যেখানে ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট দিয়ে খেলোয়াড়রা নাম ও খ্যাতি অর্জন করতে চান, সেখানে আবু জায়েদ রাহি প্রতিষ্ঠিত হতে চান টেস্ট ক্রিকেটে। ক্রিকেটের অন্যান্য ফরম্যাটের চেয়ে টেস্টেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য রাহির। বল হাতে দুদিকে সুইং করতে পারদর্শী রাহি বাংলাদেশের 'জেমস এন্ডারসন' হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের মতো স্পিন সংখ্যাধিক্য দলেও প্রধান টেস্ট বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাহি।
রাহি বলেন, আমি এখন টেস্ট ক্রিকেটের দিকে বেশি মনোনিবেশ করছি। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট এখন আমার মনের মধ্যে নেই। তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রথমে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই এবং পরবর্তীতে ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে মনোনিবেশ করব। আমি বিশ্বাস করি, আমি যদি টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করতে পারি, তবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে আমার পক্ষে পারফরম্যান্স করা সহজ হবে।'
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মাধ্যমে খ্যাতির তকমা পান রাহি। যে সময় টিম ম্যানেজমেন্ট টেস্টে ক্রিকেটের জন্য ভালো পেসার বোলারের সন্ধানে ছিল, সে সময় বুদ্ধিদীপ্ত ও বৈচিত্র্যময় বোলিং দিয়ে রাহি প্রথম পছন্দের তালিকায় নিয়ে আসে।
রাহির আগমন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। তাই স্পিননির্ভর কৌশল পাল্টে সম্প্রতি দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে পেস দিয়ে পরিকল্পনা সাজায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন পর্যন্ত ৯ টেস্টে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন রাহি। যদিও এখনো ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের নজির গড়তে পারেননি। কিন্তু তার ধারাবাহিকতা ও বৈচিত্র্য আভাস দিয়েছে, সেটি খুব বেশি দূরে নয়। করোনা মহামারির কারণে ক্রিকেটে ছেদ না ঘটলে হয়তো ইতোমধ্যেই রাহির পাঁচ উইকেট শিকারের স্বপ্ন পূরণ হতো। এ বছর বাংলাদেশের বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচ ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তা থমকে গেছে। যা রাহির জন্য খুবই হতাশার। কারণ বোলিং গড়ে উন্নতি করার লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তিনি। এখন তার বোলিং গড় ৩২ দশমিক ৪৫।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এই গড় খুবই ভালো। কিন্তু রাহি, এতে খুশি নন। সে অনেক দূর যেতে চাইছে। রাহি বলেন, 'এটি খুবই হতাশার। এ বছর বেশ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের থামিয়ে দিয়েছে। আমি জানি না, মহামারি শেষে বিশ্বে কি ঘটবে কিন্তু আমি আশাবাদী, একই পারফরম্যান্স নিয়ে আমি ফিরতে পারব।'
গেল দু বছরে নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্টে বোলারদের পারফরমেন্স খারাপ হলেও, উজ্জ্বল ছিলেন সিলেটের এই পেসার। অন্য বোলাররা যেখানে ব্যর্থ হন, তখন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখিয়েছেন রাহি। এমনকি হোম কন্ডিশনে পেসারদের জন্য সহায়ক না হওয়ার পরও ভালো পারফরমেন্স করেছেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে টানা পাঁচ টেস্ট খেলার নজির দেখিয়েছেন রাহি। দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে লড়াই করতে না পারাটা হতাশার ছিল। কিন্তু রাহি, ব্যাটসম্যানদের অফ-স্ট্যাম্পে খেলতে বাধ্য করেন এবং ভালো আউটসুইং পেয়েছিলেন। তার বোলিং দ্রম্নত গতির নয়, কিন্তু ভালো করার তাগাদা থেকে এন্ডারসনের মতো উপযোগী টেস্ট বোলার হয়ে উঠছেন তিনি। রাহি বলেন, 'আমার প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, 'আমি এন্ডারসনের মতো এবং আমি আরও অনেকবার শুনেছি, আরও ভালো করা যেত, যদি আমি ইংল্যান্ডে জন্ম নিতাম।'
বোলিং কোচ ওটিস গিবসন, রাহির বোলিং স্টাইল পরিবর্তন না করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি শুধু আমাকে একবার বলেছিলেন, ইনসুইং ডেলিভারির সংখ্যা কমাতে হবে। কিন্তু আমি যা করতে চেয়েছিলাম, সে আমাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন এবং কখনো কখনো সমস্যার সমাধান করেছেন।'
Copyright JaiJaiDin ©2021
Design and developed by Orangebd