বন্যা থেকে হবিগঞ্জ শহর রক্ষার জন্য কেটে দেওয়া খোয়াই নদীর বাঁধ চার মাসেও মেরামত হয়নি। ভাঙন দুইদিকে বিস্তৃত হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে সামনের বোরো মৌসুমে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা বাঁধের ভাঙন প্রায় ২০০ ফুট প্রশস্থ হয়েছে। দুইদিক থেকে লোকজন ডিঙি নৌকা ও টিনের নৌকায় রশি টেনে পারাপার হচ্ছেন। জায়গাটি পার হতে সময় ব্যয় হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ মিনিটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত আগস্টের বন্যায় খোয়াই নদীতে পানি বেড়ে হবিগঞ্জ শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। তখন জালালাবাদের দিকে নদীর বাঁধ প্রায় ২০ ফুট জায়গা কেটে দেওয়া হয় নদীতে পানির চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে।
বাঁধ ভেঙে দেওয়ার পরদিনই হবিগঞ্জ শহর অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হয়। কিন্তু বন্যা মোকাবিলার চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও বাঁধের ভাঙা স্থানটি মেরামত করা হয়নি। বাঁধে নির্মিত পাকা সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়ক দিয়ে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া ও রিচি এবং লাখাই উপজেলার করাব ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ চলাচল করে। পাশের জেলা কিশোরগঞ্জেরও কিছু লোকের এদিকে আসা-যাওয়া।
আর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর, চানপুর, গোপালপুর, মথুরানগর, জয়নগর, ইসলামপুর ও যাদবপুরসহ অনেক গ্রামের লোকদের শহরে আসার একমাত্র রাস্তা এটি। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে ভাঙন পর্যন্ত গিয়ে বাকি পথ হেঁটে চলাচল করতে হচ্ছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণ বন্ধ রয়েছে।
গতকাল গাছ থেকে পড়ে হাতে ব্যাথা পাওয়া শিশু সন্তানকে নিয়ে জেলা সদরে যাচ্ছিলেন গোপালপুরের ইকরাম আলী। রোগী নিয়ে ডিঙি নৌকায় পার হতে তার ৩০ মিনিট সময় লাগে। পরে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, 'ছেলেটা ভাঙা হাতের ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে অন্য সময়ের তুলনায় অন্তত ১ ঘন্টা সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। ছেলেটার কান্নায় নিজের চোখের পানিও ধরে রাখতে পারতেছি না।'
এ দিকে, ভাঙা স্থানটি মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে কয়েকজন জানান। এ নিয়ে গ্রামবাসীর কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে।
রিচি গ্রামের জিতু মিয়া বলেন, বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করার আগে হাওড়ে বোরো চাষ করা উচিৎ হবে না। কারণ নদীর সাথে হাওরের সরাসরি যোগাযোগ থাকায় বর্ষার শুরুতেই পুরো হাওর পস্নাবিত হয়ে পড়বে। এতে হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা এ ব্যাপারে যায়যায়দিনকে বলেন, 'বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করার জন্য নকশা প্রণয়ন হচ্ছে। দরপত্র আহবান করে আগামী এক মাসের মধ্যেই মেরামত কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।'
তিনি আরও দাবি করেন, বন্যা থেকে শহর রক্ষার জন্য বাঁধ কেটে দেওয়া হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেই স্থানটি ভেঙে গিয়েছিল।