বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩

ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা বিএনপির

মো. বাহারুল ইসলাম মোলস্না
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

এক সময় বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনটি বর্তমানে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দল টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণেও এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এই আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শক্তিশালী।

এই আসনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে রয়েছে একটি পৌরসভা এবং ২১টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন ও বিজয়নগর উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। মর্যাদাপূর্ণ এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ জন। এর মধ্যে পৌর এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার ৫০৪ জন, সদর উপজেলায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৬ জন এবং বিজয়নগর উপজেলায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬৪ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ জন আর মহিলা ভোটার ২ লাখ ৭০ হাজার ৭৬২ জন।

এই আসন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট হারুন-আল-রশীদ ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলে এই আসন থেকে জাপা নেতা অ্যাডভোকেট

হুমায়ূন কবির ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রতিটি স্তরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্মেলন করে ইউনিয়ন কমিটি ও সম্মেলনের মাধ্যমে বিজয়নগর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু। ওই নির্বাচনে তিনি বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও এই আসনের ৫ বারের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হারুন-আল-রশীদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

২০১০ সালের ২২ নভেম্বর অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃতু্যবরণ করলে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এই আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। টানা তিনবার বিজয়ী হয়ে তিনি তার সংসদীয় আসনে বিপুল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও তিনি জনপ্রিয়।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এই আসনে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর তৎপরতা নেই।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, 'জেলা আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত ও শক্তিশালী। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই দলের জন্য কাজ করছি।' তিনি বলেন, 'আগামী নির্বাচনে আমি অবশ্যই দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে জয়ী হব ইনশালস্নাহ।' তিনি বলেন, শুধু সদর আসনই নয়, 'জেলার ৬টি আসনেই আমরা জিতব ইনশালস্নাহ।'

এদিকে, বিএনপি বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। এছাড়াও বিএনপি নেতা ডক্টর তৌফিকুল ইসলাম মিথিলও এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা আছে। ডক্টর তৌফিকুল ইসলাম মিথিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, 'আমরা বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। শেষ পর্যন্ত দল যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।' তিনি বলেন, 'সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিতব ইনশালস্নাহ।'

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ গ্রম্নপ) থেকে জেলা জাপার আহ্বায়ক শাহ জামাল রানা মনোনয়ন চাইবেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে।

এছাড়াও এই আসন থেকে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কল্যাণ পার্টির সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের নেতা আলহাজ সৈয়দ আনোয়ার আহমদ দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কল্যাণ পার্টির সভাপতি ও দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ইব্রাহিম খান সাদাত বলেন, তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দল মনোনয়ন দিলে তিনি অবশ্যই নির্বাচন করবেন।

আগামীকাল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের বিস্তারিত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে