মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
নৌ ও রেলপথে চাপ বাড়লেও সড়কে নেই যানজট

নির্বিঘ্নে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
আপনজনদের সঙ্গে ঈদ পালন শেষে রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ। ছবিটি সোমবার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। জীবন-জীবিকার তাগিদে কর্মজীবীরা সোমবার থেকে রাজধানী ঢাকায় নির্বিঘ্নে ফেরা শুরু করেছে। নৌ ও রেলপথে চাপ থাকলেও সড়ক পথে নেই তেমন কোনো যানজট। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আমাদের কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, প্রথম কর্মদিবস সোমবার দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চযোগে আসা মানুষের চাপ গত দুই দিনের চেয়ে বেড়েছে। সে হিসেবে রাজধানীতে ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এদিন রাজধানীর সদরঘাট ঘুরে এবং বাংলাদেশ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, ৮টা পর্যন্ত সদরঘাটে ৭৮টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় এসেছে। ঘরে ফেরা মানুষের চাপ সামলাতে প্রায় সব লঞ্চ যাত্রী রেখে আবার যাত্রী আনতে দ্রম্নত টার্মিনাল ত্যাগ করেছেন।

বিআইডবিস্নউটিএ সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৪০টি নৌরুটে সরাসরি দিন ও রাত্রিকালীন সার্ভিস মিলিয়ে শতাধিক লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল-ঝালকাঠি-পটুয়াখালী-বরগুনা-ভোলা রুটে সরাসরি যাতায়াত করছে। তবে বিশেষ লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে চলাচল করে। সাধারণ সময়ে লঞ্চগুলো বাই রোটেশন তালিকা অনুসারে চলাচল করে বলে জানা গেছে।

সুন্দরবন-১০ সুপারভাইজার হাশেম খান জানান, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়ছে।

তিনি বলেন, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৭৮টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। যেখানে রোববার একই সময় ৯১টি লঞ্চ রাজধানীতে এসেছিল। সোমবার সকালে আসা প্রায় সব লঞ্চ ঢাকায় যাত্রী রেখে দ্রম্নত টার্মিনাল ত্যাগ করেছে।

ভোলা থেকে আসা যাত্রী সুজন মাতবর বলেন, আমরা লঞ্চের নিয়মিত যাত্রী। ঈদ উপলক্ষে অফিস ছুটি শেষে ঢাকা ফিরছি। পরিচিত হওয়ায় কেবিন বুকিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিপন উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি বরিশালে গিয়েছিলাম। আজ (সোমবার) ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ থাকলেও তা খুব বেশি নয়। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে লঞ্চের যাত্রী কমেছে। তারপরও অতিরিক্ত চাপ থাকায় আমাদের সকাল সাড়ে ৫টায় টার্মিনালে রেখে লঞ্চটি আবার বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।

এমডি ফারহান-৮ লঞ্চে পিরোজপুরে থেকে ঢাকা আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফাহাদ শিকদার। তিনি বলেন, ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময়মতো লঞ্চ ঢাকা পৌঁছে। অন্যদিকে যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চে উঠতে পারেননি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্ণফুলী-১১ লঞ্চের চালক আবু হাসান বলেন, এবারের ঈদে আজকেই (সোমবার) ঢাকা ফেরার সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনো দেখছি না।

লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। ছুটি শেষ সময়ে একটু ভিড় বাড়বেই। তবে সেটা আশানুরূপ নয়। অন্যবার এ সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে রোটেশন ভেঙে দিয়ে স্পেশাল লঞ্চ চলাচল করত। আর এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিডিউল লঞ্চই যাত্রী বোঝাই হচ্ছে না। আশা করছি শেষ পর্যন্ত যাত্রীর চাপ আরেকটু বাড়বে।

বিআইডবিস্নউটিএর বাদিং সারেং আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, গত দুদিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ সোমবার কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ কাজের টানে ফিরে আসবে।

বিআইডবিস্নউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডবিস্নউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। টার্মিনালে যাত্রী উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও যাত্রী হয়রানি বরদাশত করা হবে না।

নৌ-পুলিশ সদরঘাট থানার পরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক হকারমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশির্ যাব সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন।

এদিকে, রেলপথে অনেকটা নির্ঝঞ্জাট এবং স্বস্তির সঙ্গেই ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। তবে যাত্রীদের চাপ একটু বেশি রয়েছে। সোমবার সরেজমিন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে শিডিউল অনুযায়ী একের পর এক ট্রেন এসে পস্নাটফর্মে পৌঁছাচ্ছে। এসব ট্রেনে আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার পর ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। পরিবার-পরিজন কিংবা অনেকে একাই ব্যাগপত্র নিয়ে পস্ন্যাটফর্ম থেকে বের হতে হাঁটছেন। এসব যাত্রীর মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী। অফিস-আদালত খোলা হাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকা ফিরতে হয়েছে তাদের। তবে স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও দেরিতে খুলবে বিধায় অনেকেই পরিবার-পরিজন গ্রামের বাড়িতেই রেখে এসেছেন।

বেলা সাড়ে এগারোটায় কমলাপুরে এসে পৌঁছায় সিরাজগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি।

এমএ মমিন নামে ওই ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, কিছুটা সময় বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া আর অন্য কোনো সমস্যা হয়নি। সিরাজগঞ্জ থেকে সকাল ছয়টায় এই ট্রেনটি ছেড়েছে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে কমলাপুর এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও সাড়ে এগারোটায় এখানে পৌঁছাতে হয়েছে। তবে ট্রেনের ভেতরে তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। টিকিট অনুযায়ী যার যার সিটে বসেই আসতে পেরেছি। আস্তে আস্তে মানুষের চাপ বাড়বে।

রবিউল হুসাইন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমি একাই ঢাকা ফিরেছি। বাচ্চাদের স্কুল আরও কয়েকদিন পর খোলা। তাই তাদের গ্রামের বাড়িতেই রেখে এসেছি। আরও কয়েকদিন সেখানেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। সামনের সপ্তাহে আমি গিয়ে আবার তাদের নিয়ে আসব।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা তূর্ণা এক্সপ্রেসের যাত্রী হাসিনা বেগম বলেন, লেট হয়েছে কিন্তু তেমন ভোগান্তি হয়নি। তাড়াতাড়ি ঢাকায় ফিরেছি যেন স্বস্তির সঙ্গে আসা যায়। ট্রেন পরিচালনায় সময়ের দিকে যদি কর্তৃপক্ষ নজর দেয় তবে খুব ভালো হয়।

পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় ট্রেনে উঠতে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছিল কিন্তু আসার সময় তেমনটি হয়নি। আবার আসার টিকিট কাটতেও তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়নি।

অবশ্য দুটি ট্রেন ছাড়া প্রায় সব ট্রেনই যথাসময় কমলাপুরে এসে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, একতা ও বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সময় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বাকি সব ট্রেনই যথাসময় এসে পৌঁছেছে।

লঞ্চ ও ট্রেনের পাশাপাশি বাসে করেও ঢাকায় ফিরছেন অনেকে। বাসে ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা বলছেন, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। যাওয়ার সময় কষ্ট হলেও ফিরতি যাত্রায় স্বস্তিতে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন। কোথাও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বিশেষ করে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় বাসযাত্রীরা নির্বিঘ্নে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে পেরেছেন।

এদিন সকালে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে তুলনামূলক কম ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস থেকে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে নামতে দেখা গেছে।

নওগাঁ থেকে আসা গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় যাত্রী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো যানজট নেই। তাই খুব কম সময় ঢাকায় চলে এসেছি। সোমবার থেকে অফিস খোলা তাই তড়িঘড়ি করে ঢাকায় আসা। ছেলেমেয়েকে বাড়ি রেখে এসেছি। তারা কয়দিন পর ঢাকায় আসবে।

আমাদের শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় সোমবার কর্মস্থলে ঢাকায় ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা-যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন তারা।

সোমবার পাটুরিয়া ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কর্মজীবী হাজার হাজার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে লঞ্চ ও ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পাড়ি দিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন। আবার অনেকে যাত্রীদের ভিড়ের কারণে বাসে উঠতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘটেই বসে আছেন।

আরিচা অফিসের বিআইডবিস্নউটিসির ডিজিএম খালেদ নেওয়াজ জানান, রোববার যাত্রীদের চাপ তেমন দেখা না গেলেও সোমবার সকাল থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের পাটুরিয়া ঘাটে উপচে পড়া ভিড় ছিল। এ নৌ-রুটে ১৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী, প্রাইভেটকার ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।

শিবালয় থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার জানান, সোমবার অনেকের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন। তবে মঙ্গলবার থেকে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের চাপ আরও বেশি পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে