড নাম নিশ্চিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ও মন্তব্য করছেন এমনটা চোখে পড়েছে। জানি না এ নামটি পরিবর্তনে সরকারি কোনো নির্দেশনা আসছে কিনা। যদি এসেও থাকে তবুও বলব নামটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বা তাদের দলের কেউ রাখেনি। আমার জানা মতে স্থানীয় কয়েকজন পর্যটন ব্যবসায়ী, মসজিদের খতিব ও কয়েকজন পর্যটক বিজয়ের মাসে এ নামটি রেখেছে। তাছাড়া বিজয় নামটি আওয়ামী লীগের নিজস্ব নাম না। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।'

একইভাবে ফেইসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চর বিজয়ের ব্রান্ডিং নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক হোসাইন আমির।

এদিকে চর বিজয়ের নাম পরিবর্তন নিয়ে নানা মহলে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হলেও নাম পরবর্তন কিংবা এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কিছুই জানেন না। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।'

তবে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, 'এটি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের একটি কর্মসূচি ছিল। মূলত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কৌশলগত কারণে চর বিজয়ের নাম বাংলা থেকে ইংরেজি করা হয়েছে। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে