রাজশাহীর চারঘাটে গড়ে উঠেছে ১০টি ইট ভাটা। এই ১০ ভার মধ্যে ৯টিরই নেই বৈধ কাগজপত্র। এদিকে, এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছেন উপজেলার সর্বস্তরের জনগন। অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর হুশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষুব্ধ জনতা জানিয়েছেন, উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগের পরেও ইটভাটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা না রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ফসলি জমি ও জনবসতিপুর্ণ এলাকায় একের পর এক ইটভাটা গড়ে উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। ফলে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা আজ চারঘাটের সর্বস্তরের মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সোমবার উপজেলা প্রশাসনের সামনে শত শত জনতা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারী দেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যোগসাজসে একে একে চারঘাটে গড়ে উঠেছে ১০টি ইটভাটা। যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র একটির। বাকি ৯টিরই নেই কোনো ধরনের কাগজপত্র। এ সব ইটভাটা মালিক সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চারঘাটের সর্বস্তরের জনতার বাধাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আতাত করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। অবৈধ ভাটা বন্ধে এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্টদের। লোক দেখানো দুই-একটি অভিযান হলেও মাত্র কয়েক হাজার টাকার আর্থিক জরিমানার মধ্যেই অভিযান সমাপ্ত হয়। ফলে প্রশাসনের এমন লোক দেখানো অভিযানে বন্ধ হয়নি একটিও ইটভাটা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের অভিযানের পর পরই তাদের অনুমতি নিয়েই আবারো ইটভাটা পরিচালিত করেন ইটভাটা মালিক। এতে করে প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযানে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ফসলি জমির মাটি ও বাগানের গাছ উজাড় করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এতে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ, বাড়ছে রোগবালাই। পাশাপাশি বিনষ্ট হচ্ছে সরকারি রাস্তা, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। ভয়াবহ বায়ুদূষণকারী ইটভাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের রোগবালাই। ভাটার আশপাশে বসবাস করা বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্ট থেকে মরণঘাতী রোগ দানা বাঁধছে। অন্যদিকে, ইটভাটাকে পুঁজি করে মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তাতে একদিকে কমছে ফসলি জমি, অন্যদিকে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অথবা নদীর তীরে পতিত দেড় একর ভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সরকারি সড়ক দিয়ে নয়, বরং ইটভাটার নিজস্ব রাস্তা দিয়ে চলবে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর। অথচ বাস্তবতার সঙ্গে কোনো কিছুই মানছেন না ভাটা মালিকরা। মাটি বহনের ট্রাক্টরগুলো পাকা সড়কে নিয়মিত চলাচল করছে। এতে জনসাধারণ ধুলাবালিতে ভোগান্তিসহ যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জমি যেভাবে তার উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছে, সে হিসেবে মাটি পুড়িয়ে ইট বানানো বন্ধ না করলে ২০৪০ সালে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে। ইটভাটার নির্গত সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ি। এতে ফসলের হানি ঘটছে ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
চারঘাট ইউএনও সানজিদা সুলতানা বলেন, দ্রম্নত সময়ের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার পরিদর্শক নীল রতন কুমার বলেন, চারঘাটে ১০টি ভাটার মধ্যে একটি ভাটার আপডেট কাগজপত্র আছে। বাকিগুলোর কোন কাগজপত্র নেই। তবে সিলগালা ভাটা মালিক মাজদার রহমান সিলগালার পরেও ভাটা চালু করায় তার ভাটাসহ অবৈধ ভাটায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।