যেখানেই রোগাক্রান্ত গাছ চোখে পড়ে সেখানেই যত্ন সহকারের গাছের পরিচর্যাসহ চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদগ্রীব হয়ে পড়েন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর বড়ভিটা গ্রামের মৃত- মনোরঞ্জন রায়ের ছেলে গাছ সেবার ফেরিওয়ালা যুবক হরেকৃষ্ণ রায় (৪৫)।
অন্যান্য গাছের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থকরী গাছ সুপারি ও নারিকেল গাছের চিকিৎসা প্রদানে যুবক হরেকৃষ্ণ রায় এলাকায় কুড়িয়েছেন সুনাম। এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার গাছ সেবার এই পরিধি বিরাজমান। কারও নারিকেল গাছ ও সুপারি গাছের রোগ দেখা দিলেই হরেকৃষ্ণ রায়ের পরামর্শ চিকিৎসা সেবায় গাছের সুস্থ্যতা ফিরে আসছে।
এলাকাবাসীর গাছের সেবা দিতেই যুবক হরেকৃষ্ণ রায় সকাল হলেই বাড়ি থেকে বিড়িয়ে ছুটে যান এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে। হাতে বাইসাইকেল ও কাধে ্েস্প্র মেশিন যেন নিত্যসঙ্গী। হরেকৃষ্ণ রায়ের মতে এই স্প্রে মেশিনটাই তার লক্ষ্ণী। এই স্প্রে মেশিন দিয়েই স্প্রে করে তিনি অসংখ্য মরা গাছকে জীবিত করার প্রচেষ্টা চালান ও তাতে সফল হন। হরেকৃষ্ণ রায় মাটি বাহিত ও ছত্রাকজনিত সুপারি ও নারিকেল গাছের ৪ রোগের চিকিৎসা দেন। তা হলো- গাছের পাতায় মড়ক ও পাতা ঝলসানো রোগ, পাতায় দাগ পড়া রোগ, গোড়া পঁচা রোগ ও গাছের করম পঁচা রোগ ইত্যাদি। হরেকৃষ্ণের সেবায় এখানকার মৃতপ্রায় হাজারও গাছের জীবন ফিরে পেয়েছে।
হরেকৃষ্ণ রায়ের সেবায় উপকারভোগী পশ্চিম নওদাবশ ব্রাম্মণপাড়া গ্রামের গাছ মালিক শৈলান্দ্রনাথ জানান, 'আমার নারিকেল ও সুপারি বাগানের গাছগুলো মড়ক ধরে মারা যাওয়ার পথে ছিল। গাছ সেবক হরেকুষ্ণ রায় জানতে পেরে আমার বাগানে চিকিৎসা দিলে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় মৃতপ্রায় গাছগুলো বেঁচে যায়।'
গৃহিণী রজীনা আক্তার হাসি জানান, 'আমার একটি নারিকেল গাছ অজানা রোগ ধরে প্রায় মারা যাওয়ার উপক্রম হয়। আমাদের এলাকার গাছ সেবার ফেরিওয়ালা যুবক হরেকৃষ্ণ রায় নারিকেল গাছটি দেখে পরিচর্যা ও চিকিৎসা সেবা শুরু করলেই মাত্র দেড় মাসের মধ্যে মারা যাওয়ার উপক্রম এই গাছে সবুজ পাতা গজাতে শুরু করে।'
গাছ সেবার ফেরিওয়ালা হরেকৃষ্ণ রায় জানান, 'ছোটবেলা থেকে গাছ প্রেমিক আমার স্বর্গীয় পিতা মনোরঞ্জন রায়ের কাছ থেকে গাছ সেবার শিক্ষা নেই। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসে কন্দাল ফসল উৎপাদানের উপর মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে গাছের পরিচর্যা ও রোগ বালাইয়ের উপর কাজ শুরু করি।'
হরেকৃষ্ণ রায় জানান, একটি বড় স্প্রে মেশিনের অভাবে গাছ সেবায় আমার বিঘ্ন ঘটছে। যদি সরকারি বে-সরকারি পর্যায় সহযোগিতা পেতাম তাহলে আমার গাছ সেবা ও গাছের পরিচর্যার কাজ আরও একধাপ এগিয়ে যেত।'
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, 'গাছ সেবক হরেকৃষ্ণ রায়কে আমরা পারিবারিক পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তার বড় স্প্রে মেশিনের চাহিদাটি সম্পর্কে জেনেছি। এটা ইউএনও দিতে পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে হরেকৃষ্ণ রায়কে সহযোগিতার করার চেষ্টা করা হবে।'