শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোপালগঞ্জের ব্রিজ নির্মাণ হলেও নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ হয়নি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গোপালগঞ্জের ব্রিজ নির্মাণ হলেও নদীর সঙ্গে খালের সংযোগ হয়নি
গোপালগঞ্জে মধুমতির সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করতে বেদভীটা খালের উপর নির্মাণ করা ব্রিজ -যাযাদি

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের বদ্ধখালটি (বেদভীটা খাল) মধুমতির সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করতে পার্শ্ববর্তী টেকেরহাট-হরিদাশপুর-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে ওই খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবুও সংযোগ হয়নি নদীর সঙ্গে খালের। যে কারণে এ বোরো মৌসুমেও খালটি কৃষকের কৃষি কাজের কোন উপকারে আসছে না। স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার কৃষকরা বেদভীটা খালের মুখে সাতপাড় বাজারে খালের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি নদীর সংযোগ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের বেদভীটা খাল কুমার মধুমতি (এমবিআর চ্যানেল) নদীর সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টির যৌথ উদ্যেঠস নেয় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সড়ক বিভাগ। জেলা প্রশাসনের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ নির্মাণাধীন টেকেরহাট-হরিদাশপুর-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতপাড় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বেদভীটা খালের উপর একটি ব্রিজ এবং ওই খালের নদীমুখে সাতপাড় বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বোটপাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সড়ক বিভাগ ইতিমধ্যে ব্রিজ নির্মাণ করেছে।

1

ওই ব্রিজটির ৩শ' মিটার সামনে নদীমুখে বোটপাস নির্মাণের জন্য গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনা হাতে নিলেও এখন পর্যন্ত সে পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। এতে করে খালটির নদীমুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ থাকার পরও গোপালগঞ্জে কুমার মধুমতি নদীর সঙ্গে বেদভীটা খালের সংযোগ হচ্ছে না। অথচ এই খালটি নদীর সঙ্গে সংযোগ হলে নদীর পানি বেদভীটা খাল দিয়ে সাতপাড়, বেদভীটা, আড়ুয়াকান্দি, কলপুর, নটাখোলা, পুকুরিয়া, আমগ্রাম খাল হয়ে কোটালীপাড়ার বিল এলাকায় প্রবেশ করত। ব্যাপক লাভবান হতেন এসব এলাকার কৃষকরা। তাদের কৃষি জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন হতো, জেলের আরও বেশি মাছ আহরণ করতে পারতেন, দিনমজুররা শাপলা, শামুক, সবজি আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগ টেকেরহাট-হরিদাশপুর-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় প্রায় দেড়কোটি টাকা ব্যয়ে সাতপাড় বাসষ্টান্ড সংলগ্ন বেদভীটা খালের উপর তিন ভেন্টের সাড়ে ১২ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এরই প্রায় ৩শ' মিটার সামনে নদীর মুখে একটি বোটপাস নির্মাণ করার কথা ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের। যেখানে রয়েছে সাতপাড় বাজারের প্রায় ৩০টি অবৈধ স্থাপনা। নদীর মুখে বোটপাস নির্মাণ বা পানি প্রবেশ করাতে প্রথমে এইসব অবৈধ স্থপনা অপসারণ করতে হবে। এবং প্রাথমিকভাবে বাজারের দোকানী ও ক্রেতাদের চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে নদীর মুখে খাল কাটতে হবে।

স্থানীয় সাতপাড় ইউনিয়নের কৃষক আসিত মন্ডল (৫০), ভুবন বিশ্বাস (৭২), প্রমোদ বিশ্বাস (৬৫), ফটিক বিশ্বাস (৬৮), দীলিপ মন্ডল (৬০), মৃনাল বিশ্বাস (৬৫) বলেন, 'পানির অভাবে আমাদের এলাকার কৃষি জামিতে চাষাবাদ করতে কষ্ট হয়। কিছু জমিতে গভীর স্যালোমেশিন বসিয়ে বোরো আবাদ করেন। বেশিরভাগ জমিই অনাবাদি থাতে। জলাবদ্ধতার কারনে অনেক জমিতে চৈত্রমাসেও মাটির দেখা মেলে না। নদীর সঙ্গে বেদভীটা খালের সংযোগ হলে আমাদের অনেক উপকার হবে।'

স্থানীয় সাতপাড় ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশিক কীর্ত্তনীয়া বলেন, 'বেদভীটা খাল নদীর সঙ্গে সংযোগ হলে সাতপাড়, কদমবাড়ি, কলাবাড়ি ইউনিয়নের ১৫ হাজার হেক্টর অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ করে এই এলাকার ৪০ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা ছিল বেদভীটা খাল নদীর সঙ্গে সংযোগ করার। সে অনুযায়ী তারা জরিপও করেছিল। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোন উদ্যোগ আমরা দেখছি না। আমাদের দাবি বেদভীটা খালটি দ্রম্নত নদীর সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করে এলাকার কৃষকদের কৃষি উৎপাদান বৃদ্ধি করা হোক।'

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল হক বলেছেন, বেদভীটা খালের আওতাধীন স্থানীয় কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এরপর অনুমোদন সাপেক্ষে টেকেরহাট-হরিদাশপুর-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় সাতপাড় বাসস্ট্যান্ডে বেদভীটা খাল মুখে একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাজারের কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীমূখে সংযোগ দিলে এলাকার কৃষকরা সুফল পাবে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল বলেন, 'আমার জানামতে বেদভীটা খালটির মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। নদীমুখে পুরনো স্ট্রাকচারও রয়েছে। এলাকার কৃষকদের যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে খালটি নদীর সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। গোপালগঞ্জে পাউবোর একটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পে আমরা রিভাউজ করার জন্য আবেদন করব। অনুমোদন পেলে বেদভীটা খাল নদীর সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করতে পারব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে