রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানব পাচারকারীদের জন্য করা হচ্ছে তথ্যভান্ডার

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের তথ্যভান্ডার করা হচ্ছে। মানব পাচারের মতো গুরুতর ও সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের ভেতরে ও বাইরে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধের জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানব পাচার সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষত নারী ও শিশুদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২' এ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত এলাকায় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নজরদারি, ভিকটিমদের দ্রম্নত উদ্ধার, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়ার ফলে দেশে বর্তমানে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০২২ সালে সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৩১ কেজি আইস ও ১৬৭টি এলএসডি জব্দ করেছে। এই সময়ে এক লাখ ৩২১টি মামলা দায়ের এবং এক লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জন অবৈধ মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই সময়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস ইয়াবা, এক লাখ ১৫ হাজার ৩৬৮ কেজি গাঁজা, ৭ লাখ ৬ হাজার ৬১ বোতল ফেনসিডিল, ৩৩৮ কেজি হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নাফ নদী হয়ে দেশে এমফিটামিন (ইয়ারা) ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস) অনুপ্রবেশ করে। ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মে (আইস) প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সমন্বয়ে 'টেকনাফ বিশেষ জোন' স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে আইসসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এন ফোর্সমেন্ট কমিটির সভা ও পরিবীক্ষণ সভাতেও এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

তিনি আরও জানান, ক্রিস্টাল মেথ (আইস) প্রতিরোধে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড ও সব সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪০ ধারায় মাদকদ্রব্য অপরাধের নেপথ্যে জড়িত অর্থ জোগানদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলেও উলেস্নখ করেছেন তিনি।

কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি সংক্রান্ত সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। বর্তমানে কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন হলেও বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাজার ২০৩ জন। যশোর, সিলেট, দিনাজপুর, ফেনী, পিরোজপুর ও মাদারীপুর কারাগার ছাড়া বর্তমানে দেশের সব কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দি আটক রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭৬৫ জন বন্দি রয়েছে। এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে সর্বনিম্ন ১৮৯ জন বন্দি রয়েছে।

তিনি আরও জানান, কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে ময়মনসিংহ, কুমিলস্না, খুলনা, নরসিংদী ও জামালপুর এই ৫টি কারাগার নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কারাগারগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ হাজার জন বাড়বে।

সরকারি দলের নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কারাগারে আটক বন্দিদের মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োজিত আছে। এছাড়া বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের ইনডোর খেলাধুলা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, মেডিটেশন এবং বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর কারাভ্যন্তরে অপরাধের কুফল সংক্রান্ত সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি বা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাছাড়া কারা কর্মকর্তা ও কারা পরিদর্শকের মাধ্যমে কারা অভ্যন্তরে পরিদর্শনকালে মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, বিজিবি ও বিএসএফ'র মধ্যে বিরাজমান সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে গত এক বছরে সীমান্ত হত্যার ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এরপরও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটলে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফ'র কাছে লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠানো ও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়। একইসঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে