শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১
সাবেক এক মন্ত্রী ও ৭ এমপিসহ অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২ হাজার

সাত জেলায় আ'লীগের ৮৪৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সাত জেলায় আ'লীগের ৮৪৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

সদ্য ক্ষমতাচু্যত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক এক মন্ত্রী ও ৭ সংসদ সদস্যসহ দেশের ৭ জেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৮৪৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাধা, হামলা, হত্যা ও বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের স্বজন, কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও বিএনপি নেতারা এসব মামলা দায়ের করেছেন। জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজারে দুই সংসদ সদস্যসহ আ'লীগের ১৫৫ নেতাকর্মী, হবিগঞ্জে এক সংসদ সদস্যসহ ৫৯ জন, নোয়াখালীতে এক সংসদ সদস্যসহ ৪৪ জন, কক্সবাজারের টেকনাফে এক সংসদ সদস্যসহ ৩৩ জন, বগুড়ায় দুই সংসদ সদস্যসহ ৮২ জন, নওগাঁয় আওয়ামী লীগের ৯২ নেতাকর্মী ও চাঁদপুরে সাবেক এক মন্ত্রী ও তার বড় ভাইসহ ৩৮২ জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত প্রায় ২ হাজার জনকে।

দুই এমপিসহ ১৫৫ জনের নামে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনায় সাবেক দুইজন সংসদ সদস্যসহ আ'লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১৫৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে আরও ২০০ জনকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল। বুধবার রাতে মৌলভীবাজার মডেল থানায় বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক আব্দুল কাদির তালুকদার।

মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে জেলা আ'লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ জিলস্নুর রহমান, পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন, কাউন্সিলর জালাল আহমদ, জেলা আ'লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাধাপদ দেব সজল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সেলিম হক, শেখ রুমেল আহমদ, একাটুনা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট গৌছ উদ্দিন নিক্সনসহ ১৫৫ জন আ'লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীকে। মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের চৌমোহনা, আদালত সড়ক, এম সাইফুর রহমান সড়ক, শমশেরনগর সড়ক ও চাঁদনীঘাট এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর হামলা চালান অভিযুক্তরা। এ সময় তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অনেকেই হতাহত হন।

সমন্বয়ক আব্দুল কাদির তালুকদার জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৪ আগস্ট জেলা সদরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করে। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিলস্নুর রহমানের নির্দেশে আ'লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ের হামলা চালিয়ে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের দলবেঁধে পিটিয়ে সড়কে ফেলে রাখা হয়।

মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'

এক এমপিসহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে রিপন শীল (২৭) নিহতের ঘটনায় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও এই মামলায় হবিগঞ্জ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহিসহ ৫৯ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত রাখা হয়েছে ১৫০/২০০ জনকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত রিপন শীলের মা রুবি শীল বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট রোববার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ শহরের বৃন্দাবন কলেজ রোড প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সেখানে জড়ো হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেয় বিএনপি ছাত্রদল ও যুবদলসহ সাধারণ জনতা। মিছিলসহকারে তারা শহরের প্রধান সড়কে দিয়ে আসতে থাকলে শহরের তিনকোনা পুকুড়পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। টানা কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় হবিগঞ্জ শহর। ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয় মোটর সাইকেলসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন রিপন শীল নামে ওই যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) নূরে আলম জানান, রিপন শীল হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাবেক

এমপি আবু জাহিরকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

এমপিসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৪ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তমরুদ্দি বাজারের শ্রমিক নুরুন নবী বাদী হয়ে ওই মামলাটি করেন। মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বাদী নুরুন নবী অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট বিকাল আনুমানিক ৪টার দিকে তিনি তমরুদ্দি বাজারের ভেতর হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর লোকজন তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। হামলাকারীরা একই দিন তমরুদ্দি বাজারের কয়েকটি দোকানে ও আশপাশের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। ঘটনার পর লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

হাতিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, নুরুন নবীর করা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারে আরও ১৩ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে এবং ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি দেখানো হয়েছে। আসামিরা সবাই সাবেক সংসদ সদস্যের অনুসারী এবং স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিসান আহমেদ। তিনি বলেন, বাদীর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে সোমবার রাতে মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের চার সদস্যসহ ১৪৩ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয় হাতিয়া থানায়।

এমপি বদিসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কক্সবাজারের টেকনাফের বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে প্রধান আসামি করে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুলস্নাহ। এতে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৭০ জনকে আসামি করা রয়েছে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি।

অভিযোগে বাদী উলেস্নখ করেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুলস্নাহর মালিকানাধীন ফিলিং স্টেশন (পেট্রোল পাম্প), আলো শপিং কমপেস্নক্স, হোটেল নাফ কুইনসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থাপনায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে ব্যাপক গুলি ও ভাঙচুরের পাশাপাশি দোকানপাট লুট করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবদুর রহমান বদি বলেন, 'ওই দিন বিকালে আবদুলস্নাহর নেতৃত্বে টেকনাফ বাস স্টেশন এলাকায় পৌরসভা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও আমার ব্যক্তিগত অফিসে হামলা হয়। এটা দিবালোকের মতো সত্য। আমার ছোট ভাই আবদুস শুক্কুরের অলিয়াবাদ এলাকার ব্যক্তিগত অফিসেও তারা ভাঙচুর চালায়। এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। আমিও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ বলেন, 'মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে। টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ট্রাক-মিনিট্রাক মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ দখলে নেওয়ার জন্য আমাকে মারধর ও অফিসে আগুন দেওয়া হয়। পরে আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে বুধবার রাতে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।'

দুই এমপিসহ ৮২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল হামলার ঘটনায় সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ (এমপি) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৮২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক রহিমা খাতুন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার বগুড়া সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় আসামি হিসেবে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক এমপি মজিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক এমপি রাগেবুল আহসানের নাম রয়েছে।

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম, এ কে এম আসাদুর রহমান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা, সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলামসহ ৮২ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলার এজাহারে উলেস্নখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালান। এ সময় কার্যালয়ের তালা ভেঙে চেয়ার-টেবিল, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউলস্নাহ বলেন, 'জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে বৃহস্পতিবার একটি মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের ৮২ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০০-২০০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।'

আ'লীগের ৯২ নেতাকর্মীর নামে মামলা

অন্যদিকে, নওগাঁয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৯২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বায়েজিদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলায় নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিম আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ (লাল), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস তুহিন রেজা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়সহ ৯২ জনের নাম উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ মাহবুব কাদের নামের ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩ আগস্ট দুপুরে নওগাঁয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আহত করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালান। কার্যালয়ের তালা ভেঙে চেয়ার-টেবিল, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক বলেন, 'ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাহবুব কাদের (ফাহিম) নামে ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত অন্য নেতাকর্মীরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'

ডা. দীপু মনিসহ ৩৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং তার বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুসহ ৩৮২ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত আরও ১২০০ জনকে দেখিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার শহরের মেথারোডের মুনিরা ভবনের ম্যানেজার পৌর ৮নং ওয়ার্ডের কোরালিয়ার সামসুল হক হাওলাদের ছেলে মো. সেলিম মিয়া (৪৫) বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, দীপু মনি, তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিলস্নুর রহমান এবং চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবীর সুমনের হুমুকের মদদে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শত শত নেতাকর্মীসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ শহরের মুনিরা ভবনে হামলা, মালামাল লুট, ভাঙচুর ও ভবনে অগ্নিসংযোগ করে।

মুনিরা ভবনের মালিক জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তখন চিকিৎসার জন্য বাইরে ছিলেন। এখন সবমিলিয়ে ওই ঘটনায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। তাই ন্যায়বিচার পেতেই থানায় মামলাটি করা হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, 'আমি কখনো কারো সঙ্গে অমানবিক আচরণ করিনি। অথচ শুধু রাজনীতির কারণে প্রতিহিংসা বসত আমার বাড়ির ওপর এই অঘটনটি দেখতে হলো। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে