মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রেমের ভয়ঙ্কর ফাঁদ! টার্গেট চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
  ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
প্রেমের ভয়ঙ্কর ফাঁদ! টার্গেট চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী

কখনও ফেসবুক কখনও কার্যালয়ে গিয়ে বন্ধুত্বের শুরু। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক পরিণত হয় প্রেমে। তারপর অসুস্থতার কথা বলে নির্দিষ্ট ফ্লাটে নিয়ে আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর বস্নাকমেইল করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় প্রতারণা করে আসছে কয়েকটি চক্র। সম্মানহানীর ভয়ে থানায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করার কারণে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে এই প্রতারক চক্রের কার্যক্রম।

দীর্ঘ তিন মাস ধরে গুরুদাসপুর উপজেলার পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া যায় এমন তথ্য। কথা হয় প্রায় ১০ জন সরকারি চাকরিজীবী পুরুষ ও ৫ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর প্রতারণার তথ্য।

1

তবে এ এক নাটক-সিনেমার দৃশ্যই বটে। সব দিক ভেবে সাজানো হয় এই নাটকের দৃশ্যপট। সেখানে থাকে, পুলিশের অভিনয়, সাংবাদিক কেউবা আবার গোয়েন্দা সংস্থার লোক। সেই নাটকের মূল চরিত্রে থাকেন সুন্দরী তরুণী। আর এসব কুশীলব চিত্রায়িত নাটকে প্রতিদিন একজন করে হন ভুক্তভোগী। তবে তিনি নাটকের ভুক্তভোগী নন বরং বাস্তবেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী গুরুদাসপুর পৌরসভা কার্যালয়ের একজন জানান, 'তিনমাস আগে পৌরসভার কার্যালয়ের কাজ শেষ করে একটু প্রশান্তির জন্য চলনবিল বিলশা এলাকায় ঘুরতে যাই। সন্ধার আগ মুহুর্তে বাড়ি ফেরার সময় ব্রিজে একজন সুন্দরী তরুণী আমাকে সালাম দেন। এরপর ওই তরুণী তার জন্মসনদের কিছু কাজ করে দিতে বলেন এবং আমার ফেসবুক আইডিটা চানন। এরপর দিনে-রাতে বিভিন্ন সময় আমাকে ম্যাসেজ করতেন। এভাবে কথা বলতে গিয়ে দুজনের মধ্যে সক্ষতা গড়ে ওঠে। সম্পর্কের শুরুর প্রায় ১০ দিন পর হঠাৎ একদিন রাত ৮টার দিকে আমাকে ওই তরুণী কল দিয়ে বলেন তিনি খুব অসুস্থ, বাসায় কেউ নেই। ওষুধ নিয়ে আসারও কেউ নেই। দয়া করে তাকে যেন জ্বরের ওষুধ দিয়ে যান। আমি মানবিক হয়ে ওষুধ নিয়ে গুরুদাসপুর বাজার এলাকায় ওই তরুণীর দেওয়া ঠিকানায় একটি ফ্লাটে যাই। যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ৬-৭ জনের একটি চক্র আমাকে মারধর করে। এরপর আমাকে নগ্ন করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একজন পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ, একজন সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থার লোক ও স্থানীয় বাসিন্দা। কিছুক্ষণ পরে আমাকে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে আমি অনেক চেষ্টার পর ১ লাখ টাকা দিয়ে সমাধান করি। সম্মানহানীর ভয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি।'

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন ভুক্তভোগী জানান, 'প্রায় পাঁচ মাস আগে নিজ কার্যালয়ে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব পরে প্রেম পর্যন্ত গড়ায়। এরপর একদিন অসুস্থতার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় একটি ফ্লাটে। সেখানে ৬-৭ জনের একটি গ্রম্নপ আমাকে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। ২ লাখ টাকা দিয়ে সেখানেই সমাধান করেছি বিষয়টি। তবে এতেই শেষ হয়নি। তারপর কয়েকধাপে বিভিন্নভাবে আমার কাছ থেকে আরও এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক চক্র। সরকারি চাকরিজীবী ও সম্মানহানীর ভয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারিনি।'

এদিকে গত ১৫ জানুয়ারী ভুক্তভোগী রুহুল আমিন (ছদ্দ নাম) তার ছেলের এমন ঘটনায় প্রতারক চক্রের ১৮ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের মজিবর ইসলামের ছেলে রাসেল ইসলাম (২২), আবু বক্করের ছেলে যুবদল কর্মী সাবিদুল ইসলাম (৪০) ও মজিবর শেখের ছেলে মিঠুন (২৫)। রাসেলের বিরুদ্ধে সিএনজি ছিনতাইসহ হত্যা মামলা রয়েছে। গুরুদাসপুর থানার ওসি গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, 'ইতিমধ্যেই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ১৮ জনের নাম বলেছেন। সবাই পালাতক। তবে নির্দিষ্টভাবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে দ্রম্নত এ চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। তারপরও পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছে।'

গুরুদাসপুর ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন, 'যারা ফাঁদে পা দিচ্ছেন তাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। ভুক্তভোগীরা সম্মানহানীর ভয়ে আইনের আশ্রয় না নিয়ে ভুল করছেন। সাহস করে পরিচয় গোপন রেখেও চক্রের বিরুদ্ধে তথ্য দিলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে