বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন বাড়ছে ঝুঁকি!

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিনদিন বাড়ছে ঝুঁকি!
রাজধানী ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু -যাযাদি

রাজধানী ঢাকার বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু (বাবুবাজার সেতু) এখন পুরো অরক্ষিত। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে দ্রম্নত সেতুটি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন স্থাপত্যবিদরা।

বাবুবাজার সেতু রক্ষণাবেক্ষণে এ মুহূর্তে যেটি বেশি প্রয়োজন, তা হলো ওজন পরিমাপক যন্ত্র। সেটি না বসানোয় এ সেতু দিয়ে অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ি চলাচল করছে প্রতিনিয়ত, যা সেতুটি গার্ডারকে ক্রমেই ঝুঁকিগ্রস্ত করছে। এছাড়া সেতুর উপরে থাকা সড়ক বাতিগুলোও ঠিকমতো জ্বলে না। নিয়মিত দেখভালের অভাবে যেন নতজানু হয়ে পড়েছে সেতুটি!

1

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে প্রবেশ করার জন্য বুড়িগঙ্গার উপর ৩টি সেতু থাকলেও পুরান ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কেরানীঞ্জবাসীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু। এমনকি সড়ক পথে ঢাকার গুলিস্তান থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের সেতু দিয়ে চলাচলের পথ এটি। অথচ এখন সেতুটি দেখভালের কেউ নেই। বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুটি ঢাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন হওয়ায় সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব তাদেরই। তবে স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সেতুটিতে কোন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি। যার ফলে আগানগর ও বাবুবাজার এলাকায় কয়েকটি গার্ডার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির মধ্যবর্তী প্রতিটি সংযোগস্থলে জন্মেছে বটবৃক্ষ। কোথাও কোথাও বটগাছের শেকড় বের হয়ে ঝুলে নদী পর্যন্ত নেমে গেছে। এ ছাড়া সেতুর পিলার রক্ষার জন্য প্রতিটি পিলারের দুইপাশে লোহার আলাদা করে খুঁটির উপরে লাল বাতি (রাতের বেলায় সেতুর পিলারের অবস্থান চিহ্নিতকরণের বাতি) থাকার কথা থাকলেও তা নেই।

দুই পাড়ের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০১ সালে উদ্বোধন করা হয় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুটি। এরপর ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে সেতুটি টোলমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেতুর উত্তর প্রান্তে নায়াবাজার এলাকায় রয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড এবং মধ্যবর্তী স্থানে বাবুবাজার এলাকায় অটোভ্যান ও মাওয়াগামী বিভিন্ন পরিবহণের বাস স্ট্যান্ড। এতে প্রতিনিয়ত সেতুতে লেগে থাকে যানজট। রাতে সেতুর উপরে সারিবদ্ধভাবে অবৈধ গাড়ি পার্কিংতো রয়েছেই। আগানগর ব্রিজ ঘাটের নৌকা মাঝি মিজান মোলস্ন্যা জানান, তিনি এ ঘাটে প্রায় ৩০ বছর ধরে নৌকা চালান। ব্রিজ নির্মাণের পর কয়েক বছর ব্রিজের পিলারের সঙ্গে পিলার রক্ষাকারী লোহার খুঁটি ঠিকই ছিল। এরপর আস্তে আস্তে নৌযানের ধাক্কায় সেগুলো ভেঙে গেলে লোকজন সেগুলো খুলে নিয়ে যায়।

জিনজিরা এলাকার বাসিন্দা মিরাজ আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে সেতুর সংযোগস্থলে বটগাছ জন্মে গেছে। বটগাছের শেকড় বড় হয়ে নদী পর্যন্ত নেমে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গাছের শেকড় সেতুর ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে। এতে ব্রিজটির স্থায়ীত্ব কমে যাবে।

রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, সেতুতে ঝুলে থাকা সংযোগস্থলের বটগাছ ও আগাছা অতিদ্রম্নত পরিস্কার করা হবে। এ ছাড়া সেতুর ওপর দিয়ে অবাধে চলছে ভারী মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। সেতুর কোনো পাশেই নিরাপত্তারক্ষী নেই এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেতুর প্রবেশমুখে ওজন পরিমাপক যন্ত্র স্থাপনের কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য ও পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর ড. শায়ের গফুর ও সহকারী অধ্যাপক ড. আসমা নাজ বলেন, সেতুসহ যে কোনো স্থাপত্যশৈলীর ওজন বা চাপ সহনশীলতার একটি ব্যাপার থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে দেশের অন্যতম মেঘনা সেতুতে। এ সেতুতে ওজন পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় বাবুবাজার সেতুর রক্ষণব্যবস্থা সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ফলে এ সেতু দিয়ে সহনীয় ওজনের চেয়ে অনেক বেশি মালবোঝাই গাড়ি চলাচল করে। এ সব গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় লোকবল থাকলেও ওজন পরিমাপক যন্ত্রের অভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে