শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিক ঝড়ের পর বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত দ্বিতীয় ওয়ানডে

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মুশফিকুর রহিমের দ্রম্নততম সেঞ্চুরি এবং ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের ম্যাচটা ভেস্তে গেল বৃষ্টিতে। কাগজে-কলমে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড হলেও এদিন যেন বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার কাট-অফ টাইম ছিল ৯টা ৩৩ মিনিট। তবে এর ঘণ্টাখানেক আগেও থামেনি বৃষ্টি। স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩২ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২৩ মার্চ এই ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় সিরিজ জিততে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সে স্কোর পেরিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ল টাইগাররা। গতকালের ম্যাচের আগ পর্যন্ত ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৩৮। আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচেই সেই রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা। দুই দিনের ব্যবধানে ৩৪৯ রান করে সেটা ভেঙেও ফেলল তামিম ইকবালের দল। প্রায় আড়াই দশকের ওয়ানডে পথযাত্রায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান এখন এটিই।

সোমবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান সংগ্রহ করেছে তামিম বাহিনী। এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচে করা ৩৩৮ রান ছিল ওয়ানডে ইতিহাসে টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

বাংলাদেশেরও সংগ্রটা এত বড় হওয়ার পেছনের নায়ক মুশফিকুর রহিম ও তাওহিদ হৃদয়। ৩৩.২ ওভারে দলীয় ১৯০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে এ দুজন মিলে আইরিশ বোলারদের তুলোধুনো করে মাত্র ৮০ বলে তুলে নেন ১২৮ রান। হৃদয় এক রানের জন্য ফিফটির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেও মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রম্নততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।

দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন মুশফিক। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডতে সাত হাজার রানের ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তার আগে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন শুধু সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল।

এদিন টাইগার ব্যাটার লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত ফিফটি করে আউট হন। দলীয় ১৯০ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটে ৭৩ রানে পরাস্ত হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৭৭ বল মোকাবিলা করে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। নাজমুল শান্ত এ নিয়ে শেষ পাঁচ ম্যাচে তিনটি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস উপহার দিলেন। এর মধ্যে চার ইনিংসে তিনি করেছেন পঁচিশ বা তার অধিক রান। যার ফলে ক্যারিয়ারে রীতিমতো বসন্তের সুবাতাস বইছে তরুণ এই ব্যাটারের। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অভিষেকসহ দুটি ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে আইরিশ পেসারদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে সংগ্রাম করেছেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৪ রান তুলে নেয় তারা। এরপর অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তামিম-লিটন। ১০ ওভারে স্কোর দাঁড় করান ৪২ রানে।

তামিম ৩১ বলে ২৩ রান করে রান আউট হলেও ক্রিজে স্থায়ী হন লিটন। সাত ইনিংস পর তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি। কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৭১ বলে সমান তিন চার ও ছক্কার মারে খেলেন ৭০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। দলীয় ১৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভাঙে শান্ত-লিটনের ১০১ রানের অনবদ্য জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে আইরিশদের বিপক্ষে যা টাইগারদের সর্বোচ্চ রানের জুটি।

লিটনের পর শান্তর সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়ে ক্যাচ উপহার দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব আল হাসান। ১৯ বলে ১৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। অপরদিকে শান্ত তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। ৭৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কার মারে ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রান করে গ্রাহাম হিউমের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। তবে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিক ও হৃদয় সে চাপ সামলে উল্টো চড়াও হন আইরিশ বোলারদের ওপর। দুজনের জুটিতে আসে ১২৮ রান। দলীয় ৩১৮ রানে আউট হন হৃদয়। ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কার মারে ৪৯ রান করে অ্যাডায়েরের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। এর আগে এ ব্যাটার নিজের অভিষেক ম্যাচে ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন। হৃদয় আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেও অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে মাত্র ৬০ বলে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। যা বাংলাদেশের হয়ে ৫০ ওভারের ম্যাচে দ্রম্নততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।

তার আগে টাইগারদের হয়ে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব। ১৪ চার ও ২ ছক্কার মারে মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১০০ রানে। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান। যা ওয়ানডে ইতিহাসে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

আইরিশ বোলারদের পক্ষে ৫৮ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট তুলে নেন গ্রাহাম হিউম। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নিজেদের পকেটে পুরেন মার্ক অ্যাডায়ার ও কার্টিস ক্যাম্ফার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩৪৯/৬ (তামিম ২৩, লিটন ৭০, শান্ত ৭৩, সাকিব ১৭, হৃদয় ৪৯, মুশফিক ১০০*, ইয়াসির ৭, তাসকিন ১*; অ্যাডায়ার ১/৬০, হিউম ৩/৫৮, ক্যাম্পার ১/৭৩, হামফ্রেজ ০/৫৯, ম্যাকব্রাইন ০/৬৮, টেক্টর ০/২৮)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে