সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

পানিহীন ইছামতীর বুকে আগাছা!

ফেরত গেল খননের সোয়া ৭ কোটি টাকা
আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ২৮ জুন ২০২৩, ০০:০০

কয়েক দফা সংস্কার, খনন ও নদীপাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও পানিহীন ইছামতীর বুকে কেবল গজে উঠেছে আগাছা। অথচ বন্ধ হয়ে গেল পাবনা মধ্য শহরে প্রবাহিত ইছামতী নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের কাজ। এদিকে, নদীর দুই পাড়ের দখলদার উচ্ছেদ ও খননের জন্য বরাদ্দকৃত সোয়া সাত কোটি টাকার বেশি ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নদীর কিছু এলাকা নামমাত্র খনন করা হলেও আবারও পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনা পড়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও জেলা প্রশাসনের দাবি, দখলদারদের মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পাউবোর পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে নদীর দুই পাড়ের ৫ দশমিক ৬৭ কিলোমিটারে দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২ কোটি ৭৯ লাখ ও ২ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদী খননের জন্য ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাউবো ১ হাজার ৫৩ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ও পাউবো যৌথভাবে শহরের লাইব্রেরি বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে উৎসমুখের দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। উচ্ছেদ করা হয় ৬শ' ১০টি অবৈধ স্থাপনা। উচ্ছেদ এলাকায় নদী খননের কাজ শুরু করার কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযান। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ না হতেই প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু পাউবো আর উচ্ছেদ ও খননকাজ শুরু করতে পারেনি। পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই তারা উচ্ছেদ ও খননকাজ করতে পারেনি। যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাতে বরাদ্দের ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি না হওয়ায় বাকি টাকা চলতি জুন মাসে ফেরত চলে গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সঠিকভাবে খনন এলাকা বুঝিয়ে দিতে না পারায় তারা খননকাজ করতে পারেননি। আর যখন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন খরচ কম ছিল। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আর কাজ করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিন নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে পানি নেই। পুরো নদী যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে আছে। খনন করা এলাকায় পলি জমে ও ময়লা-আবর্জনায় আবার ভরাট হয়ে গেছে। জন্ম নিয়েছে অনেক ধরনের আগাছা। কিছু দখলদার আবার নদীর জমি নিজের মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেউবা আবার ঝুলিয়েছেন আইনি নিষেধাজ্ঞার নোটিশ। নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, আর এ কারণেই প্রকল্পের টাকা ফেরত গেছে।

এদিকে নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও খননের টাকা ফেরত যাওয়ার খবরে জেলার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ১৩ জুন পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজনে ও ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সহযোগিতায় পাবনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে সভায় হয়। এই সভা থেকে ইছামতী নদী পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেওয়ার দাবি তোলা হয়। ইছামতী নদী উদ্ধার আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম। তিনি বলেন, 'ইছামতী নদী খনন জেলাবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই নদী খনন বন্ধ হয়ে গেছে। এটা জেলাবাসী কিছুতেই মেনে নেবে না। সেনাবাহিনী নিয়োগ করে হলেও নদীটির দখলদার উচ্ছেদ ও খনন করা হবে বলে প্রত্যাশা করি।'

এ সম্পর্কে পাউবোর পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন বলেন, তিনি নতুন আসায় প্রকল্পটির বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই নদী খননের জন্য একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে