রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান ফখরুল

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
রোববার 'রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকালে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব এই প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, 'এই সেমিনার থেকে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির ও জনগণের কাছে আবেদন থাকবে, বাংলাদেশের মানুষকে তার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে দেওয়ার পাশে দাঁড়াই।'

গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে 'রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল' শীর্ষক এই সেমিনার হয়। এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'চলমান সংকট শুধু বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ অথবা গণঅধিকার পরিষদের বিষয় নয়। এটা সমগ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর চেয়ে বড় সংকট আগে কখনো আসেনি। কথা বলতে পারব না, বিচার পাব না, সিকিউরিটি পাব না, স্বাস্থ্যসেবা পাব না, শিক্ষা পাব না এটা হতে পারে না।' নিউইয়র্ক টাইমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নিউইয়র্ক টাইমস পরিষ্কার করে বলেছে যে, ধীরে ধীরে গোপনে নীরবে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মিলিয়নস অব পিপল। এটাই সত্য। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাইকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ভয়াবহ দানব আমাদের বুকের ওপর বসে আছে তার থেকে আমরা নিজেকে, মানুষকে, মুক্ত করে একটা সমাজ গড়ে তুলি, মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করি।'

বিরোধীদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিরোধী দলের ৪ মিলিয়ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, মিথ্যা মামলা হচ্ছে। এরকম একটা প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে আদালত বলতে কিছু নেই, যেখানে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। যে প্রশাসন আছে শুধু তাদের জন্য।'

তিনি বলেন, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য বিবৃতি দিয়েছেন প্রায় ১৬০ জন আন্তর্জাতিক বিশ্বনেতা। তাদের এই বিবৃতির বিপক্ষে দেশের ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। এক সাংবাদিকের কাছে জানতে পেরেছেন এটা এটা ফেইক, এটাতে অধিকাংশই সই করেনি। এখন তারা কথা বলতে পারছেন না এজন্য যে, কথা বললে আবার তারা নির্যাতনে পড়বেন। সরকার সমস্ত জাতিটাকে একটা ভয়ের আস্তরের মধ্যে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, 'রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ৬ বছর হয়ে গেছে। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, ভেতরে বন্দুক যুদ্ধ হচ্ছে। যেটা দেশি আন্তর্জাতিক সবার জন্য চিন্তার বিষয়, রোহিঙ্গা এলাকায় উগ্রবাদ তৈরি হচ্ছে কিনা। এ বিষয়টি দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের শক্তি নাই যে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে দাঁড়াতে পারে। আমরা এই ইসু্য সমাধান করতে চাই।'

বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'জনগণের সমর্থন নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে এই সমস্যার দ্রম্নত সমাধান হবে।'

আমির খসরু বলেন, 'রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের অর্থনীতিতেত একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা এবং আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রায় হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার মাধ্যমে যতদ্রম্নত সম্ভব সংকটের সমাধান করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য আমাদের প্রতিবেশীসহ আমাদের সব আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ফ্যাসিবাদী এই শাসকগোষ্ঠী নিজেদের টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করছে। জনগণের ম্যান্ডেটসহ একটি বৈধ সরকার, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করার আবশ্যক।'

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির ডক্টর জাহেদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুতফুর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির শামসুল আলম, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উলস্নাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার ছিলেন।

বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুলস্নাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উলস্নাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নাল আবদিন ফারুক, ইসমাইল জবিউলস্নাহ, অধ্যাপক তাজমেরি এস এ ইসলাম, এনামুল হক চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জআমান, শাহজাহান চৌধুরী, নজির হোসেন, জহিরউদ্দির স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ সেমিনারে ছিলেন।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, ইরান, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, ইউএসএইডসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সেমিনারে ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে