সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছন্দে ফিরেছে শীত দেখা নেই সূর্যের

যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ছন্দে ফিরেছে শীত দেখা নেই সূর্যের
শীতে জবুথবু সাধারণ মানুষ -ফাইল ছবি

ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল ঠান্ডা বাতাসে বিপর্যস্ত রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। গত দুদিন ধরে অনেক জায়গায় ঠিকমতো দেখা মিলছে না সূর্যের। আর তাপমাত্রা কমেছে প্রায় তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত।

বুধবার দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ। আর বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় চার কিলোমিটার।

1

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর মঙ্গলবার তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে।

আবহাওয়াবিদদের ভাষায়, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর যদি তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আরও নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে তীব্রতর শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সে হিসেবে দিনাজপুরের তাপমাত্রা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি রয়েছে।

এমন আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গায়ে মোটা জামা কাপড় জড়িয়ে তাদের কর্মস্থলে বের হতে দেখা গেছে। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

দিনাজপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, উত্তরের হিমালয়ের সামনে জলীয় বাষ্প বলয় অবস্থান করায় ঠান্ডা বাতাস ছিল না। বর্তমানে জলীয় বাষ্প বলয় অপসারিত হয়ে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। ফলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এই আবহাওয়া আগামী দু-একদিন থাকতে পারে। তাপমাত্রা আরও কমে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

তবে ৩ তারিখের পরে আবারও জলীয় বাষ্প বলয় হিমালয়ের সামনে অবস্থান করলে বাতাসের গতিবেগ কমে গিয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, নতুন বছরের শুরু থেকে আবারও শীত জেঁকে বসতে পারে। সেইসঙ্গে বাড়তে পারে কুয়াশা। উত্তরাঞ্চল ছাড়া দেশের বাকি এলাকায় কমতে পারে তাপমাত্রা। দেশের কয়েকটি এলাকায় বুধবার থেকে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। আগামী দুুতিন দিন শৈত্যপ্রবাহের এলাকা বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটা বলা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ডিসেম্বর শীত যতটা পড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি। মাসের শেষের দিকে সারা দেশে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বিদায় নেয় শৈত্যপ্রবাহ। এর কারণ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক লঘুচাপের কথা বলেন আবহাওয়াবিদেরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক মঙ্গলবার সন্ধ্য বলেন, ডিসেম্বর মাসে অন্তত তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও এতে টানা শীত পড়েনি। তবে মাসের একেবারে শেষের দিকে এসে আবার তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। দেশের কয়েকটি এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে শুরু করবে কুয়াশাও।

মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল সারা দেশের সর্বনিম্ন।

সোমবার সন্ধ্যার পর থেকেই হিমালয়ের কোলঘেঁষা এই জনপদে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। রাতভর ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঝরতে থাকে কুয়াশা। মঙ্গলবার ভোরে বেড়ে যায় সেই কুয়াশার দাপট। এতে বেলা বাড়লেও দেখা যায়নি সূর্য। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিলেও রোদের তীব্রতা ছড়াতে না পারায় শীত অনুভূত হয়।

এঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড় শহরে আসা ভ্যানচালক জয়নাল হক (৪৫) বলেন, 'আইজকা ঠান্ডাখান (শীত) খুপে বেশি নাগেছে। সকালে কুয়াশাতে কিচ্ছু দেখা যায় না। ভ্যান চালাইলে ঠান্ডাতে হাত-পাও অবশ হয় যাছে।'

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশা পড়বে। দেশের উত্তরের জনপদে এর পরিমাণ বেশি হবে। এতে তাপমাত্রা খানিকটা কমে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।

আগামী শুক্র বা শনিবার বঙ্গোপসাগরে আরেকটি লঘুচাপের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অফিস। এতে শীতের অনুভূতি কমে যেতে পারে, বলেন আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে