মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

২৯ দিনের বইমেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
২৯ দিনের বইমেলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

বছর ঘুরে দরজায় কড়া নাড়ছে অমর একুশে বইমেলা। আর কয়েক দিন পরেই পর্দা উঠবে প্রাণের এ উৎসবের। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এবার বইমেলার সব কাজ নিজ দায়িত্বে করছে বাংলা একাডেমি। ইতোমধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রকাশকদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার ছয় শতাধিক প্রকাশককে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশকরা জানান, ২৩ জানুয়ারি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই স্টল-প্যাভিলিয়নের কাজে লেগে পড়েছেন প্রকাশকরা। পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাজসজ্জার কাজ সারছেন তারা। ২০২৪ সাল অধিবর্ষ, তাই ফেব্রম্নয়ারিজুড়ে এই বইমেলা এবার হবে ২৯ দিনের। প্রতিবারের মতো ১ ফেব্রম্নয়ারি বিকাল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত ১৬ সাহিত্যিকের নামও ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমি। শুক্রবার বইমেলা প্রাঙ্গণের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বর ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল নির্মাণের শ্রমিকরা। এছাড়া কোন জায়গায় কোন ব্যানার, সাইনবোর্ড, নামফলক বসবে, কতগুলো তাক হবে, কতটুকু দূরত্ব হবে- কাঠমিস্ত্রিদের সেসব নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রকাশকরা। তবে গত বছরগুলোর চেয়ে এবার বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। এর মূল কারণ হিসেবে মেট্রোরেল চালু হওয়া এবং বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে উলেস্নখ করেন তারা। স্টলের নির্মাণকাজ তদারক করছিলেন গ্রন্থরাজ্য প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী রাজিব দত্ত। তিনি বলেন, 'এবার আরও বেশি বই বিক্রি হবে। বইমেলা মানেই পাঠকদের একটা চাওয়া থাকে যে পাঠক আসবেন, বিক্রি বাড়বে। আমাদের দেশে ক্রমেই পাঠক বাড়ছে। যার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি অনলাইন ও অফলাইনে বই কেনার হার দেখে।' এবারের মেলায় বেশি বই বিক্রির আশা রেখে তিনি বলেন, 'আমাদের স্টলের কাজ চলছে, আশা করছি আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। বুধবার বই উঠিয়ে পুরো স্টল সাজিয়ে ফেলতে পারব। বইমেলা নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা বরাবরই বেশি।' উচ্ছ্বাস প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ মুনির বলেন, 'যে কোনোবারের চেয়ে এবারের বইমেলা আরও বেশি জমজমাট হবে, পাঠক ও দর্শনার্থী আরও বাড়বে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ আসবেন। কারণ মেট্রোরেলের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত। তাই খুব সহজে কম সময়ে পাঠকরা মেলায় আসতে পারবেন।' বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা, প্রাণের উৎসব। এবারের মেলা নিয়ে আমার প্রত্যাশা হলো, বইমেলা জ্ঞান বিতরণের মেলা, আর পাঠকের আগ্রহও বাড়ছে। তাছাড়া এবারের মেট্রোরেলের কারণেও পাঠক সমাগম বাড়বে। তাই এবারের বইমেলা গত যে কোনোবারের চেয়ে জমজমাট হবে। বলছিলেন শিরীন পাবলিশার্সের মালিক মামুন খান ইউসুফ জাই। এবার নিয়ে দুবার বইমেলায় অংশ নিচ্ছি- এমন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে চিলেকোঠা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ইসরাত জাহান বলেন, 'বাংলা একাডেমির নির্দেশনা ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের স্টলের কাজ শেষ করতে হবে। আমরা ঠিক সময়েই কাজ শেষ করব। আশা করছি এবারের বইমেলা অনেক ভালো হবে।' প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলার মূল মঞ্চ হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মূল মঞ্চে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাসব্যাপী সেমিনার। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন। গত বছরের মতো এবারও বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও 'লেখক বলছি' মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। আর রমনা কালী মন্দিরের পাশে থাকছে 'শিশু চত্বর'। বইমেলার স্টল বিন্যাস গতবারের মতোই থাকছে জানিয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭৫ শতাংশের মতো প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের ২০ তারিখ সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চালু হয়েছে মতিঝিল উত্তরা মেট্রোরেল। আর বইমেলা প্রাঙ্গণের কাছেই মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন। এ কারণে এবার বইমেলায় আসা-যাওয়ায় সুবিধা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, 'এবার মেট্রোরেল থাকায় অনেকে মেলায় আসবেন। উত্তরা থেকে যারা যানজটের চিন্তা করে মেলায় আসতেন না, তারাও এবার আসবেন। ফলে মেট্রোরেল বইমেলায় নতুন সংযোজন, এটা বলা যায়।' বাতিঘরের দীপঙ্কর দাশও বলেন, 'মেট্রোরেল এবার বইমেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটা নতুন সংযোজন হয়েছে। উত্তরা, মিরপুর থেকেও অনেকে খুব সহজে মেলায় আসতে পারবেন। মেট্রোরেলে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নামলেই তো বইমেলা। ফলে এবার মানুষের প্রাণে প্রাণ মেলাবার মতো একটা মেলা হবে বলেই প্রত্যাশা করি।' এদিকে মেট্রোরেল সূত্রে জানা যায়, দিন-রাত চালু হওয়ার পর থেকে মেট্রোরেলে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রেলে আরও বগি সংযোজনের কথা ভাবছে। বইমেলার আগেই এটি সম্ভব হবে পারে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে