শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মামাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকের শিক্ষক!

মনিরুজ্জামান লেবু, জলঢাকা (নীলফামারী)
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মামাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকের শিক্ষক!

নীলফামারীর জলঢাকায় মামাকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করছেন এক ভাগনি। বাবা এবং মামার নাম একই হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জালিয়াতি করে চাকরি নেন সেলিনা আক্তার নামে ওই শিক্ষিকা। ইতিমধ্যে সেই চাকরির বয়সও ১২ বছর অতিক্রম করেছে। তিনি বর্তমানে পৌরশহরের আমরুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন। অনুসন্ধানে এমনি তথ্য হাতে এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে।

জানা যায়,২০১২ সালের ২৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় প্রাথমিক শিক্ষক নির্বাচন কমিটি কর্তৃক চুড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান সেলিনা আক্তার। এবং একই সালের ৩ অক্টোবর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের পূর্ব খুটামারা এলাকার মৃত ফজলার রহমানের মেয়ে রাবেয়া বেগমের প্রথম বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলার গদা এলাকার মৃত ডা. আতিয়ার রহমানের ছেলে ওয়ালিউর রহমানের সঙ্গে। সেখানে সেলিনা আক্তার নামে একটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহন করে। এর ২-৩ বছরের মাথায় মারা যান ওয়ালিউর রহমান। স্বামীর মৃতু্যর পরই মেয়ে সেলিনা আক্তারকে নিয়ে পূর্ব খুটামারা এলাকায় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নেন রাবেয়া বেগম। এরপর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী ডাঙ্গাপাড়া এলাকার হামিদুর রহমানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তখন থেকেই মামা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন সেলিনা আক্তার। মামা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় বাবা এবং মামার নাম একই হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া কাগজ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেন সেলিনা আক্তার। অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্য স্বাক্ষরিত তারিখ এবং স্মারক নম্বর বিহীন একটি ওয়ারিশন সনদপত্রে নিজের মামা মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমানের মেয়ে দাবি করেছেন ওই শিক্ষিকা। তবে ওই শিক্ষিকার ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম (মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমানের আপন বোন) রাবেয়া বেগম থাকলেও ওয়ারিশন সনদে ওয়ালিউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে রাবেয়া বেগমের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারেননি তিনি। ওয়ারিশনে মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমানের এক স্ত্রী উলেস্নখ করা ব্যক্তির নাম লাইনুল নাহার। মামার বাড়িতে বেড়ে ওঠার সুযোগে সরকারি চাকরি হাতিয়ে নিতেই মুলত নিজের মামাকে বাবা উলেস্নখ করেন সেলিনা আক্তার।

1

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওই সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, 'আমি ছোট থেকেই মামা বাড়িতে বড় হয়েছি, তারাই আমার বাবা মা।'

খুটামারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রকিবুল ইসলাম বলেন, 'সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া ওয়ারিশন সনদটি পূর্নরায় একাধিক যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় সেলিনা আক্তার মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমানের মেয়ে নন, তিনি আপন বোনের মেয়ে। সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কৃষ্ণা কাবেরি বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

চানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, 'আপনার মাধ্যমে পাওয়া সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে