মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মানবিক উদ্যোগ

বন্দিদের পুনর্বাসন ও উন্নত জীবনের পথে নতুন দিগন্ত

জাহাঙ্গীর আলম
  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বন্দিদের পুনর্বাসন ও উন্নত জীবনের পথে নতুন দিগন্ত
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সহায়ক ইতিবাচক কার্যক্রমে তাদের পুরস্কৃত করছেন সিনিয়র জেল সুপার সোরায়া আক্তার -যাযাদি

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন ইতিবাচক কার্যক্রম সম্পাদন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। বন্দিদের বিনোদন ও শরীরচর্চার জন্য ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা এবং জিমনেসিয়ামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক হাজার সমৃদ্ধ বই নিয়ে একটি লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে, যাতে বন্দীরা অবসর সময়ে বই পড়তে পারেন।

বন্দিদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছে। এর ফলে বন্দিরা এখন জামদানি, বেনারসি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, জুতো এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে পারছেন। এসব পণ্য বিক্রির ৫০ শতাংশ লাভ বন্দীরা পান, যা তারা পরিবারের কাছে পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দিদের পুনর্বাসনের জন্য একটি বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ২ হাজার ৫৫০ জন মাদকাসক্ত বন্দীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাদের মাদকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে এবং ধর্মীয় ও নৈতিক দিকনির্দেশনা দিতে মোটিভেশনাল বক্তব্যের আয়োজন করা হয়। কর্মচারীদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সোরায়া আক্তার বলেন, 'কারাগারের বন্দী ও কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন এবং বন্দীরা যাতে কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা বিভিন্ন আয়োজন করছি।'

তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বন্দীদের ন্যায্য প্রাপ্যতা এবং খাবারের গুণগত মান শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্যান্টিনে ন্যায্য মূল্যও নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, বন্দীদের সঙ্গে যারা দেখা করতে আসেন তাদের হয়রানি বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সোরায়া আক্তার বলেন, 'আমরা নিয়মিত স্টাফ দরবার আয়োজন করি এবং স্টাফদের অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য বন্দীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের দক্ষ, কর্মক্ষম ও নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।'

সম্প্রতি দুই জন বন্দী যথাযথ আইন-কানুন অনুসরণ করে কারাগার থেকে বের হয়ে বলেন, 'আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাসখানেক ছিলাম। এক মাসের মধ্যে আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে কারাগারে বন্দীদের স্বাস্থ্যসম্মত এবং পরিমাণমতো খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া, কারাগারের ক্যান্টিনে বিভিন্ন দ্রব্যের দামও স্বাভাবিক ছিল।'

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, 'আমরা বন্দীদের নিয়ে কাজ করি। বন্দীরা কারাগার থেকে বের হয়ে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে এবং আয় করার সুযোগ পায়, তার জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, তাদের জন্য সহায়ক বিভিন্ন কার্যক্রম করা হচ্ছে।'

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের জেলার এ কে এম মাসুম বলেন, 'বন্দীদের কর্মক্ষম ও পুনর্বাসনের জন্য আমরা নিজস্ব উদ্যোগে সমস্ত প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছি। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করেনি। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন ধর্মীয় শিক্ষক আমাদের কারাগারে কর্মরত আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক কারাগারের বিভিন্ন ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এবং পরিদর্শনে আসেন। তিনি আমাদের যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।'

জেলার বলেন, 'আমাদের কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন, কিন্তু বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮১৬ জন। অতিরিক্ত বন্দীদের নিয়ন্ত্রণ বা থাকার জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, কারণ বন্দীদের বিছানা মোটামুটি বড়, এক সিটে দুই জন বন্দী থাকতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে