বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জনগণের প্রত্যাশা ১৯৯১ সালের মতো নির্বাচন জয়নুল আবদিন ফারুক

বর্তমান সময়ে দেশের আলোচিত বিষয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের দাম ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন। এই ৩টি বিষয় নিয়ে যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জনগণের প্রত্যাশা ১৯৯১ সালের মতো নির্বাচন জয়নুল আবদিন ফারুক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন যায়যায়দিনের প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন -যাযাদি

ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ২০২৪ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নানা সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। এ সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার অভিযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। এই খুনি আসামিকে ভারত ফিরতে দিচ্ছে না। এতে প্রমাণিত হয়, ভারত কখনোই এ দেশকে বন্ধত্বের দৃষ্টিতে দেখেনি। ভারতের উচিত বাংলাদেশ সরকারের কাছে দ্রম্নত খুনি হাসিনাকে হস্তান্তর করা। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার থেকে কখনো সরে যাননি। আন্তর্জাতিক বিশ্বসহ সব মহলে এখন বিএনপির গুরুত্ব বাড়ছে।

তারেক রহমান প্রসঙ্গে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ৫ আগস্টের পর যেসব নেতাকর্মীরা অপকর্ম করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া আগামীতে কেউ যেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম না করতে পারে সে জন্যে তার পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বের কারণে বিএনপি একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্তর্জাতিভাবে প্রশংসা পাচ্ছেন।

1

যায়যায়দিন : শুরুতে আপনার কাছে জানতে চাই, চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব হবে কিনা- হলেও আপনি এবং আপনার দল কি ভাবছে?

জয়নুল আবদিন ফারুক : নিবার্চন ব্যবস্থাকে সর্ম্পূণ ধ্বংস করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। একটি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে এরশাদও গণতন্ত্রকে গলা চেপে হত্যা করেছিল। ১০ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করে বেগম জিয়া রাজপথে থেকে জনগণকে সম্পৃক্ত করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের অঙ্গীকার আদায়ের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অনেকে বলে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন করেই এরশাদের পতন হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু মাঝেমধ্যে আওয়ামী লীগের বেঈমানীর কারণে এরশাদ অনেক দিন টিকে গেছে। যদি হাসিনা সেই সময় নির্বাচনে না যেতেন- তাহলে এরশাদ বিদায় হতো। এজন্য আমি মনে করি, বেগম জিয়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আরেক নতুন আবির্ভূত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে শেষ পর্যন্ত এই বয়সে জেলখানায় যেতে হয়েছে। একটি অসত্য, বানোয়াট মামলায় শেখ হাসিনার নির্দেশে বেগম জিয়াকে সাজা দিয়ে কষ্টে জর্জরিত করেছে। বেগম জিয়ার জীবন বিপন্নের পথে এখন। এ কারণে বেগম জিয়া বিদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এত নির্যাতনের পর বেগম খালেদা জিয়া জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার থেকে কখনো সরে যাননি। এজন্য আমরা মনে করি, জাতীয়তাবাদী শক্তি বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রামের সূত্র ধরে জুলাই-আগস্টে বিপস্নবী ছাত্র-জনতা সমর্থন দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করেছে। তাই এ সরকারের কাছে দাবি, জনগণের প্রত্যাশা ১৯৯১ সালের মতো আরও একটি নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাই নির্বাচন নিয়ে এ সরকারে কাছে আমাদের আশা, তড়িৎ গতিতে যত দ্রম্নত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া। কারণ যতই দেরিই হবে ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে। সময় দিনক্ষণ নির্ধারণ করে নির্বাচন হয় না এবং নির্বাচনের তারিখের দাবি করেও নির্বাচন হয় না। এটা নির্ভর করবে এ সরকারের আন্তরিকতার ওপর।

যায়যায়দিন : অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

জয়নুল আবদিন ফারুক : গত পাঁচ-ছয় মাসের এ সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ। দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাট চাপিয়ে দিচ্ছে, কর চাপিয়ে দিচ্ছে। এটা তো সরকারের দায়িত্ব না। জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের ওপর কর নির্ধারণ করবে। তারাই ঠিক করবে ভ্যাট কোথায় আরোপ করবে। এছাড়া নানা কারণে এ সরকারের ওপর জনগণ খুশি হতে পারে নাই।

যায়যায়দিন : প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন এবং কি ধরনের সর্ম্পক দেখতে চান?

জয়নুল আবদিন ফারুক : ভারতের সঙ্গে কখনোই ভালো সর্ম্পক দেখতে চাই না। কারণ অতীতে রাষ্ট্রপ্রধান শহীদ জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছেন, বেগম জিয়ার শাসনামলেও চেষ্টা হয়েছে, এমনকি আমরা চেষ্টা করেছি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে হিন্দুস্থানের ওপর ভর করে তার সরকার চালানো তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ভারত এদেশে মার্কেট করতে চায়, আমাদের নায্যমূল্য দিতে চায় না। গত ১৬ বছর হিন্দুস্থানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ কখনো এদেশের ভালো চায় না। একজন খুনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের শক্রতা নেই, বন্ধুত্ব চাই। ভারতের উচিত খুনি এ আসামিকে ফেরৎ দেওয়া। আর বিভিন্ন সময় আমাদের দাবিগুলো; গঙ্গার পানি, তিস্তার সমস্যা সমাধান, ভিসা নীতি, বর্ডারের সমস্যা দ্রম্নত নিষ্পত্তি প্রয়োজন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরাও বন্ধুত্ব ঠিক রেখে আমাদের নায্য প্রাপ্য আদায়ের চেষ্টা করব।

যায়যায়দিন : গত ৫ আগস্টের পর অনেক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে কি ধরনের দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

জয়নুল আবদিন ফারুক : ২০২৪ সালে বিএনপি যখন নির্বাচনে যায় নাই, কিন্তু আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচন করে ফেলেছে। সে সময় আওয়ামী লীগ নমিনেশন ও এমপি বাণিজ্য করেছে। যাকে নমিনেশন দিবে সেই নির্বাচিত হবে। কিন্তু আমার নেতা তারেক রহমান দেশের জনগণ ও দলের প্রতি অনুগত। তার প্রমাণ মিলেছে ৫ আগস্ট। গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি বিবৃতি দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের যারা অত্যাচার করেছে, তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে এবং কারো ওপর হাত তোলা যাবে না। দেশের কিছু স্থানে বিএনপি নেতাদের জন্য কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটানো হচ্ছে। তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তারেক রহমানের নেতৃত্বের কারণে বিএনপি একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্তর্জাতিভাবে প্রশংসা পাচ্ছেন।

যায়যায়দিন : সময় দেওয়ার জন্য যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

জয়নুল আবদিন ফারুক : আপনাকে এবং যায়যায়দিনের সব পাঠককে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে