এক সময় উত্তরের মঙ্গার কথা আসলেই সামনে আসতো নদ-নদী আর চরাঞ্চলের মানুষের কথা। চরাঞ্চলের কথা আসলেই মানুষ ভেবে নেন কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তার চর। বর্ষায় যতদূর চোখ যেত তিস্তায় ততদূওে থৈ-থৈ পানি আর শুষ্ক মৌসুম হলেই ধূ-ধূ বালুর চর। তিস্তা নদীর চরে সময়ের বিবর্তনে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের হাতছানি দিয়েছে চাষাবাদ। ১২ মিশালি ফসল আর সবজি দিচ্ছে কোটি টাকার হাতছানি। ব্যাপক সম্ভাবনাময় তিস্তার চরগুলো।
সরেজমিনে রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায়, রূপালী বালুর চাদরে ঘিরে সবুজ সমারোহ এ যেন আরেক অপরূপ নীলাভূমি। যতদূর চোখ পড়ে ততদূরে বিস্তৃত চরাঞ্চল ভরে গেছে বাদাম, তিল, তিসি, ভুট্টা, গম, পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর মতো নানা অর্থকারী ফসলের সমারোহে। কৃষকরা এখন ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সূত্র মতে, ২০২৫ সালে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৭৫ হেক্টর, ভূট্টা ৪২০ হেক্টর, আলু ২৭৬০ হেক্টর, সরিষা ১৩৬০ হেক্টর, পেঁয়াজ ১২০ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ৪৫ হেক্টর ও গম ৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাজারহাট উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলার রামহরি চর এলাকার জিয়াউর রহমান(৪৫) নামের এক কৃষক বলেন, '২ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে, বাজার ভালো থাকলে দাম ভালো পাওয়া যাবে। এক সময় এই জমিগুলোতে চাষাবাদ হত না। এখন সবধরনের চাষাবাদ হয়। আগের মঙ্গা আর নেই বললেই চলে।' এ ছাড়া ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ গ্রামের ইউসুফ আলী(৫০) এক একর জমিতে, সাইফুল ইসলাম (৪০) ৩ একর জমিতে, জাকির হোসেন ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু আলুর বাজারে ধ্বস নেমে আসায় তাদের কপাল পুড়েছে। অনেক কৃষক বলেন, গত বছর যেভাবে আলুর চড়া দাম ছিল, এ বছর অনেক কম হওয়ায় লাভের আশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। একই গ্রামের মফিজ উদ্দিন (৫৫) ২বিঘা জমিতে সরিষা, গোপাল বসুনিয়া (৬৫) ২ একর জমিতে ভুট্টা, সাবেক ইউপি সদস্য আ.সাত্তার মন্ডল বাবু (৫২) ২ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া ও আবুল কালাম আজাদ (৫২) ১ একর জমিতে গম চাষ করেছেন। ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ গ্রামের খায়রুল ইসলাম বলেন, 'এক একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ২০-২৫ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। তবে পেঁয়াজের বাজার ভালো নয়। ঢাকার পাইকাররা আসলে ভালো বাজার পাওয়া যেত এবং লাভবান হতাম।'
তবে একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদ নামের এক কৃষক বলেন, তিস্তার চরে আগের চেয়ে ভালো ফসল ফলে, সরকারিভাবে বাজার জাতের উদ্যোগ থাকলে এখানকার মানুষ আরও উপকৃত হত এবং বেশি লাভবান হত। সেজন্য প্রয়োজন ভালো মানের চলাচলের রাস্তা। রাস্তার কারণে অনেক সময় কৃষকের ফসল ঠিক সময়ে বাজারে নিয়ে যেতে পারেন না।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, চলতি বছর গত বছরের চেয়ে আলু সবচেয়ে বেশি জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। পেঁয়াজ যে পরিমাণে চাষ করেছে তাতে লোকাল মোটামুটি জোগান দেবে। বিভিন্ন বাজারে বাজারজাত করার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে সঙ্গে আলোচনা চলছে। যাতে করে এলাকার বাহিরে সকল কৃষি পণ্য সরবরাহ করা যায়। কৃষি বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে।