শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মস্থল হারানোর শঙ্কায় ঝিনাইদহের শতাধিক ইউডিসি উদ্যোক্তা

তারেক মাহমুদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
  ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

টানা ১০ বছর কাজ করার পর কর্মস্থল হারানোর শঙ্কায় ঝিনাইদহের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের শতাধিক উদ্যোক্তা। গত ৩ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে জারিকৃত হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর তাদের এ শঙ্কা দেখা দেয়। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকারের তৃণমূল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করেন। এরপর থেকে তারা জেলার ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তথ্যসেবা কেন্দ্রকে ডিজিটাল সেন্টার ঘোষণা করা হয়। ঝিনাইদহে মোট ৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভা রয়েছে। এসব ইউনিয়ন ও পৌরসভাগুলোতে স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীদের দিয়ে তথ্যসেবার কাজ পরিচালিত হয়ে আসছিল। প্রতিটি সেন্টারে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। সরকার বা ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগার থেকে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তারা জনগণকে সেবা প্রদান করছেন। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সামান্য আয় দিয়ে এসব উদ্যোক্তার সংসার জীবন চলছে। কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে নতুন জনবল নিয়োগ করায় কর্মস্থল হারানোর পথে এসব যুবক-যুবতীরা।

যদিও জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, তারা কর্মহীন হবে না। নতুনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। আর উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে সংকট তৈরি হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের আগের উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা তাদের স্থায়ীকরণের দাবি করে আসছেন। ২০১৭ সালে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন তারা। কিন্তু তাদের দাবির প্রতি সম্মান না জানানোয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। তাতেও কোনো ফল না পেয়ে উদ্যোক্তারা স্থায়ী নিয়োগের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। উচ্চ আদালতে একাধিক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারীদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলেও রায়ের বিপক্ষে সরকার পক্ষ আপিল করে। আপিলের শুনানিতে শর্তসাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের নিয়োগের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে উলিস্নখিত পদে স্থায়ী নিয়োগের আশায় থেকে ইতোমধ্যে অনেকের চাকরির ক্ষেত্রে বয়স শেষ হয়ে গেছে। যাদের মধ্যে ঝিনাইদহের ২৮ উদ্যোক্তা আদালতে রিট করেন।

গত ৩ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আদালতের দেওয়া শর্ত পূরণ করায় ১৫ জন উদ্যোক্তাকে চূড়ান্ত ফলাফলে রাখা হয়েছে। বাকি ৩৪ জন নতুন। এদের মধ্যে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হোসেন আলী বলেন, 'আমরা বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রভাগে কাজ করছি। প্রায় ১০ বছর হলো সরকারের কোষাগার থেকে কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ছাড়াই সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য টাকায় বেঁচে আছি। আমরাই প্রথম দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বসবাসকারীদের কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছি। তাই আমাদের মানবিক দাবি ছিল, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্মরত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া। কিন্তু আমরা এখন কাজ হারানোর শঙ্কায় আছি।'

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, 'সরকার নতুন পদ সৃষ্টি করেছে। তাদের বেকার করেনি। তাদের চাকরি রয়েই গেছে। কাউকে বলা হয়নি কাজ ছাড়তে। তাদের দাবি ছিল কম্পিউটার অপারেটর পদে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের। হাইকোর্টের আদেশে ঝিনাইদহে ১৫ জনের চাকরি হয়েছে আর যারা বাদ আছে তাদের পর্যায়ক্রমে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে