সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকায় বিজনেস সামিট

অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল, বললেন বিনিয়োগকারীরা

তিন খাতে বিনিয়োগ করবে চীন ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন ও তিন খাতে বিনিয়োগে সম্মত সৌদি আরব ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি শিগগিরই
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনের 'বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩'-এর শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনের প্রথম দিন শনিবার 'বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ এবং দেশটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল' বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক সাংচেন ঝাং। সামিটে অংশ নেওয়া বিশ্বের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরাও আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে।

সামিটের প্রথম দিন বাংলাদেশের তিন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছে চীন। খাত তিনটি হচ্ছে- বিদু্যৎ ও জ্বালানি, অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং ই-কমার্স। সৌদি আরব বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি বিদু্যৎ ও জ্বালানি, রংপুর চিনি কলের জায়গায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি ও সেখানে গ্যাস লাইন সংযোগে সৌদি আরব

বিনিয়োগ করবে। এছাড়া আরবি ভাষা শিখিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবে। এদিকে ভুটানের সঙ্গে শিগগিরই হবে ট্রানজিট চুক্তি।

বিজনেস সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নউটিও) উপ-মহাপরিচালক সাংচেন ঝাং বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পর বাণিজ্যে অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। তার মতে, বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ। এ দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

সাংচেন ঝাং বলেন, 'আরও বৃহৎ আকারের অর্থনীতি হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। এ দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সবচেয়ে বেশি দরকার বেসরকারি বিনিয়োগ। বাংলাদেশ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থিত একটি দেশ। এ অঞ্চলের অর্থনীতি দ্রম্নত বর্ধনশীল। বাংলাদেশের ডায়নামিক তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।

তিনি মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নিয়ম-কানুন সহজ করা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানো জরুরি এবং বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিয়েছে। ডবিস্নউটিও বাংলাদেশের স্বার্থে কাজ করেছে এবং এ দেশের আগামীর উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

বিজনেস সামিটের শীর্ষ সম্মেলনে চীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, 'চীন বাংলাদেশের বড় রপ্তানিকারক দেশের একটি। তারা বলছে, তোমাদের দেশে আরও বিনিয়োগ করতে চাই। আমরা বলছি, তোমাদের জন্য সব কিছু ওপেন, তোমরা আস, দেখ, আমাদের এখানে অনেকগুলো আইটেম আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে তোমাদের জন্য ভালো হবে।'

তিনি বলেন, 'গত ৪০ বছর ধরে তোমাদের কাছ থেকে আমদানি করছি, এখন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে পার। তারা জানিয়েছেন, বিদু্যৎ ও জ্বালানি, অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ করবে, সেজন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে এসেছে।' তারা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। তারপর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

বিজনেস সামিটের ফাঁকে সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী ডক্টর মাজিদ বিন আব্দুলস্নাহ আল কাসাবির সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, যৌথ মালিকানায় সৌদি আরবে প্রস্তাবিত ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে দেশ?টি সম্মত হ?য়ে?ছে।

ডক্টর মো?মেন বলেন, 'আমরা চাচ্ছি সার কারাখানা সেখানে (সৌ?দি?তে) করব, তারা আমা?দের বে?নি?ফিট (লাভ) দে?বে। ওখা?নে (সৌ?দি) সস্তায় সার তৈ?রি করা যায়। তারা (সৌ?দি আরব) তাতে অ্যাগ্রি (রা?জি) হয়ে?ছে।'

সৌ?দির বা?ণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মোমেন বলেন, ?'তিনি বলেছেন, কথাবার্তা না, আমরা কাজ করতে চাই। সৌ?দি এখা?নে ক?য়েক?টি প্রজেক্ট নি?য়ে?ছে, এর ম?ধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। তারা পতেঙ্গার এক?টি প্রজে?ক্টে কাজ শুরু ক?রে দি?য়ে?ছে। আমরা তা?দের একটা স্পেশাল ইকোনো?মিক জোন দি?য়ে?ছি। তারা জানা?লেন, ওখা?নে কাজ শুরু কর?বেন। এটা চট্টগ্রামে।'

এনা?র্জি ও পোর্ট সেক্ট?রে সৌ?দি বি?নি?য়োগ কর?তে চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব?লেন, 'তারা এনা?র্জি সেক্ট?রে ইনভেস্ট কর?তে চায়, পোর্ট সেক্ট?রে কর?তে চায়। তারা এয়ার?পো?র্টে ইন?ভেস্ট কর?তে চায়।'

বাংলা?দেশ থে?কে ওষুধ নেওয়া এবং আই?টি সেক্টরের লোকবল নি?য়োগ দি?তে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনু?রোধ করে?ছেন ব?লেও জানান তিনি।

এদিকে শনিবার সৌদির বাণিজ্যমন্ত্রী ডক্টর মাজেদ বিন আব্দুলস্নাহ আল কাসাবির সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করা যায়। আমাদের যে মার্কেট আছে সেটি এট্রাক্ট করতে পারলে তারা বিনিয়োগ করবে। বিদু্যৎ সেক্টরে একটি ভালো খবর- সৌদি সেখানে বিনিয়োগ করবে। আশা করি, একসঙ্গে আমাদের দুই দেশের বাণিজ্য এগিয়ে নিতে পারব। আমরা খুব আশাবাদী, সৌদি আরবের সঙ্গে অনেক দূর যেতে পারব।

অন্যদিকে ভুটানের সঙ্গে চলতি মাসে ট্রানজিট চুক্তি হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, আগামী ২১ মার্চ তিনি ভুটানে যাবেন। ওই সময় দেশটির সঙ্গে এ চুক্তি হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি আগামী কেবিনেট বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। এছাড়া ভুটানের আমাদের কাছে নদীপথের বিষয়ে দু'টি প্রস্তাব ছিল সেটিও আমরা ওকে করে দিয়েছি। ভুটানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। ভুটান ছোট দেশ হলেও আমাদের নিয়ে তারা সবসময়ই পজিটিভ।'

প্রসঙ্গত, দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সামিটের আয়োজন করেছে সংগঠন?টি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানো, নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করাসহ এবং দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে এই সামিট। মেগা এ সম্মেলন সফল ও অর্থবহ করতে সবার সহযোগিতা কামনা করে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।'

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধা আছে। এ দেশে অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশে আসুন, বিনিয়োগ করুন এবং সর্বোচ্চ মুনাফা নিন।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে তিন দিনের এই 'বাংলাদেশ বিজনেস সামিট' উদ্বোধন করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ডক্টর মজিদ বিন আবদুলস্নাহ আলখাসাবি, চীনের ভাইস মিনিস্টার ফর কমার্স কিয়ান কেমিং, যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মারি ট্রেভেলইয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস সামিটের শীর্ষ এ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের অতিথি, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭ দেশের ২০০টিরও বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন। দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই বিজনেস সামিটের আয়োজন করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

বিজনেস সামিটে এফবিসিসিআইয়ের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিন পেস্ননারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউস রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড টু্যর রয়েছে এ সামিটে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে