শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক
শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক

তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপক্ষো করেই জমি তৈরি করে তাতে বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কৃষকরা। কৃষকদের আশা, আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার তারা বোরো ধানের বাম্পার ফলন পাবেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গেল বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে ধানের দাম বেশি। তাই কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ইরি-বোরো ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। ফলে উপজেলার গ্রামাঞ্চল কিংবা পৌরসভার আবাদী ও অনাবাদী জমিতে ব্যাপকহারে বোরো ধান চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

এ দিকে শ্যালো মেশিন কিংবা পাম্পের সাহায্যে জমিতে পানি দিয়ে ধান রোপণের জন্য জমি উপযোগী করে তুলছেন বেশিরভাগ কৃষক। লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ পদ্ধতি এখন আর চোখে পড়ে না। অধিকাংশ জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা ও বীজতলা থেকে ধানের চারা উত্তোলন করে জমিতে রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তবে সারা দেশে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান আবাদ বাড়ছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমি। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে উপজেলার জিনারী, পুমদি, শাহেদল, গোবিন্দপুর, আড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে দেখা যায় ইরি-বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। জিনারী ইউনিয়নের চর কাটিহারী, চর হাজিপুর সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর, চর বিশ্বনাথপুর গ্রামে পুরোদমে বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে।

এ সময় স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জমিতে তারা বিনা ৭ ও ৮, হাইব্রিড বিধান ৭, ২৮, ২৯, ৪৯, ৫২, বায়ার কোম্পানির ধানী গোল্ড, তেজ ও পেট্রোকেম কোম্পানির পাইওনিয়ার এগ্রো-১২ জাতের ধান রোপণ করছেন। অনেক কৃষক শ্রমিকের সঙ্গে নিজেও বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত রয়েছেন। উপজেলার জামাইল গ্রামের কৃষক নবী হোসেনসহ অনেকেই জানান, এবার বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ডেপ, ১২ কেজি পটাস, ৫ কেজি জিপসাম এবং ৫ থেকে ৭ ভ্যান গোবর সার মিশিয়ে জমিতে পানি দিয়ে কাদা তৈরি করছেন তারা। পরে বীজতলা থেকে চারা এনে সেই জমিতে রোপণ করছেন। এরই মধ্যে উপজেলায় প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, বোরো ধান রোপণের শুরু থেকে কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ দিন। কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বোরো চাষিদের খরচ হয় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। গেলো মৌসুমে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবারও আশায় আছেন চাষিরা।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম সাহজাহান কবির জানান, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বোরো চাষে চরাঞ্চলের কৃষকরা বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। তবে এ বছর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রোপণ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের হাওড় অধু্যষিত তাহিরপুর উপজেলার প্রধান ফসল বোরো ধান আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। প্রতিদিনই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌষের শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদের কাজে ব্যস্ত প্রতিটি কৃষক পরিবার। তবে সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধির কারণে চাষাবাদ করতে গিয়ে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। একাধিক কৃষক জানান, চলতি বছর শ্রমিক সংকটের কারনে শ্রমকি মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া এখনো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় বোরো আবাদ নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার ২৩টি ছোট বড় হাওড়ে ১৭ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতই বেশি।

উপজেলার বিভিন্ন হাওড় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা বীজতলা থেকে বোরো ধানের চারা উত্তোলন করে জমিতে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ চারা রোপণের জন্য মই দিয়ে উঁচু নিচু জমি সমান করছেন। অনেকে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করছেন। অনেকে দলবেধে জমিতে চারা রোপণ করছেন। আবার অনেকে জমিতে সার কীটনাশক দিচ্ছেন।

উপজেলার শনি হাওড় পার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের কৃষক হারুনর রশিদ বলেন, বোরো আবাদ চলছে। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবারের চাষাবাদ ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, গত বছর শ্রমিক মজুরী ছিলো ৫শ' থেকে ৫৫০ টাকা। বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭শ' থেকে ৭৫০ টাকা। সেই সঙ্গে সেচ খরচ, সার, বীজ, কীটনাশক তো রয়েছেই।

উপজেলা কৃষি অফিস উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীমা বেগম বলেন, বোরো আবাদ চলমান রয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আবাদ শেষ হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফুল ইসলাম বলেন, বোরো চাষাবাদে এখনো কোনো সমস্যা নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন।

লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, লাখাইয়ের হাওড়জুড়ে ইরিবোরো ধানের চারা রোপণের ধুম পড়েছে। আমন ধান উত্তোলন শেষে কৃষকরা বিস্তীর্ণ হাওড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো চারা রোপণে।

সারা বছরের খাদ্যঘটতি পুরণের অন্যতম সহায়ক এই ইরি বোরো ফসল। ফলে তীব্র হিমেল হাওয়া আর শিশির ভেজা ঘনকুয়া মাড়িয়ে উপজেলার ৬ ইউনিয়নের কৃষক জমির পরিচর্চা আর চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ১১ হাজার ২০৮ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হবে ৬হাজার ৭০৫ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল উপসী ৪ হাজার ৪৯৮ এবং স্থানীয় জাতের বীজ আবাদ হবে ৫ হেক্টরে। এ লক্ষে বীজতলা তৈরি হয়েছে ৪৯৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও হাইব্রিড হীরা, এসএল ৮. ব্র্যাক ৩, শক্তি ১, সুরভী ১ আবাদের তালিকায় রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মিজান জানান, কৃষকদের উৎসাহি করতে এবং কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনে ৩ হাজার ৭শ' কৃষককে প্রনোদনা হিসাবে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। সে সঙ্গে ইরিবোরো আবাদে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।

পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ৫ ইউনিয়নে এবার আমন ধানের ফলন ও দাম ভালো পেয়ে নতুন উদ্যোমে বোরো আবাদের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের মত বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিযুষ কান্তি পাল জানান, আসন্ন বোরো মৌসুমে সরুলিয়া ইউনিয়নে আনুমানিক ১২৫০-১৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরে কৃষকরা বোরো আবাদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। থানার সরুলিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, চারা রোপণের জন্য উপযোগী হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বোরো ধান রোপণ শুরু হবে। অনেক কৃষক চারা রোপণ শেষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর লোকসান গুনতে হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে