শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগ করছেন সাফজয়ী নারী দলের কোচ ছোটন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০
গোলাম রব্বানী ছোটন সিরাত জাহান স্বপ্না

শুক্রবার হঠাৎ বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন সাফজয়ী সদস্য সিরাত জাহান স্বপ্না। ব্যক্তিগত কারণ বলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে খেলার বাইরে থাকায় অবসাদ ও বিরক্তি থেকে ফুটবল ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। মাত্র ২২ বছর বয়সেই ফুটবলকে বিদায় জানালেন জাতীয় দলের অন্যতম এই স্ট্রাইকার। শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে ফুটবল থেকে অবসরের কথা জানিয়েছেন স্বপ্না।

স্বপ্নার অবসরের ঘোষণার পরই সাফজয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও জাতীয় দলের চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ১ জুন থেকে আর কোচের পদে থাকবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ছোটন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'অনেক তো হলো। আর নিতে পারছি না। ভোর ৪টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছি। পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজন কাউকে সময় দিতে পারছি না। ব্যক্তিগত কোনো কিছু নেই বললেই চলে। ১ জুন থেকে আর কাজ করব না। বাফুফেতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেব। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।'

বাফুফের ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো এই বিষয়ে কর্মকর্তাদের কিছু বলেননি। বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ছোটনের পদত্যাগে প্রসঙ্গে কিছুই জানেন না

বলে জানান।

ছোটন নারী দলের কোচিং করানোর আগে বাফুফের এএফসি'র বেতনভুক্ত কোচ ছিলেন। ফুটবলার হিসেবে অবসর নেওয়ার পর কোচিংই তার পেশা। এই আয় থেকেই তার পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ হয়। বিশ্রামের পর আবার কোচিংয়ে ফিরতে চান, 'আপাতত পরিকল্পনা মাস দুয়েক বিশ্রাম নেওয়ার। এরপর হয়তো কোনো ক্লাব বা কিছুতে কোচিংয়ে ফিরতে পারি।'

আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লান্তির কথা বললেও ছোটনের মনে রয়েছে অসন্তোষ ও অপ্রাপ্তি। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাফল্যের অন্যতম কারিগর গোলাম রব্বানী ছোটন। আর্থিক পারিশ্রমিকের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়েও তার অসন্তুষ্টি রয়েছে।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলে ছোটন হেড কোচ হলেও চাবিকাঠি মূলত ব্রিটিশ ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির হাতে। ছোটন অনেক পরিশ্রম করলেও লাখ খানেক সম্মানী পান। অন্যদিকে পল স্মলি পেতেন ১৫ হাজার ডলার। সেই পল কাজের পরিবেশ নেই বলে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে আরও পাঁচ হাজার ডলার বেতন বাড়িয়ে নিলেও ছোটনদের দিকে তেমন নজর নেই বাফুফের। গত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের নারী দলের প্রস্তাব ছিল ছোটনের। জাতীয় দলের চেয়ে অনেক বেশি অর্থের প্রস্তাব থাকলেও বাফুফে কর্তাদের আশ্বাসে তিনি সেখানে যোগ দেননি।

২০০৯ সাল থেকে মেয়েদের ফুটবলের কোচ হয়ে আছেন ছোটন। এই ১৪ বছরে ৮টি শিরোপা জিতেছেন। রানার্সআপ ট্রফি আছে ৫টি। গত সেপ্টেম্বরে নেপালকে হারিয়ে সাফ শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশের মেয়েরা। দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসের এই অর্জনের অন্যতম কারিগর ছিলেন দেশি কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। কিন্তু হঠাৎই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

আগামী ৩১ মের মধ্যে অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা জানিয়ে ছোটন বলেন, 'নারী ফুটবলে কোনো ভবিষ্যৎ দেখছি না। প্রতিদিনই কাজের চাপ বাড়ছে, জবাবদিহি করতে হয় প্রতিনিয়ত। আমার কোনো ব্যক্তিগত জীবন নেই, পরিবার নেই। মাঠে খেলা না থাকায় মেয়েরাও এই কারণেই ফুটবল ছাড়ছে।'

একদিকে সাফ জয়ের পর তিন নারী ফুটবলার অবসর নিয়েছেন। ছোটনের কথায় স্পষ্ট, ফুটবল নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দেশের নারী ফুটবলে। তিনি নারী ফুটবল নিয়ে শঙ্কাও দেখছেন। গত জানুয়ারিতে অবসরে যান জাতীয় দলের দুই ফুটবলার আনুচিং মগিনি ও সাজেদা খাতুন। অবসরে গেছেন বয়সভিত্তিক দলের ফুটবলারও। মাঠে নেই নিয়মিত টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নানা সময়ে নানা কথা দিলেও শেষমেশ কথা রাখেনি।

গতকাল ফেসবুকে স্বপ্না লেখেন, 'আমি নিজ ইচ্ছায় পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নিলাম। প্রায় আট বছর পেশাদার ফুটবল খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ফুটবল ক্যারিয়ারে আসার পর আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মহান আলস্নাহ তায়ালার প্রতি।'

স্বপ্না আরও লেখেন, 'খেলার সুবাদে অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। তাই জেনে বা না জেনে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, পিস্নজ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।'

স্বপ্নার হঠাৎ অবসরের বিষয়টি শুনে কিছুটা আক্ষেপ করলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'স্বপ্না অনুশীলন করে আমার কাছে ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে। তবে অনেকদিন খেলা না থাকায় সে একটু হতাশ ছিল। ওকে বুঝিয়েছি। কিন্তু খেলবে না বলল।'

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন স্বপ্না। বিপরীতে গোল করেছেন ১০টি। এছাড়া বয়সভিত্তিক দলের ৯টি ম্যাচে ৯ গোল করেছেন তিনি। বাংলাদেশ নারী প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন এ নারী ফুটবলার।

এর আগে ২০২২ সালে নেপালে সাফজয়ী দলের সদস্য ছিলেন স্বপ্না। ওই টুর্নামেন্টে চারটি গোল করে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন তিনি। যদিও ইনজুরির কারণে ফাইনাল খেলতে পারেননি রংপুরের এ ফুটবলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে