বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
দাম বৃদ্ধিতে দুপচাঁচিয়ায় বেড়েছে আলুচাষ

পলাশে প্রথমবারে মতো পস্নাস্টিক ট্রেতে বোরো ধানের চারা তৈরি

স্বদেশ ডেস্ক
  ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পলাশে প্রথমবারে মতো পস্নাস্টিক ট্রেতে বোরো ধানের চারা তৈরি
পলাশে প্রথমবারে মতো পস্নাস্টিক ট্রেতে বোরো ধানের চারা তৈরি

নরসিংদীর পলাশে প্রথমবারের মতো পস্নাস্টিক ট্রেতে বোরো ধানের চারা তৈরি করেছেন কৃষকরা। এতে খরচ কমসহ বিভিন্নভাবে লঅভবান হচ্ছেন তারা। অন্যদিকে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দাম ভালো পাওয়ায় এবার আলু চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নরসিংদীর পলাশে প্রথমবারের মতো আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষের জন্য ট্রে পদ্ধতিতে (পস্নাস্টিকের ফ্রেম) উচ্চ ফলনশীল উফশি জাতের বোরো ধান ব্রি ধান-৯২ এর চারা উৎপাদন করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নোয়াকান্দা গ্রামের মাঠে সমলয় পদ্ধতিতে ১৫০ বিঘা জমিতে এ উফশি জাতের ধান রোপণ করা হবে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন ও কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

1

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়া থেকে সহজে বীজতলা রক্ষায় ট্রে পদ্ধতি সহায়ক বলছে কৃষি বিভাগ। এ পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেকবেশি কাজ করে। এ গুলো পরিচালনার জন্য জনবল লাগে কম।

এ বছর প্রথম পলাশের নোয়াকান্দা গ্রামের ১২০ জন কৃষকের একটি গ্রম্নপ করে নতুন পদ্ধতিতে কৃষক ফারুক মিয়ার ৪৫ শতাংশ জমিতে এ বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। মোট ৪ হাজার ৫০০টি ট্রেতে উফশি জাতের বোরো ধানের বীজ বপণ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপণের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারাই প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে বোরো ধানের বীজ ফেলতে প্রতিটি পস্নাস্টিক ট্রেতে ১ ইঞ্চি স্তরের মাটি দিয়ে বীজ বপণ করা হয়। মাঠে এবং ট্রেতে বীজতলা তৈরি পদ্ধতি একই। তবে ট্রেতে লাগানো ধান বীজ চারা শতভাগ উৎপাদন হয়। ট্রেতে উৎপাদিত চারা রাইস ট্রান্সপস্নান্টার (ধান রোপণ করা মেশিন) দিয়ে মাঠে রোপণ করা হবে। চারা রোপণ থেকে ধান কাটা, ধান মাড়াই সবই হয় মেশিনের সাহায্যে। এতে সময় লাগে খুবই কম এবং নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ সম্ভব হয়।

পস্নাস্টিক ট্রেতে প্রথম এবার পরীক্ষামূলকভাবে ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এতে ভালো ফলও পাওয়া গেছে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতির ধানের চারা মাঠে বপণ করা হবে। সাধারণত বৈরী আবহাওয়া হলে মাঠে বীজতলা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্ ট্রেতে করা বীজতলা সহজেই প্রচন্ড শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায়। ট্রেগুলো রাতে পস্নাস্টিকের সিট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আধা মিলিমিটার থেকে এক মিলিমিটার বড় হলেই মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনে এসব চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত হয়। পরে এ গুলো রাইস ট্রান্সপস্নান্টার দিয়ে ওই ১২০ জন কৃষকের মোট ১৫০ বিঘা জমিতে বপণ করা হবে। এটা কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে চাষাবাদ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের সময় ও খরচ বেচে যায় অনেকাংশে।

ফারুক মিয়া, রহিম উদ্দিন ও মোখলেছুর রহমাহসহ একাধিক কৃষক জানান, উপজেলা 'কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমরা এবার প্রথম এ পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন করেছি এবং মেশিনের মাধ্যমে এ চারা জমিতে রোপণ করা হবে। আর এ ১৫০ বিঘা জমির চারা ও জমিতে রোপণ বাবদ আমাদের শুধু সেচ ও চাষের খরচ দিতে হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিগত এ চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে এলাকার অন্য কৃষকদের মধ্যেও। প্রতিদিনই নতুন নতুন কৃষক ট্রে পদ্ধতির এই চারা রোপণ দেখতে ছুটে আসছেন সমলয়ের এই প্রদর্শনীতে।

পলাশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার জানান, 'এ প্রযুক্তি ব্যবহারে এক দিকে যেমন কৃষকের খরচ কমবে, একই সঙ্গে ধানের ফলনও কয়েক জুন বাড়বে। সমলয় পদ্ধতির এ চাষাবাদে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি আমরা। তাছাড়া কৃষকদের যন্ত্রের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য এ সমলয় করা হয় এবং একসঙ্গে অনেক কৃষক এ সমলয় করতে পারেন।

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় এবার ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। গত বছর উফসী জাতের আলু বিঘা প্রতি প্রায় একশ' মণ ও স্থানীয় জাতের আলু বিঘা প্রতি প্রায় ৬০ মণ হারে উৎপাদন হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার আলু চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন চাষিরা। সে অনুপাতে আলুর জমির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এবার ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফসী জাতের আলী ৪ হাজার ৫শ' হেক্টর ও স্থানীয় জাতের আলু এক হাজার ১৫০ হেক্টর। এবার চাষিরা দাম ভালো পাওয়ায় গতবারের চেয়ে আলু চাষে বেশি আগ্রহী। গত বছর ৪হাজার ৭শ' হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। এবার অনেক চাষি বেশি আদ্রতাযুক্ত জমিতেও আলু চাষ করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর যে জমি আলু চাষে কিছুটা অনুপযোগি ও পতিত ছিল, দাম বেশি পাওয়ায় এবার ওই সব জমিতেও চাষিরা আলু চাষ করেছেন। উপজেলার নওদাপাড়া গ্রামের আলু চাষি আমিনুর ইসলাম ও দেবখন্ডগ্রামের আলু চাষি আব্দুল মান্নান জানান, গত বছর আলু চাষ করে ফলন আশানুরূপ ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার আরও দুই বিঘা বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাজেদুল আলম বলেন, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় গতবছর চাষিরা বেশ লাভবান হয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৯৫০ হেক্টও বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে চাষিদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আলু চাষের প্রয়োজনীয় সার সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও আলুর উৎপাদন ভালো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে