ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই এলাকায় গত দুই বছর ধরে লটকন চাষ হলেও এ বছর বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই ফল বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাজারে তিন ধরনের লটকন বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের খুচরা ৮০ টাকা কেজি, মাঝারি সাইজের খুচরা ১২০ টাকা কেজি ও বড় সাইজের লটকন ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশে লটকন এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন, হাড়ফাটা, ভুবি, বগি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, লোটকা ইত্যাদি।
সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা উপজেলা বিজয়নগরের টিলা ভূমির লালমাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উপজেলার চম্পকনগর, মেরাশানি, সিঙ্গারবিল ও পাহাড়পুর এলাকায় রয়েছে লটকনের বাগান। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোনো ধরনের রোগ-বালাই না হওয়ায় এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ করা হয়েছে। গত ঈদুল আজহার পর থেকে বাজারে লকটন বিক্রি করাও শুরু হয়েছে।
চাষিরা জানান, বিজয়নগরে উৎপাদিত লটকন রসাল, টক ও মিষ্টিতে ভরপুর হওয়ায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা। এছাড়াও লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন 'সি'তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। চাষিরা জানান, লটকন পরিপক্ব হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন পাইকাররা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন সকালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলা এবং কুমিলস্না ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে পাইকাররা বাগানে এসে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মেরাশানী গ্রামের লটকন চাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'গত ৭ থেকে ৮ বছর আগে আমি ময়মনসিংহ জেলা থেকে ১০০ লটকনের চারা এনে একটি বাগান করি। প্রথমে যখন লকটকের বাগান করি এলাকার অনেকেই এ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। গত ২ বছর ধরে কিছু কিছু গাছে লটকন ধরা শুরু করলেও এ বছর সব গাছে লটকন ধরেছে।'
তিনি আরও বলেন, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার ওপর লটকন বিক্রি করতে পারব বলে আশা করি। কৃষি অফিসের লোকজন সব সময় আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ করব।
উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের লটকন বাগানের মালিক জাকির মিয়া বলেন, এ বছর লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারা এসে বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার বাগান থেকে তিনি ২ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাব্বির আহমেদ বলেন, বিজয়নগরের মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপকারি। এই বছর বাণিজ্যিকভাবে উপজেলায় লকটন চাষ করা হয়েছে। উপজেলার ২০ থেকে ২৫ জন চাষি ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর উপজেলায় লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি এ বছর উপজেলায় প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে লটকন চাষিদের সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, চলতি বছর বিজয়নগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে। ইতোমধ্যেই লকটন বিক্রিও শুরু হয়েছে। আশা করি, চলতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৮০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করা হবে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, লটকনের রয়েছে পুষ্টি ও ঔষধি গুণ। ভিটামিন 'সি'তে ভরপুর এই ফল, যা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা লটকনে আছে খাদ্যশক্তি ৯১ কিলোক্যালোরি। এছাড়া আমিষ ১.৪২ গ্রাম, চর্বি ০.৪৫ গ্রাম, ভিটামিন-সি ৫৫ মিলিগ্রাম।