বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ, ত্যাগী নেতাদের

ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতারা!

ফরিদপুর প্রতিনিধি
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতারা!

ফরিদপুরে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, মানুষের জায়গা-জমি দখল ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের জানমালের ওপর হামলা-ভাংচুর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, বিরোধী বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন খন্দকার নাসির।

1

অভিযোগে আরো বলা হয়, অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত করছেন তিন। বিগত সময়ে হামলা-মামলা সহ্য করা দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে তিনি

তাদের হুমকি-ধামকি এবং অপবাদ দিচ্ছেন। একইসাথে আওয়ামী লীগের পদধারী একাধিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে ইতোমধ্যে বিএনপিতে যোগদানের করিয়েছেন। তিনি আ'লীগ নেতাদের পাশে বসিয়ে বিভিন্ন সভাসমাবেশ করছেন। এতে দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অতীতেও একাধিকবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তিনি বহিস্কার হয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের ৪০ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতার সইসহ লিখিত আবেদন দেন বোয়ালমারী উপজেলার সন্তান ও অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সহসভাপতি ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ। খন্দকার নাসিরুলের বিরুদ্ধে একই অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ২ নভেম্বর প্রথম দফা অভিযোগ করলেও বিএনপির কেন্দ্রীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ইতোমধ্যে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনে প্রচার-প্রচারণা ও সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। এ আসের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নাসির স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক চেয়ারম্যান ও পদধারী নেতাদের বিএনপিতে ঢুকিয়ে নিজের মাঠ গোছাচ্ছেন।

একাধিক বিএনপির নেতা জানিয়েছেন, মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির মিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল হাসান টিপু গত বছরের ১৯ অক্টোবর মধুখালীর একটি নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে খন্দকার নাসিরুলের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর বোয়ালমারীতে খন্দকার নাসিরের জনসভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাওলা বিশ্বাস মঞ্চে ছিলেন। খন্দকার নাসিরের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা ও মেগচামী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবির উদ্দীন শেখ এবং সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোনা মিয়া। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হিরু মুন্সি গত ডিসেম্বরে খন্দকার নাসিরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি নেতা সৈয়দ টুটুল এর বিরোধিতা করলে গত ১৬ আগস্ট খন্দকার নাসিরের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে কুপিয়ে জখম করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামের খন্দকার নাসিরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতির পাশাপাশি ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য। তবে তিনি ৮০ দশকের শেষের দিকে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করেন। ৯৪ সালের শেষে জাতীয় পার্টির ছেড়ে জাসদে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে পথচলা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচনে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ফরিদপুর ১ আসনের নির্বাচনে জয়ী হন। যদিও সে সরকারের মেয়াদ ছিল ১৩ দিন।

কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিকের বাড়ি ভাঙচুর ও জীবননাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে ১৩ নভেম্বর বুধবার রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক খন্দকার আব্দুলস্নাহ ওরফে তুষার বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উলেস্নখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম রসূল।

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির নেতা সৈয়দ টুটুল বলেন, 'আমি বোয়ালমালী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন ঝুনু ভাইয়ের সমর্থনে বিএনপির রাজনীতিতে সাংগঠনিক কাজ করি। এজন্য খন্দকার নাছির তার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত ১৬ আগস্ট আমাকে কুপিয়ে জখম করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। তখন খন্দকার নাসির ঢাকায় ছিলেন। স্থানীয় বিএনপির কারো সাথে তার যোগাযোগ নাই। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে তিনি রাজনীতিতে উদয় হন।'

বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সামছুদ্দিন ঝুনু বলেন, 'তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে দল গঠন এবং চাঁদাবাজির মতো অভিযোগ রয়েছে যা দলের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনবে।'

লিখিত অভিযোগকারী ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সারাদেশ ফ্যাসিবাদের মুক্ত হলেও ফারিদপুর-১ এ ফ্যাসিবাদ আরো শক্তিশালী হয়েছে খন্দকার নাসিরের হাত ধরে। খন্দকার নাসির অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে বিএনপিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে চাঁদাবাজিসহ সরকারি বিলের মাছ দখল, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু কেটে বিক্রি, জমি দখল, দোকান থেকে উচ্ছেদ, নির্যাতনসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।'

অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় কৃষক দল সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'গত ১৯ অক্টোবর নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানে জাকির চেয়ারম্যান ও টিপু চেয়ারম্যান আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, সেখানে বিএনপিতে যোগদান করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা শুধু শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই আসনের কোনো উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদান করার ঘটনা ঘটেনি। যারা এই অভিযোগ দিয়েছেন তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই অভিযোগ দিয়েছেন।'

জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, 'দলীয় হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা যে- বিএনপির দলে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দলেরই কোন কর্মী বা নেতাকে যোগদান করানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি কেউ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে দল।'

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল সাংবাদিকদের বলেন, 'তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি। স্থানীয়ভাবেও কিছু অভিযোগ শুনেছি। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড দলের শৃঙ্খলা সম্পর্কে খুবই কঠোর। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবো। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের পক্ষ থেকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে