শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হতে পারে ৭শ' হেক্টর জমির আবাদ

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতায় ব্যাহত হতে পারে ৭শ' হেক্টর জমির আবাদ
খুলনার ডুমুরিয়ায় বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক -যাযাদি

খুলনার ডুমুরিয়ায় ইরি-বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ২১ হাজার ৮শ' হেক্টর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭শ' হেক্টর জমির বোরো চাষ ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাতে বরাবরই বোরো চাষে বিরল ভুমিকা বহন করে আসছে এযাবতকাল। গত মৌসুমে ১লাখ ১ হাজার ৮০১ মে.টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু গেলো বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষনের ফলে এবং পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৫টি ইউনিয়নে অধিকাংশ এলাকা পস্নাবিত হয়ে পড়ে। কৃষি ভূমির উপর প্রায় ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত বা কোথাও কোথাও তার থেকেও বেশি পানি জমে যায়। পস্নাবিত এলাকার মধ্যে ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নে মির্জাপুর বিলে ৩৪৫ হেক্টর, খলসী বিলে ৫০০ হেক্টর, রংপুর ইউনিয়নের রংপুর, বটবেড়া ও শলয়া বস্নকে ১ হাজার ৬৪০ হেক্টর, রঘুনাথপুর ইউনিয়নে কোমরাইল, শাহপুর ও থুকড়া বস্নকে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর, খর্ণিয়া ইউনিয়নে ৪২০ হেক্টর, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে বেতাগ্রাম, ঘোষড়া ও কাঞ্চনপুর বস্নকে প্রায় ১ হাজার ২৪০ হেক্টর, আটলিয়া ইউনিয়নে বরাতিয়া ৩৪০ হেক্টর এবং গুটুদিয়া ইউনিয়নে বিলপাবলা, কুলটি ও গুটুদিয়া বস্নকে ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি রয়েছে। যা ভয়াবহভাবে পস্নাবিত হয়ে পড়ে।

1

শোলমারি ১০ ভেন্টের স্স্নুইচ গেটসহ চহেড়া গেট, নরনিয়া, ষষ্টিতলা স্স্নুইজ গেটের মুখে পলি পড়ায় গেটগুলো অকেজো হওয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও বিএডিসির সার্বিক সহায়তায় দ্রম্নত পানি নিষ্কাশনের কার্যক্রম শুরু হয়। দ্রম্নত বোরো চাষের উপযোগি করতে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ৪টি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১০টি সেচ পাম্প স্থাপন করে। খুলনা পওর-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহা. আল-আমিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শোলমারি ১০ ভেন্ট রেগুলেটর মুখে পলি অপসারণ পূর্বক পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে বিলডাকাতিয়াসহ রংপুরের পানি দ্রম্নত নিষ্কাশনের জন্য আরো ৩টি স্স্নুইজ গেট খুলে ময়ুর নদী দিয়ে বের করা হয়। তবে বিলডাকাতিয়া ও রংপুর এলাকায় এখনো বোরো চাষের উপযোগি হয়নি।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, গত বোরো মৌসুমে ২১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছিল। তবে চলতি মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে ৫০০ থেকে ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলার দক্ষিনাঞ্চলভাগে বোরো আবাদে কোন ধরণের বেঘাত ঘটবে না।

গুটুদিয়া বিলের কৃষক শ্মশান মন্ডল জানান, বর্ষার সময় তার জমির উপর ৭-৮ ফুট পানি ছিল। এখনো ৪ফুট পানি আছে। বীজতলা করা হয়ে গেছে। তিনি আশা করছেন পানি কমলেই রোপনের কাজ শুরু করবে। ঘোষড়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান তার উঁচু জমিতে বোরো ধান রোয়া শুরু করেছে। একই এলাকার এজার গাজী জানান, 'আমাদের বিলে পানি এখনো থৈথৈ করছে। কিভাবে জমিতে এবার ধান করবো তা বুঝতে পারছিনে। তবুও পাতা ফেলাইছি। যদি জমিতে ধান লাগাতে না পারলে সবজি ক্ষেতে লাগাবো সেই চিন্তাভাবনা নিয়েছি।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, 'এ বছর যে জলাবদ্ধতা হয়েছিল ডুমুরিয়াতে, দীর্ঘদিন পরে আমরা একটা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিন হয়েছিলাম। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে আমাদের কষ্টের ফলে আজকে কৃষকরা তাদের জমিতে ধান লাগাতে পারছেন। আমাদের পেশাগত দায়িত্বপালনের অংশ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসিসহ সবাইকে নিয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ করেছি। আর এটা থেকে আমরা একটা জিনিস শিখলাম যে, সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি তাহলে যত বড়ই সমস্যাই হোক না কেন তা থেকে উত্তরণের সম্ভব।' তিনি কৃতজ্ঞাসহ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ যেসমস্ত মানুষ স্বেচ্ছায় পানি নিষ্কাশন কাজে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাদের প্রতি। সবাইকে ডুমুরিয়ার উন্নয়নে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে