বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

পাখির অভয়ারণ্য বেতাগীর 'ঝোপখালী পাখির চর'

মো. শামীম সিকদার, বেতাগী (বরগুনা)
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পাখির অভয়ারণ্য বেতাগীর 'ঝোপখালী পাখির চর'

পাখির কলতান ও সবুজের সমারোহে আর ছৈলা গাছের ডালে ডালে পাখির বাসা যেন ভ্রমণ ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের মনকে আন্দলিত করে। এখানে বলছিলাম ঝোপখালী পাখির চরের কথা। এ চরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট।

উপকূলীয় জেলা বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর 'ঝোপখালী পাখির চর'। ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, উদ্ভিদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার জীববৈচিত্র। এখানে রয়েছে পাখিদেরও অভয়ারাণ্য। চরের ভেতরে একেবেঁকে বয়ে গেছে ছোট ছোট ৫-৭টি নালা। এসব নালায় রয়েছে নানা সুস্বাদু প্রজাতির মাছ। জোয়ারের সময় চরটির নিম্ন অঞ্চল পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখানের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। এ সময় নৌকায় করে উপভোগ করা যায় এখানকার পাখির কলতান ও বিস্তৃত বনাঞ্চলের সবুজের সমারোহ। এ চরকে কেন্দ্র করে জনমনেও জেগে ওঠেছে সীমাহীন আশা। পাখির কলতান ও সবুজের সমারোহে আর ছৈলা গাছের ডালে ডালে পাখির বাসা যেন ভ্রমন ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকদের মনকে আন্দলিত করে। স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারী নজরদারী আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন স্পট।

নতুন বাংলাদেশের' স্বপ্ন দেখাতে নান্দনিক সৌন্দর্য ও পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নাম ফলক ও জাতীয় পতাকবা উড়িয়ে ঝোপখালী পাখির চরের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এই আনুষ্ঠানিক যাত্রায় ঝোপখালী পাখির চরে সমবেত হন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ূন কবির মলিস্নক, বরগুনা প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সভাপতি ড. খলিলুর রহমান, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সমন্বয়কারী চ্যানেল আই ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি হাসানুর রহমান ঝন্টু, বেতাগী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহীন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম সরোয়ার রিয়াদ খান, পর্যটন উদ্যোক্তা ও জল তরুণী, ভ্রমণ সেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আরিফুর রহমান, আলোছায়া নারী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সায়েরা খাতুন রুবী, বেতাগী প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী নাগরিক ফোরামের সভাপতি লায়ন মো. শামীম সিকদার, উপজেলা ক্যাবের সভাপতি প্রভাষক আবুল বাসার খান, প্রতিদিন বাংলাদেশের প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাসেল মাহামুদ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক মাসুদ পাভেজ আসাদ, বেতাগী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন খান প্রমুখ।

বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছোট ঝোপখালী মৌজায় বিষখালী নদীতে ১০-১২ বছর আগে প্রায় ৪০ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এ বিশাল চর। অতিথি এবং পরিযায়ী পাখিরা নিরাপদ মনে করায় শীত মৌসৃমে হাজার হাজার পাখি আশ্রায় নেয় এ চরে। দেশীয় পাখির সারি তো আছেই। এসব পাখিরা এখানকার ছৈলা গাছের ডালে ডালে বাঁধে বাসা। অগনিত পাখিদের গমাগম হওয়ায় এ চরের নামকরন করা হয় 'পাখির চর'। হাজার হাজার ছৈলা গাছও এ চরের মূল আকর্ষণ। শীতের সময় শুকনো চরে গহীন অরণ্য। চারপাশে নদীঘেরা যেন ছৈলার বনের দ্বীপ। গাছে গাছে পাখির বাসা দেখে পর্যটকদের মন জুড়িয়ে যায়। অতিথি এবং পরিযায়ী পাখিও নিরাপদ স্থান মনে করে আশ্রয় নিয়েছে। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহ আছে এ চরে।

ঝোপখালীর চরকে ঘিরেও এখানের জনজীবনে জেগে উঠেছে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন। বিষখালী নদীর বুক চিরে জেগে ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। তাদের সামনে এখন নতুন ভূখন্ডের হাতছানি। স্থানীয়রা বলছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা দক্ষিণের এ চরের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কোনো ভ্রমণপিয়াসী। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের বরগুনা জেলা সন্বয়কারী হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, প্রচুর সম্ভবনাময় এ স্পটটি এখনো তেমন উন্মোচিত হয়নি। দেশ দূরের কথা এমনকি এলাকার মানুষের কাছেই অজানা। এ জন্য উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বেতাগী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুল ইসলাম মন্টু বলেন, মানুষকে সচেতন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগী করে তুলতে পারলে এখানে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠবে। এ থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে।

ইউএনও বশির গাজী বলেন, ঝোপখালি পাখিরচরকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে